
Bangladesh
ইসলামিক দেশে হিন্দুদের দেশ ভারত থেকে আশা পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে এখন বিপাকে বাংলাদেশ । Bangladesh বাংলাদেশের কিছু পণ্য ভারতে আমদানির ক্ষেত্রে স্থলবন্দর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে নয়াদিল্লি। ভারতের এই সিদ্ধান্তের পরে বড়সড় সমস্যার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ‘বয়কট ইন্ডিয়া’-র ব্যাপক প্রভাব পরে। ফেসবুক, এক্স (আগের টুইটার)-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় Bangladesh বাংলাদেশি নাগরিকদের একটা অংশের উৎসাহের বড়ো কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ‘বয়কট ইন্ডিয়া’। এই প্রচারের সঙ্গে যুক্তরা দাবি করেন যে ভারত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকার জন্য সমর্থন করছে। কারণ এর নেপথ্যে রয়েছে ভারতের বাণিজ্যিক স্বার্থ। অনেকের মতে, বয়কট ইন্ডিয়া, ভারতীয় পণ্য বর্জনের রাজনীতি নতুন কিছু না। ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণাকে পাকিস্তান আমলে বস্তাপচা নোংরা রাজনীতির সঙ্গে তুলনাও করছেন অনেকে। সেই বস্তাপচা রাজনীতিই আবার নতুন করে আমদানি করা হচ্ছে মাত্র। সম্প্রতি বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলের পক্ষ থেকে ভারতীয় পণ্যের বয়কটের ডাক দেওয়ার প্রেক্ষাপটে ভারত এক কড়া বাণিজ্যিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা বাংলাদেশি রপ্তানির ওপর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধাক্কা আনবে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, যার মধ্যে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারতে যায়। এর ৯৩ শতাংশই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করত। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই নিষেধাজ্ঞা মূলত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পণ্যের ওপর ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সব স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির সুযোগ দিলেও বাংলাদেশ ভারতের সুতো, চালসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রকের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএফটি) এই নিষেধাজ্ঞা জারির প্রেক্ষিতে পরিস্থিতির গভীরতা আঁচ করতে পারছে ইউনূস প্রশাসনও। ভারত সরকারকে এই বিধিনিষেধ স্থগিতের জন্য অনুরোধ করুক অন্তর্বর্তী সরকার। চিঠি দিয়ে এমনটাই আবেদন জানাল বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক নির্মাতাদের সংগঠন বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন)। তারা জানিয়েছে, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলাদেশি রফতানিকারকেরা। অন্তত তিন মাসের জন্য যেন বিধিনিষেধ স্থগিত করা হয়, মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার তার বন্দোবস্ত করুক। এ বিষয়ে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের আবেদনও জানিয়েছে বিকেএমইএ। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্র উল্লেখ করে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশের Bangladesh ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছেন, তা তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট। আমদানি ও রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ওপার বাংলার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়েই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, অন্তত ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রোজ ভারতে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক শুধু পোশাক নিয়ে যায়। ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্গো ইয়ার্ড বন্ধ ছিল। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলির কথায়, ‘কলকাতা ও মুম্বইয়ের সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করা আমাদের জন্য কঠিন ও ব্যয়বহুল। আটকে পড়া পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছি।’
বিকেএমইএ সভাপতি মহম্মদ হাতেম অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠি গিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতের বিধিনিষেধের কথা জানার পর বাংলাদেশের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর উদ্যোগে এবং বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে পর পর দু’টি বৈঠক হয়েছে। তাতে সকলেই একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, সচিব পর্যায়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে অবিলম্বে আলোচনা প্রয়োজন। কারণ, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থলবন্দরগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থলপথে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে অনেক পণ্য সীমান্তে আটকে গিয়েছে। স্থগিত হয়ে গিয়েছে উৎপাদন। এতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে।’’
