
bichuti pata
বিছুটি পাতার পরিচয় bichuti pata in bengali এ রাজ্যে কিছুটা ভিন্ন। গায়ে লাগলেই চুলকায়। অনেক সময় অবাধ্য ছেলেপুলেকে শাসনের নামে বিছুটি পাতা গায়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হত। তবে জানেন কি, এমন রাজ্যও আছে যেখানে bichuti pata in bengali বিছুটি পাতা রীতিমতো তোয়াজ করে রেঁধে তরিবত করে খাওয়া হয়। ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর এটি। বিছুটি পাতা। নামটা শুনলেই বিরক্তি আসে বেশিরভাগের মনে। এটি এমন একটি গাছ, যার পাতার রস, পাতার গুঁড়ো শরীরে লাগলে চুলকানি শুরু হয়। ঝোপঝাড়ে জন্মায় এই গাছ। একেক জায়গায় একেক নামে ডাকা হয় বিছুটি পাতাকে। কিন্তু জানেন কি, এই পাতার বেশ কিছু উপকার রয়েছে, যা আপনার শরীরে জাদু করতে পারে। বিছুটি (বৈজ্ঞানিক নাম: Tragia involucrata – ত্রাজিয়া ইনভোলুক্রাতা) হলো ইউফোরবিয়াসেই পরিবারের একটি উদ্ভিদ। বিছুটিকে উত্তর বঙ্গের লোকেরা ছোতরা পাতার গাছ, ছোতরা গাছ বা চুলচুইল্লাগাছ বলে ডাকে। তবে এর প্রমীত নাম bichuti pata in bengali বিছুটি গাছ। এটি এমন একপ্রকার উদ্ভিদ যার পাতা/রস/পাতার গুড়ো শরীরে লাগলে শরীর চুলকানি শুরু হয়।
বিছুটি (বৈজ্ঞানিক নাম: ত্রগিয়া ইভোলুকড়াটা) হলো উদ্ভিদ জগতের ইউফোরবিয়াসেই পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি সপূষ্পক উদ্ভিদ । আর এরা সবুজ উদ্ভিদ । এই গাছটির পাতা, রস, পাতার গুড়ো প্রভৃতি যদি কোনো ক্রমে শরীরের কোথাও লেগে যায় তবে চুলকোতে শুরু করে। একপ্রকার অ্যালার্জীর মতো। পরে শরীরের সেই স্থান ফুলে যায়, রস হয়।গাছটির কাণ্ড জুড়ে অতি সূক্ষ্ম লোমের মত ট্রাইকোম বিস্তৃত থাকে। গাছের গায়ে স্পর্শ করলে ট্রাইকোমের অগ্রভাগ ভেঙে যায় এবং এর ভেতর থেকে হিস্টামিন, অ্যাসিটাইলকোলিন, সেরোটোনিন সহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। বিছুটি গাছ স্পর্শ করলেই যে হুল ফোঁটার মতো যন্ত্রণা অনুভূত হয়, তার জন্য এই রাসায়নিক পদার্থগুলোই দায়ী।
আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য তাঁর চিরজ্ঞীব বনৌষধি বইতে চোতরার বিভিন্ন ভেষজ প্রয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন। ফল ও শিকড় প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা, কুষ্ঠরোগ, চর্মরোগ, চুলপড়া, বুক ধড়ফড়ানি ইত্যাদি সমস্যায় নানাভাবে কাজে লাগে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় মাথাব্যথায় উপকার পাওয়া যায়। গায়ে খোসপাঁচড়া ও ঘা বেশ উপকার পাওয়া যাবে। সর্দি-কাশি, জ্বর ও ব্রঙ্কাইটিসে আধাকাপ পরিমাণ শিকড়ের রস দু-তিন দিন পান করলে উপশম হয়। চুল পড়া বন্ধ করতে গাছের শিকড় অল্প পানিতে পিষে আমলকীর রসের সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগাতে হয়। এসব ছাড়াও গাঁটে বাত, কোষ্ঠবদ্ধতা, কাশি, হাঁপানি ও মামস সমস্যায় বিছুটির মূল ও ফল বেশ কার্যকর। আসাম অঞ্চলের কোন কোন বৈদ্য এটাকে উন্মাদ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। আয়ুর্বেদ এবং চরক সংহীতায় এর ভেষজ গুনের উল্লেখ রয়েছে। লোকালয়ে ঝোপ-ঝাড় ধ্বংস করে আবাদী জমি তৈরীর ফলে অন্যান্য মূল্যবান গাছের মত চোতরাও হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চোতরা ভেষজ চিকিৎসা ছাড়াও বন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিছুটি পাতার bichuti pata সঙ্গে রাসায়নিক সংমিশ্রণ শরীরের জন্য ক্ষতিকারক অবশ্যই। কিন্তু এই পাতা শুকিয়ে ব্যবহার করলে শরীরের নানা রোগে দাওয়াই হয়ে যায় বিছুটি পাতা। এই পাতায় রয়েছে ফ্যাট, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন-সহ নানা উপকারী উপাদান। বিছুটি পাতার নির্যাস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ তৈরি হয়। এছাড়াও রক্তাল্পতা, পেটের রোগ, শ্বাসকষ্ট ও ডায়াবিটিসে দারুণ কার্যকরী এই পাতা। ভাবাই যায় না, ঝোপঝাড়ে থাকা এই পাতা শরীরের এত কাজে লাগে। ধুলোবালির জেরে যে শ্বাসকষ্ট হয় বা অ্যালার্জি হয়, কিংবা খাবারে অরুচি দেখা যায়– এমন সমস্যার সমাধানে বিছুটি পাতা অব্যর্থ। সর্দি-কাশি-জ্বরে মুখের স্বাদ ফেরাতে কাজে লাগে বিছুটি পাতা। হাঁপানির সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এই পাতা। বিছুটি পাতায় রয়েছে ভিটামিন বি, আয়রন, ভিটামিন সি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক কাপ গরম জলে দু’চামচ বিছুটি পাতার গুঁড়ো ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। মধু মিশিয়ে দিনে দু’বার এই মিশ্রণ খেলে রক্তাল্পতার ঝুঁকি অনেক কমবে। এছাড়াও বিছুটি পাতার রসে রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে। রক্ত শুদ্ধ করতেও কার্যকরী বিছুটির রস। ডায়েবিটিসের মোক্ষম দাওয়াই বিছুটি পাতার রস।
হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড— দুই জায়গাতেই পাহাড়ি ঢালে বুনো পাতা গজায় নিজে থেকেই। সেটাই শাক হিসাবে খাওয়া হয়। শুধু শাক নয়, এই পাতার পুষ্টিগুণ এতটাই যে ইদানীং পানীয় হিসাবে তা খাওয়ার চল হয়েছে। কী ভাবে এই পাতা খাওয়া যায় জানার আগে, জানা দরকার, কেন খাওয়া হয় তা।
অ্যালার্জি থেকে মুক্তি: বিছুটি পাতার গুঁড়ো অ্যালার্জি জনিত সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ২০১৩ সালে ‘জার্নাল অফ হার্বাল মেডিসিন’-এর গবেষণালব্ধ তথ্যে এমনটাই উঠে এসেছে। চোখের চুলকানি, অ্যালার্জি জনিত হাঁচির মতো সমস্যা দূর করতে এই পাতা কার্যকর।
অস্থিসন্ধির এবং পেশির যত্ন নেয়: ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড এবং পলিফেনল সমৃদ্ধ বিছুটি পাতা অস্থিসন্ধি এবং পেশির প্রদাহ কমাতে সহায়ক। গেঁটে বাত, আর্থ্রাইটিসের রোগীদের পক্ষে উপকারী পাতাটি।
সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এটি, বলছে ২০১৯ সালে ‘ফাইটোথেরাপি রিসার্চ’ নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র। টাইপ ২ ডায়াবিটিসের চিকিৎসতেও এই পাতা কাজে লাগে। এখানেই গুণের শেষ নয়। গরমে ত্বকের জন্যও ভাল এটি। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ভিটামিন এ, সি। র্যাশ ও অ্যালার্জির সমস্যাতেও এই পাতা দারুণ কাজ দেয়। এই পাতার তৈরি চা খেলে হজমের গন্ডগোল কমে।
হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে বিছুটা খাওয়া হয় শাক হিসেবে। এই গাছের পাতা তুলতে হবে সাবধানে। ডাঁটি নয়, শুধু পাতা ছিঁড়তে হবে। পাতা তোলার সময় হাত চুলকাতে পারে তাই গ্লাভস বা চিমটে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক এক জায়গায় এক এক কায়দায় এটি রান্না হয়। বিছুটি গাছের পাতায় যে রোঁয়া থাকে সেটিই জ্বালা বা চুলকানির কারণ। প্রথমে পাতাগুলি আগুনে হালকা সেঁকে নিলে এই সমস্যা হবে না। তার পর পাতাগুলি গরম জলে ভাপিয়ে বেটে নিয়ে হবে। কড়াইয়ে তেলে এবং ঘি মিশিয়ে সেটি গরম করে শুকনো লঙ্কা, সর্ষে, রসুন ফোড়ন দিয়ে স্বাদমতো নুন দিয়ে শাক ভেজে নিলেই হবে।
চা: পুষ্টিগুণের জন্য বিছুটি পাতার চা নিয়েও সমাজমাধ্যমে চর্চা রয়েছে। জলে এই পাতা ফুটিয়ে সেই জলটি ‘চা’ হিসেবে খেতে হবে। স্বাদের জন্য মধু যোগ করা যেতে পারে।
স্যুপ: বিদেশে কোথাও কোথাও বিছুটি পাতার স্যুপ খাওয়া হয়। পাতা ধুয়ে ভাপিয়ে নিয়ে বেটে নিতে হবে। একটি পাত্রে মাখন দিয়ে তাতে পেঁয়াজ কুচি, রসুন পাতা নাড়াচাড়া করে মুরগির মাংস বা সব্জি সেদ্ধ করা জল দিতে হবে। তার মধ্যে দিতে হবে ভাপিয়ে নেওয়া বিছুটি পাতা বাটা। স্বাদমতো নুন, গোলমরিচ দিলেই স্যুপ তৈরি।
বিছুটি পাতার প্রচলিত নামসমূহ অসমীয়া : ডুমুনি চুরাত বাংলা : বিছুটি এবং উত্তর বঙ্গের লোকেরা ছোতরা পাতা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে বেশোতক্তা, ময়মনসিংহ অঞ্চলে এই গাছটি “চোতরা” নামে পরিচিত। ইংরেজি : (Indian stinging nettle) ইন্ডিয়ান স্টিঙ্গিং নেটল, (climbing nettle) ক্লাইম্বিং নেটল, (canchorie root-plant হিন্দি : (पीत पर्णी) পিত পারানি, (बढन्त) বারান্ত। কন্নড় : ( ತುರಿಕೆ ಬಳ್ಳಿ ) তুর্কি বাল্লি। মালয়ালম : কডিতুম্বা, ছেরিকোটিতোবা, চরিয়ানাম, (ചൊറിയണം) চরিয়ানাম, কডিৎতোভা। মারাঠি : (आग्या) আগ্য, (लघुमेडशिंगी) লাঘুমেদশিঙ্গি, (आग पान) আগ পান, (कळलावी) কল্লভি। নেপালি : (उट कटेरी) উট কেটারী ওড়িয়া: ବିଛୁଆତି(ট্রান্সিলেসন), কাসালাক্কু। সংস্কৃত: (दुःस्पर्ष ) দূস্পর্শ, (वृश्चिकाच्छद ) বৃশ্চিকাস্সাদ, (वृश्चिकापत्री) বৃশ্চিকাপত্রী, (वृश्चिकाली) বৃশ্চিকালী, (आगमावर्ता) আগমাবত্র, (कषाग्निः) কাসাগনি তামিল : (காஞ்சொறி) কান্চরী / (செந்தட்டி) সেনতাত্তী। তেলুগু : ( తేలుకొండిచెట్టు) তেলোকন্দিকেত্ত।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হতে ক্লিক করুন Aaj Bangla হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।