খিলজি রাজবংশ Khalji dynasty ছিল তুর্কি-আফগান বংশোদ্ভুত মুসলিম রাজবংশ। ১২৯০ থেকে ১৩২০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই রাজবংশ দক্ষিণ এশিয়ার বিরাট অংশ শাসন করে। জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি এই রাজবংশের পত্তন করেন। এটি দিল্লি সালতানাত শাসনকারী দ্বিতীয় রাজবংশ। আলাউদ্দিন খিলজির সময় খিলজিরা সফলভাবে মোঙ্গল আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হয়। খিলজীরা মূলত তুরক আফগান জাতি গোষ্ঠীর যারা মূলত তুর্কি এবং যারা দিল্লিতে আসার আগে আফগানিস্তান বসবাস করত।
জালালুদ্দিন খিলজীর পূর্বসূরীরা হেলমান্দ এবং লামঘান এ ২০০ বছরের ও অধিক সময় ধরে বসবাস করত। তবে Khalji dynasty খিলজীদের তুর্কি জাতিগোষ্ঠীর থেকে আলাদা ভাবা হত।বরং তারা স্থানীয় আফগানদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাদের সাথেই মিশে গিয়েছিল এবং তাদের সংস্কৃতিকে নিজের করে নিয়েছিল।দিল্লি দরবারে তারা আফগান হিসেবেই পরিচিত ছিল।খিলজীরা ছিল দিল্লির মামলুক রাজবংশের সামন্ত এবং দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন এর অধীন। বলবনের উত্তরাধিকারীদের ১২৮৯-১২৯০ সালে হত্যা করা হয় এবং এর পরপরই মামলুকদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে কোন্দল শুরু হয়ে যায়। এই কোন্দলের মধ্যে জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজীর নেতৃত্বে বিদ্রোহ সংগঠিত হয় এবং মামলুকদের বংশের শেষ উত্তরাধিকারী ১৭ বছর বয়সী মুইজ উদ দিন কাইকোবাদ কে হত্যা করেন।
আলাউদ্দিন খিলজী নিজের রাজকোষ কে শক্ত করার জন্য কর ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটান যাতে যুদ্ধ এবং বিশাল সেনাবাহিনীর খরচ মিটাতে পারেন। তিনি কৃষিজ করকে ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ তে নিয়ে যান এবং স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা কর সংগ্রহ করে ভাতা পেত তা ও বন্ধ করে দেন। এছাড়া তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আমীরদের নিজেদের পরিবারের মধ্যে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।তার রাজ্যে জ্ঞানী এবং কবিরা যে ভাতা পেত ,তিনি তা ও বন্ধ করে দেন। আলাউদ্দিন খিলজী সালতানাতের অমুসলিমদের উপর কার ধরনের কর চাপিয়ে দেন,যেগুলা হল : জিজিয়া , খারাজ, কারি এবং চারি। কর দিতে সমস্যা করলে কর কর্মকর্তা রা মারধর করত , হোক সে মুসলিম বা অমুসলিম। এরপর তিনি দরবারের উমরা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা দের সকল ধরনের জমি বাজেয়াপ্ত করেন এবং রাজস্ব নিয়োগে মুসলিম জাগীরদার দের যে ভূমিকা ছিল তাও বাজেয়াপ্ত করেন।
ফলে এমন অবস্থা সৃষ্টি হই যে,সবাই নিজের জীবিকা উপারজনের জন্য এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে, সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা কেউ চিন্তা ও করার সুযোগ পেত না। আলাউদ্দিন খিলজী বাজারের বিভিন্ন শস্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।এবং কারা কারা এর কেনা বেচা করতে পারবে তা ও নির্ধারণ করে দেই। শাহনামা ই মান্ডী নামে বিশেষ বাজার গড়ে উঠে।বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গণ এসব বাজারে একচেটিয়া ব্যবসা এর অধিকার পেতে যায়।এসব ব্যবসায়ী বাদে অন্য ব্যবসায়ীগণ এইসব শস্যের কেনা বেচা করতে পারত না। শহর জুড়ে এসব বাজারে আলাউদ্দিনের নিজস্ব গুপ্তচর ছড়িয়ে দেয়া হত।যদি কেউ নির্ধারিত দামের চেয়ে ভিন্ন দামে কেনা বেচা করত তবে তাকে শাস্তি দেয় হত। এমন কি অনেকের মাংস ও কেটে নেয়া হই।শস্যের উপর অতিরিক্ত করে কারণে একসময় কৃষকেরা কৃষিকাজ তথা শস্য উৎপাদন ছেড়ে দেয়া শুরু করে।এতে এক সময় খাদ্যের স্বল্পতা দেখা যাওয়া শুরু করে। এরপর সালতানাত জুড়ে ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ে।