সেন রাজবংশ sena dynasty history In Bengali ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম দিকের মধ্যযুগীয় একটি হিন্দু রাজবংশ ছিল, যা বাংলা থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত sena dynasty history In Bengali সেন সাম্রাজ্য হিসেবে শাসন করেছিল। বল্লাল সেন রচিত গ্রন্থ অনুসারে সেন রাজবংশ এর গোরাপত্তন ৯০০ শতকেরও পূর্বে ।বাংলার পাল রাজাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে করতে তারা একসময় পাল রাজাদেরকে পরাজিত করে পাল সাম্রাজ্য করায়ত্ত করেন।প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে সেন রাজবংশের রাজত্বকাল দীর্ঘস্থায়ী না হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেন রাজারা ছিলেন গোঁড়া হিন্দু।
তাই এই সময় বাংলায় হিন্দুধর্ম রাজ-পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে এবং সমাজে ব্রাহ্মণদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সেন রাজাদের সাম্রাজ্য ধ্বংস হলে বিভিন্ন ছোট রাজ্য শাসন করতে থাকে। সেন বংশীয় এসব রাজার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুন্ড্র ও বরেন্দ্র রাজ রাজা অচ্যুত সেন,কামরুপ রাজ কামতেশ্বর নীলাম্বর সেন প্রমূখ। বাংলার পাল সাম্রাজ্যের পতনের পর সেন রাজবংশের শাসনকালের সূচনা হয়।অষ্টম শতকে সেন রাজারা একটি ক্ষুদ্র রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। কালক্রমে এই রাজ্যটিই বিশাল আকার ধারণ করে। সেন রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল বাকাটক সেন সাম্রাজ্যের কর্ণাটকে। সেন রাজারা বীর সেনকে তাঁদের বংশের আদিপুরুষ বলে দাবি করেছিলেন। বৈদিক ব্রাহ্মণ কুলপঞ্জিকা গ্রন্থ “বিপ্ৰকুলকল্পলতিকা” মতে, দাক্ষিণাত্য-বৈদিক ব্রাহ্মণ রাজা অশ্বপতি সেনের বংশে চন্দ্রকেতু সেন জন্মগ্রহণ করেন, তার বংশে বীরসেন উৎপন্ন হন ; বীরসেনের বংশজাত বিক্রমসেন বিক্রমপুর নগর স্থাপন করেন।
দেওপাড়া প্রশস্তি থেকে জানা যায়, তারা ছিলেন বৈদিক ব্রাহ্মণ এবং চন্দ্রবংশীয় ‘ব্রহ্মক্ষত্রিয়’। এছাড়া কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে সেন রাজারা ছিলেন বৈদ্যব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। যাঁরা ব্রাহ্মণ কুলে জন্মগ্রহণ করে একই সাথে ব্রাহ্মণ্য আচার এবং ক্ষত্রিয়ের পেশা রাজ্যশাসন ও যুদ্ধবিদ্যা অনুশীলন করে তাকে “ব্রহ্মক্ষত্রিয়” বলে।সেনদের জীবনাচরণে এর প্রভাব দৃশ্যমান।তারা যেমনি ছিলেন রাজ্যশাসন আর অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী তেমনি শাস্ত্র বিদ্যায়ও সিদ্ধহস্ত।রচণা করেছেন দানসাগর অদ্ভুতসাগরের মত গ্রন্থাবলি।১২০৬ সালে মহম্মদ ঘোরি দিল্লিতে তুর্কি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগেই ১২০২ সালে তুর্কি সামরিক নেতা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি বাংলা আক্রমণ করেন। এর কিছুদিন আগে লক্ষ্মণ সেন নদিয়ায় অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। নদিয়া তুর্কিদের দ্বারা আক্রান্ত হলে বৃদ্ধ রাজা লক্ষ্মণ সেন সসৈন্যে বাধা দিয়ে অগ্রসর হন, কিন্তু প্রাসাদে উপযুক্ত পরিমান সৈন্য না থাকায় নৌকাযোগে পূর্ববঙ্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায়, সেন আমলের লেখাপত্র থেকে জানাচ্ছেন, লক্ষ্মণ সেন এর সাথে বখতিয়ার খিলজির একটা প্রত্যক্ষ যুদ্ধ হয়েছিল, লক্ষ্মণসেন পূর্ববঙ্গ থেকে সৈন্যসামন্ত নিয়ে ফিরে এসে একবার ভীষণ যুদ্ধ করেছিলেন, সম্মুখযুদ্ধ হয়েছিল, এবং তাতে লক্ষ্মণ সেন, বখতিয়ার খিলজি কে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করে বাঙ্গালা থেকে তাড়িয়ে দেন ও গৌড় পুনরুদ্ধার করেন।