ভাইফোঁটা Bhai Dooj in bengali হিন্দুদের একটি উৎসব। এই উৎসবের পোষাকি নাম ভ্রাতৃদ্বিতীয়া অনুষ্ঠান। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চল, যেমন দার্জিলিং বা কার্শিয়াংয়ে যা ‘ভাইটিকা’ নামে পরিচিত। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী কালীপুজোর অমাতিথির ঠিক দু’দিন পর কার্তিক মাসের শুক্ল দ্বিতীয়া তিথির দিন এই উৎসব পালিত হয়। এই লোকপার্বণের অন্তঃস্থলে রয়েছে একটি পৌরাণিক গল্প। পুরাণ মতে, যম ও কন্যা যমুনা ছিল যমজ ভাই-বোন।
Bhai Dooj in bengali এই দুই ভাই ও বোনের মধ্যে ছিল গভীর স্নেহ-ভালবাসার সম্পর্ক। যম স্বয়ং মৃত্যুর দেবতা। যেখানে তিনি হলেন সকলের মরণ-বাঁচনের নির্ধারক, সেখানে তাঁর অমরত্ব কামনায় যমুনা কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমের কপালে ফোঁটা দিয়েছিলেন। সেই কৃত্যই ‘যম দ্বিতীয়া’ নামে খ্যাত। পঞ্জিকাতেও ‘যমদ্বিতীয়া’-র কথা উল্লিখিত আছে।পরবর্তী কালে মর্ত্যলোকে বোনেরা যমুনার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে এই দিনটিতে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে ফোঁটা দিয়ে থাকেন। আবার অন্য মতে, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। তার পর থেকে ভাইফোঁটা উৎসব প্রচলিত হয়।
এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। ভাইও বোনকে কিছু উপহার বা টাকা দেয়।অনেক সময় এই ছড়াটি বিভিন্ন পরিবারের রীতিনীতিভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। অতঃপর, বোন তার ভাইএর মাথায় ধান এবং দুর্বা ঘাসের শীষ রাখে। এই সময় শঙ্খ বাজানো হয় এবং হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি করেন। এরপর বোন তার ভাইকে আশীর্বাদ করে থাকে (যদি বোন তার ভাইয়ের তুলনায় বড় হয় অন্যথায় বোন ভাইকে প্রণাম করে আর ভাই বোনকে আশীর্বাদ করে থাকে)। তারপর বোন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি দ্বারা ভাইকে মিষ্টিমুখ করায় এবং উপহার দিয়ে থাকে।
ভাইও তার সাধ্যমত উক্ত বোনকে উপহার দিয়ে থাকে। বোন চন্দন কাঠ জল দিয়ে ঘষে ( কেউ কেউ দইও মিশ্রিত করেন চন্দন কাঠের সাথে), নিজের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে নিচের মন্ত্রটি পড়তে পড়তে তিনবার তিলক দিয়ে দেয়। ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/ যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা/আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা…’। কোথাও কোথাও এই ছড়ার কিছু অদলবদল চোখে পড়ে। তবে বিষয়টা একই— ভাইয়ের মঙ্গলকামনা।
বঙ্গদেশে ভাইফোঁটার মতো এই লোকাচার বা লোকউৎসবের সূত্রপাত ঠিক কতদিন আগে হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনও তথ্য না পাওয়া গেলেও এর প্রাচীনত্বের আভাস পাওয়া যায় ‘সর্বানন্দ সুন্দরী’ নামে এক তালপাতার পুঁথিতে। অনুমান করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫২৭ সাল থেকে এই প্রথা চালু হয়। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে মহাবীর জৈনের প্রয়াণে রাজা নন্দিত বর্ধনের শোকবিহ্বল ভগিনীকে সান্ত্বনা দিতে অন্নগ্রহণ করানো হয়। সেই থেকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার প্রথা চালু হয়।
আগে একান্নবর্তী পরিবারগুলিতে দেখা যেত ভ্রাতৃদ্বিতীয়ারর দিন কয়েক প্রজন্মের ভাই-বোনেরা একসঙ্গে বসে মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। অট্টহাস্যে মুখরিত হয়ে উঠত ঘরগুলি। তবে বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একান্নবর্তী পরিবারগুলি বিলুপ্তির পথে। সেই জায়গা দখল করেছে মৌলিক বা অণু পরিবার। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একটি করে সন্তান। ফলে ভাই আছে তো বোন নেই, আবার বোন আছে তো ভাই নেই। এর ফলে তৈরি হচ্ছে ভার্চুয়াল জগতে রেডিমেড ভাই-বোন। কর্মসূত্রে ভাইবোনের অবস্থানগত দূরত্বের কারণেও অনেক সময় এই দিনটিতে পরস্পর মিলিত হতে পারছেন না। সামাজিক মাধ্যমেই তাঁরা এই দিনটি আস্বাদন করে থাকেন। এখন তুতো ভাই-বোনদের মধ্যেও সম্পর্ক ঢিলেঢালা হয়ে যাচ্ছে। ভিডিয়ো কলেও চলছে ফোঁটা দেওয়া।
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস