
world longest railway network
বিশ্বব্যাপী পরিবহনব্যবস্থার অন্যতম মূলস্তম্ভ রেলপথ, world longest railway network যা দীর্ঘ দূরত্বে পণ্য, মানুষ ও অন্যান্য সম্পদের চলাচল সহজ করে তোলে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উৎসাহ সৃষ্টি থেকে শুরু করে দূরের যোগাযোগ সহজ করা—রেল নেটওয়ার্ক world longest railway network একটি দেশের পণ্য পরিবহনব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি দেশের রেলপথের আকার ও কার্যকারিতা সে দেশের ভৌগোলিক চাহিদা, অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার ও ঐতিহাসিক বিকাশের প্রতিফলন করে। বাণিজ্য বৃদ্ধি, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও পরিবহন দক্ষতার উন্নয়নে রেলপথ হতে পারে কার্যকর অস্ত্র। সবচেয়ে দীর্ঘ রেলপথ নেটওয়ার্ক আছে এমন ১০ দেশ নিয়ে আজকের আয়োজন।

দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে world longest railway network বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলপথ নেটওয়ার্ক যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটিতে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার (১ লাখ ৬০ হাজার মাইল)। যুক্তরাষ্ট্রে ছয় হাজারের বেশি রেলওয়ে অপারেটর আছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৯২ হাজার মাইলের বেশি ক্লাস ওয়ান রেলপথ আছে। যে রেলপথ বা রেল কোম্পানি সবচেয়ে বড় আকারের, সেগুলো ক্লাস ওয়ান হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। বড় পরিসরে ও দীর্ঘ দূরত্বে পরিচালিত রেলপথকে ক্লাস ওয়ান রেলপথ বলে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ হাজার মাইল শর্ট-লাইন রেলপথ রয়েছে। শুধু হাওয়াই বাদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে মালবাহী ট্রেন চলাচল করে।

রেলপথের দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই আছে চীন। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৫৫ হাজার কিলোমিটার (৯৬ হাজার ৩১৩ মাইল)। world longest railway network চীনে ৪২ হাজার কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত উচ্চগতির রেলপথ (এইচএসআর) রয়েছে। এটি কোনো দেশে উচ্চগতির সবচেয়ে দীর্ঘ রেলপথ। চীনে যেসব রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে, সেগুলোতে একটি ট্রেন সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে চলাচলে সক্ষম।

২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়াজুড়ে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার কিলোমিটার রেলপথ ছড়িয়ে আছে। world longest railway network ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথ বিশ্বের দীর্ঘতম একক রেলপথ, যা ৮টি টাইম জোন, ৮৭টি শহর ও পৌরসভা অতিক্রম করেছে। রেলপথটি চলার পথে ১৬টি বড় নদী পার হয়েছে। ট্রেনে রাশিয়ার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ভ্রমণে সময় লাগে ১২ থেকে ২৫ দিন, কখনো কখনো তার–ও বেশি।

ভারতের রেলওয়ের সর্বশেষ (২০২৪) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ হাজার ১০৩ কিলোমিটার (৪২ হাজার ২৯৮ মাইল)। ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর এ হিসাব হালনাগাদ করে। মোট দৈর্ঘ্যের দিক থেকে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেলপথ নেটওয়ার্ক। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার রেলপথ বিদ্যুতায়িত। অর্থাৎ এ পথ দিয়ে বিদ্যুৎ–চালিত ট্রেন চলাচল করে। নিজের রেল যোগাযোগব্যবস্থা পরিচালনায় ভারতের কাছে রয়েছে সবচেয়ে বড় কর্মিবাহিনী। ভারতীয় রেলওয়ের কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।

বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ রেলপথ নেটওয়ার্কগুলোর একটি রয়েছে কানাডায়। সর্বশেষ ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, কানাডার মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ৪৯ হাজার ৪২২ কিলোমিটার (৩০ হাজার ৭০৯ মাইল)। দেশটিতে বিদ্যুতায়িত রেলপথ মাত্র ১২৯ কিলোমিটার (৮০ মাইল)। কানাডায় রেলপথে মূলত পণ্য পরিবহন করা হয়। world longest railway network যাত্রীবাহী রেলপথ চলে সীমিত পরিসরে ও নির্দিষ্ট রুটে। কানাডার প্রধান দুই রেল কোম্পানি কানাডিয়ান ন্যাশনাল রেলওয়ে (সিএন) ও কানাডিয়ান প্যাসিফিক ক্যানসাস সিটি (সিপিকেসি) মূলত দেশটির রেল পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করে। আয় ও আকার উভয় দিক থেকে কানাডিয়ান ন্যাশনাল রেলওয়ে দেশটির সবচেয়ে বড় রেলওয়ে প্রতিষ্ঠান। কানাডার রেলপথ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশ ও মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি উত্তর আমেরিকার একমাত্র রেলপথ নেটওয়ার্ক, যা আটলান্টিক, প্রশান্ত মহাসাগর ও মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত পৌঁছেছে। সিএন বছরে প্রায় ৩০ কোটি টন পণ্য পরিবহন করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো শস্য, খনিজ ও রাসায়নিক।

ইউরোপীয় কমিশন ও ডয়চে বান ইনফ্রাস্ট্রাকচারের প্রতিবেদন (২০২৩-২৪) অনুযায়ী, জার্মানিতে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৩৯ হাজার ৩৭৯ কিলোমিটার। ইইউয়ের দেশগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ রেল নেটওয়ার্ক। জার্মানিতে অধিকাংশই বিদ্যুতায়িত রেলপথ, যার দৈর্ঘ্য ২০ হাজার ৫৪০ কিলোমিটার। দেশটিতে ১৮ হাজার ৫৫৬ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল ট্র্যাক (দ্বৈত লাইন)। ডয়চে বান জার্মানির রাষ্ট্রায়ত্ত রেল কোম্পানি ও ইউরোপের সবচেয়ে বড় রেল অপারেটর। তারা প্রতিবছর ১৫০ কোটি যাত্রী ও প্রায় ৪০ কোটি টন পণ্য পরিবহন করে। জার্মানির রেলপথ ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যা ফ্রান্স, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ অনেক দেশের সঙ্গে সংযুক্ত।

অস্ট্রেলিয়ার রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬ হাজার ৬৪ কিলোমিটার (২২ হাজার ৪০৯ মাইল)। দেশটির প্রধান রেলপথ গেজগুলো হলো স্ট্যান্ডার্ড, ব্রড ও ন্যারো গেজ। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ যাত্রীবাহী রেলপথ ‘ইন্ডিয়ান প্যাসিফিক’। দেশটিতে রেলপথ দিয়ে মূলত পণ্য পরিবহন করা হয়, বিশেষ করে খনিজ সম্পদ পরিবহনে।

ব্রাজিলের রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ হাজার ৫৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১ হাজার ৪১১ কিলোমিটার পথে যাত্রী পরিবহন করা হয়। দেশটিতে খাদ্যশস্য, খনিজ সম্পদসহ মূলত মালামাল পরিবহনে রেলপথ ব্যবহৃত হয়। সেখানে মালবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য ১৩ দীর্ঘ রেলপথ রয়েছে। যাত্রীবাহী পরিষেবা মূলত শহুরে ট্রেন ও মেট্রো রুটে সীমাবদ্ধ।

যেসব দেশে বিশ্বের বৃহৎ রেলপথ নেটওয়ার্ক আছে, সেগুলোর একটি ফ্রান্স। ২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭ হাজার ৮৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার রেলপথে উচ্চগতির ট্রেন চলাচল করে। মোট স্টেশনের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি।

জাপানের রেলপথ নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭ হাজার ৩১১ কিলোমিটার। এর মধ্যে বিদ্যুতায়িত রেললাইন প্রায় ১৯ হাজার কিলোমিটার। জাপানে উচ্চগতির ট্রেন চলাচলের জন্য প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথ আছে। জাপানি ভাষায় একে শিনকানসেন বলে। প্রধান রেলওয়ে অপারেটর জাপান রেলওয়ে গ্রুপ। কয়েকটি বেসরকারি অপারেটরও আছে। জাপানের যাত্রীবাহী রেল পরিবহনসেবাকে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ও সময়ানুবর্তী রেলপথব্যবস্থা বলা হয়। {তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ, ইউরোপিয়ান কমিশন ও ডয়চে বান ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিপোর্ট (২০২৩-২৪), চীন রেলওয়ে গ্রুপ, রাশান রেলওয়েস}

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হতে ক্লিক করুন Aaj Bangla হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।