বাংলাদেশের পোশাক নির্মাতারা চিঠিতে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের খতিয়ান প্রকাশ করেছেন। বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রফতানি পণ্য বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এর মধ্যে অধিকাংশই পোশাক। গত ১০ মাসে স্থলপথে ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছে।’’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পোশাক নির্মাতাদের অনুরোধ, ‘‘ভারতের নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশি পোশাক নির্মাতারা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ভারত সরকারের কাছে অন্তত তিন মাস সময় চাইতে হবে। তাদের অনুরোধ করতে হবে। বর্তমানে যে পণ্য প্রক্রিয়ারত অবস্থায় আছে, তা-ও যেন এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা হয়।’’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রাক্তন অধিকর্তা মহিউদ্দিন রুবেলের কথায়, ‘এখন Bangladesh বাংলাদেশের পোশাক ভারতে পৌঁছতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগবে। খরচও বাড়বে। অর্থাৎ (ভারতে পোশাক) রপ্তানি কিছুটা কমে যাবে।’ তাঁর সংযোজন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য যখন নানা সমস্যায় জর্জরিত, তখন এমন সিদ্ধান্ত উভয় পক্ষের ক্ষতির পরিমাণ বাড়াবে।’ বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ৫০ কোটি ডলারের পোশাক ভারতে রপ্তানি করে। এই প্রেক্ষিতে রুবেল বলেন, ‘বাংলাদেশের বড় ক্রেতা দেশ হলো ভারত এবং সেখানে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের বাজার বড় হচ্ছিল। এখন ভারতের এই সিদ্ধান্ত নতুন করে আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াল।’
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, এ দেশের কোনও স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক ভারতে ঢুকবে না। কেবল মুম্বই এবং কলকাতা বন্দর দিয়ে জলপথে এই পণ্য ভারতে ঢুকতে পারবে। ফল, ফলের স্বাদযুক্ত কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার (কেক, চিপ্স বা স্ন্যাক্স), তুলো, সুতো, প্লাস্টিকের পণ্য এবং কাঠের আসবাবপত্র অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা বা মিজ়োরামের কোনও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ঢুকতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি দিয়েও এই পণ্য ঢুকতে দেওয়া হবে না। এর পরেই বাংলাদেশের পোশাক নির্মাতারা ইউনূসের সরকারের দ্বারস্থ হলেন।
বাংলাদেশের Bangladesh কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, ‘ভারতের এইটুকু নিষেধাজ্ঞার জেরেই বাংলাদেশে প্রভাব পড়েছে। এর পরে যদি ভারত আমাদের ফুড চেন কেটে দেয়, তখন কী হবে? বাংলাদেশ যদি ভারতে গড়ে ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, তা হলে ভারত থেকে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। আমরা যদি ভারতীয় পণ্য বয়কট করি, তা হলে ভারত চাপে পড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু বাস্তবটা হলো, ভারত থেকে আমরা যা আমদানি করি, তার মধ্যে অন্তত ৭০০ কোটি ডলারের মতো রয়েছে খাদ্য বা খাদ্যপণ্যের কাঁচামাল। সেটা বন্ধ হয়ে গেলে কী ভাবে চলবে?’ আর এক বিশ্লেষকের যুক্তি, ‘বাংলাদেশের পণ্য সেখানকার বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপে রপ্তানি করতে যদি কেজি প্রতি সাড়ে ছ’ডলার খরচ হয়, তা হলে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে পাঠাতে খরচ হয় চার ডলার। ফলে বাংলাদেশ যদি ভারত বিরোধিতা চালিয়ে যায়, তা হলে তাদেরই সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এর পরে যদি ভারত তার আকাশপথও বাংলাদেশের জন্য বন্ধ করে দেয়, সে ক্ষেত্রে আরও বড় বিপদ।’
এই বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ‘এর আগে বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় সুতো উৎপাদনকারীদের কথা বলে ভারত থেকে স্থলপথে সুতো আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু বুঝতে হবে, সুতোর কাঁচামালটাও আসে ভারত থেকে। ফলে ধাক্কা খাচ্ছি আমরাই। এখন যদি বাংলাদেশ আবার বলে ভারতের সঙ্গে আমদানি–রপ্তানি বন্ধ করে দেবে, তা হলেও ক্ষতিটা বাংলাদেশের। কারণ ভারতের মোট রপ্তানির ৮০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে বাংলাদেশে ১০–১২ বিলিয়ন ডলার না–হলে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু আমরা যদি সর্বোচ্চ ৪০–৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য করে থাকি, তা হলে ভারতের সঙ্গে দু’বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়াটাও আমাদের কাছে বড় ধাক্কা।’ ঢাকার উপরে চাপ বাড়াতে আগামী দিনে ফরাক্কার জলচুক্তি নিয়েও নয়াদিল্লি আরও কোনও কঠোর পদক্ষেপ করবে কি না, সে দিকেও নজর রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলের।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হতে ক্লিক করুন Aaj Bangla হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।