তার মৃত্যুর পর পুত্র মাধব সেন প্রথমে বাঙ্গালার রাজা হইয়েছিলেন। তৎপরে তার ভ্রাতা কেশব সেন ও বিশ্বরূপ সেন পর পর বাঙ্গালার রাজা হয়েছিলেন। তারা বহিরাগত তুর্কি হানাদারদের পরাস্ত করে “গর্গযবনান্বয়প্রলয়কালরুদ্র” উপাধি নেন এবং পূর্ববঙ্গে স্বাধীন হিন্দু শাসন স্থাপন করেন। তিনি ১২২৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। বিশ্বরূপ সেনের মৃত্যুর পর তার পুত্র সূর্য সেন রাজা হয়েছিলেন। তবে লক্ষ্মণ সেনের মৃত্যুর পর থেকেই বাংলায় সেন শাসন দুর্বল হতে শুরু করে।
শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে সামন্ত বিদ্রোহের ফলে সেন সামাজ্যের পতন ঘটে এবং চন্দ্রদ্বীপের দেব রাজবংশ ক্ষমতায় আসে। সেন রাজবংশ মধ্যযুগে কামরূপ রাজ্য ও শাসন করেছিল। সেন রাজবংশকে “ক্ষৌণীদ্র বংশ” ও বলা হত। সেন সাম্রাজ্যের পতন হলেও এই রাজবংশের রাজারা বিচ্ছিন্ন ভাবে ভারত,বাংলাদেশ, নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে শাসন চালিয়েছিলো। গৌড়, পুন্ড্র ও বরেন্দ্র পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত সেন রাজবংশের অধীনে ছিল।তদ্বংশীয় গৌড়ের একটি ভূমের শাসক নীলধ্বজ সেন কামরুপ অধিকার করেন।আরিমত্তর বংশধর শেষ রাজা মৃগাংঙ্ক অপুত্রক হওয়ার কারণে তার মৃত্যুর পর নীলধ্বজ সেন ১৪৪০ সালে গৌড়ের সিংহাসন দখল করেন। তিনি কামরূপ-কামতায় সেন রাজ্য পত্তন করেন। নীলধ্বজের পর তার এক পুত্র চক্রধ্বজ এবং তার পরে চক্রধ্বজের পুত্র নীলাম্বর সেন রাজা হন। নীলধ্বজ সেন গৌড়, কুচবিহার, নিম্ন আসাম ও বৃহত্তর রংপুর প্রভৃতি নিয়ে কামতা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
নীল ধ্বজ এর পর যথাক্রমে চক্রধ্বজ সেন ও নীলাম্বর সেন কামতা রাজ্যের অধিশ্বর হন। রাজা নীলাম্বর তার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। পীরগঞ্জের চতরাহাটের পশ্চিম পার্শ্বে নীল দরিয়ার দূর্গ তাদের অন্যতম। কামতা রাজ্য করতোয়া নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পর্যন্ত ছিল তার রাজ্যের দক্ষিণ সীমা। রাজধানী কামতাপুর থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত যে মেঠো রাজপথটি দৃষ্ট হয়, তা রাজা নীলাম্বর কর্তৃক নির্মিত।সুপ্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র চতরা হাটের পশ্চিম পার্শ্বে এই রাজ পথটি অতিক্রম করে অর্দ্ধ কি.মি. পথ সামনে অগ্রসর হলেই রাজা নীলাম্বরের দূর্গ বা নীল দরিয়ার দূর্গের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্টি গোচর হয়। এখানে ৯২.০০ একর সুবিশাল জলাধার বেষ্টন করে আছে ৪৮ একর স্থল ভাগকে।গৃহ কোন্দলের সুযোগে মুসলমানরা আক্রমণ করায় এই রাজবংশ বেশিদিন শাসন করতে পরেনি। ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নীলাম্বরের মৃত্যুতে তার রাজ্যের অন্ত হয়। সেন বংশীয় রাজা নীলাম্বর কামতেশ্বরী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি কামতেশ্বর নামে পরিচিত ছিলেন।
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস