অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু অভিযোগ করার পরেই বিতর্ক দেখা দেয়। পূর্ববর্তী ওয়াই এস জগন মোহন রেড্ডি সরকার Tirupati Balaji Prasad তিরুমালায় লাড্ডু ‘প্রসাদম’ প্রস্তুত করতে ঘির পরিবর্তে পশুর চর্বি ব্যবহার করেছিল। পরে, রাজ্যের মন্ত্রী এবং তেলেগু দেশম পার্টির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক নারা লোকেশ নাইডুও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন যে লাড্ডু তৈরিতে ব্যবহৃত ঘিয়ের একটি পরীক্ষায় মাছের তেল এবং পশুর চর্বির উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ শুক্রবার তিরুপতি লাড্ডুতে থাকা উপাদানগুলিকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হওয়ায় একটি ‘সনাতন ধর্ম রক্ষা বোর্ড’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
“তিরুপতি বালাজি প্রসাদে মেশানো প্রাণীর চর্বি পাওয়ায় আমরা সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তখনকার ওয়াইসিপি সরকার দ্বারা গঠিত টিটিডি বোর্ডের দ্বারা অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে,” জনসেনা পার্টির প্রধান টুইটারে জানিয়েছেন। তিনি যোগ করেছেন যে অন্ধ্র সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে পবন কল্যান জানিয়েছেন, ” সমগ্র ভারতে মন্দির সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখার জন্য জাতীয় স্তরে একটি ‘সনাতন ধর্ম রক্ষা বোর্ড’ গঠন করার সময় এসেছে।”
তাঁর কথায়, নীতি নির্ধারক, ধর্মীয় প্রধান, বিচার বিভাগ, নাগরিক এবং মিডিয়ার মধ্যে “বিতর্ক আলোচনার” প্রয়োজন রয়েছে। তিরুপতির লাড্ডু কাণ্ডে অন্ধ্রপ্রদেশের সাবেক শাসকদল ওয়াইএসআরসিপি শুক্রবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল। বর্তমান শাসকদল তেলুগু দেশম পার্টির সুপ্রিমো এন চন্দ্রবাবু নাইডু তিরুপতি বালাজির প্রসাদ লাড্ডুতে পশুর চর্বি মেশানোর অভিযোগ তোলার বিরুদ্ধে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে আদালতের পর্যবেক্ষণে তদন্ত দাবি করেছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির দল।
এদিকে, তিরুপতির লাড্ডু বিতর্কে কংগ্রেস এদিন বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিকেই দোষী সাব্যস্ত করে। এই ঘটনায় দলের প্রচার বিভাগের প্রধান পবন খেরা বলেন, তিরুপতির প্রসাদী লাড্ডুকে অপবিত্র করার অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে অবশ্যই একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রয়োজন। যে বা যারা এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হবেন তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। কিন্তু, এই দাবি যদি মিথ্যা কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে যাঁরা এই কাজ করেছেন, তাঁদের কোনওদিন ক্ষমা করবেন না তিরুপতির লক্ষ লক্ষ ভক্ত, লিখেছেন পবন খেরা।
তবে ততক্ষণ পর্যন্ত একথা বলা যায় যে, নির্বাচনী মরসুমে মেরুকরণের তত্ত্ব ভাসিয়ে বাতাস ভারী করে তোলা বিজেপিকেই মানায়, অভিযোগ কংগ্রেস নেতার। তেলুগু দেশম পার্টির নেতা মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তোলা গুরুতর অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এদিন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ওয়াইএসআরসিপি এই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তোলে। আর্জিতে বলা হয়েছে, একজন কর্তব্যরত বিচারক অথবা আদালতের নিয়োগ করা কোনও কমিটিকে দিয়ে এর তদন্ত করা হোক।
হাইকোর্ট আবেদনকারী আইনজীবীকে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর একটি জনস্বার্থ আবেদন করার পরামর্শ দেয় এবং ওইদিনই শুনানি হবে বলে জানিয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা টিডিপির শরিকদল জনসেনা পার্টির নেতা পবন কল্যাণ শুক্রবার সকালে এক এক্সবার্তায় তিরুপতি মন্দিরের প্রসাদী লাড্ডুতে পশুর চর্বি মেশানোর ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, তিরুপতি বালাজির প্রসাদে পশুর তেল-চর্বি (মাছের তেল, শুয়োর এবং গোরুর চর্বি) মেশানোর ঘটনায় আমরা সকলেই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
আগের ওয়াইসিপি সরকার গঠিত তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম ট্রাস্ট বোর্ডকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। উপমুখ্যমন্ত্রী দেশের মানুষকে আশ্বাস দিয়ে লিখেছেন, আমরা এই ঘটনার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেব। কিন্তু, এই ঘটনা আমাদের চারধারে মন্দিরগুলির স্বেচ্ছাচারিতা, জমি সংক্রান্ত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাচারের দিকে নজর কেড়ে নিয়েছে। এই অবস্থায় তিনি জাতীয় স্তরে একটি সনাতন ধর্ম রক্ষণ বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা আরোপ করেছেন। পবন কল্যাণের দাবি, গোটা ভারতে সনাতন ধর্মকে রক্ষার জন্য মন্দিরগুলির সমস্ত বিষয়ে নজরদারি রাখবে এই বোর্ড।
পবন কল্যাণ আরও লিখেছেন, সমাজের সর্বস্তরে যেমন নীতি রূপায়ক, ধর্মীয় প্রধান, বিচারবিভাগ, সুনাগরিক, প্রচারমাধ্যম এবং অন্য আরও অনেককে নিয়ে জাতীয় স্তরে এর পর্যালোচনা প্রয়োজন। আমি মনে করি, যে কোনও পদ্ধতিতেই হোক না কেন, সনাতন ধর্মকে অপবিত্র করার চেষ্টায় ইতি টানা দরকার। অন্ধ্রপ্রদেশের বর্তমান শাসকদল এন চন্দ্রবাবুর নাইডুর দল তেলুগু দেশম পার্টি হিন্দুতীর্থ তিরুপতি মন্দিরের প্রসাদী লাড্ডুতে গোরু-শুয়োরের চর্বি, মাছের তেল মেশানোর ঘটনায় পূর্বতন ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি সরকারকে হাড়িকাঠে চাপাচ্ছে।
বিশেষত এই ঘটনা প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে দেশের তাবড় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিকে। এদিকে, তিরুপতি মন্দিরে তৈরি লাড্ডু গিয়েছিল অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধনে। আর তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। এই বিতর্কের আগুন আরও উসকে দিয়ে রাম জন্মভূমির মুখ্য পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস তীব্র নিন্দা করেছেন। শুক্রবার তিনি বলেন, আমি মনে করি, এর পিছনে বিদেশি চক্রান্ত আছে। যে বা যারা এই কাজ করেছে তারা জঘন্য অপরাধী এবং দেশদ্রোহী। সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, ভগবান তিরুপতি বালাজির প্রসাদের লাড্ডু পৃথিবী বিখ্যাত। এই ঘটনা ভক্তদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে। যে বা যারাই এই কাজ করে থাকুক না কেন, সে গুরুতর অপরাধী ও দেশদ্রোহীর মতো কাজ করেছে।