Janmashtami হিন্দুধর্মে ভগবান বিষ্ণুর একটি বিশেষ রূপ হিসেবে মানা হয় শ্রীকৃষ্ণকে। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীতে সাকার রূপে আবির্ভূত হন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর আবির্ভূত হওয়ার এই দিনটিই কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত। হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে জন্মাষ্টমী (Janmashtami) একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব (Hindu Festival)।
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রে শ্রী কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। হিন্দু ধর্মে জন্মাষ্টমীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মথুরা ও বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন (Krishna Janmashtami) উপলক্ষ্যে মহাধুমধাম করে পালন করা হয়, প্রতিবছর।কথিত আছে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর শৈশব কেটেছে মথুরা ও বৃ্ন্দাবনেই। তাই এদিন শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষ্য়ে ভক্তরা উপবাস করে পুজোপাঠ করেন। অনেকে আবার এই শুভ দিনে একবেলা খাবার খেয়ে উপবাস করেন, আবার কেউ কেউ সারাদিন শুধু ফল গ্রহণ করে উপবাস করেন। শুধু মথুরা, বৃন্দাবন বা দ্বারকায় নয় জন্মাষ্টমীর উৎসব সারাদেশে ধুমধাম করে উদযাপিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে বহু বাড়িতে গোপালকে পুজো করেন গৃহকর্ত্রীরা। ঘরে ঘরে দোলনায় দোল খান গোপাল।
জন্মাষ্টমীর ইতিহাস কৃষ্ণ দেবকী এবং বাসুদেবের অষ্টম সন্তান ছিলেন। পুরানো পুঁথির বর্ণনা এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের গণনা অনুসারে কৃষ্ণের জন্মর তারিখ হল খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২৮ সালের ১৮ জুলাই এবং তার মৃত্যুর দিন খ্রীষ্টপূর্ব ৩১০২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। কৃষ্ণ মথুরার যাদববংশের বৃষ্ণি গোত্রের মানুষ ছিলেন। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন বিষ্ণুর অবতার।তাঁর জন্মের সময় চারিদিকে অরাজকতা, নিপীরণ অকথ্য অত্যাচারের চরম পর্যায়ে ছিল। সেই নৃশংস পরিস্থিতি, অশুভ শক্তি থেকে মানবকূলকে বাঁচাতেই মর্ত্যের তাঁর আগমন। কৃষ্ণের মামা কংসের অত্যাচারে সেই সময় সকলে স্বাধীনতা কী তাই জানতেন না। নিজে বোনেক সন্তানদের হত্য়া করতেও তাঁর মনে এতটুকু মায়া অনুভূত হয়নি। ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছিল, বোনের গর্ভের অষ্টম সন্তানই হবে কংসের পতনের কারণ। সেই বাণী শোনার পর, কংস দেবকী ও বাসুদেবকে বন্দি করে তাঁদের একের পর এক প্রথম ছয় সন্তানকে হত্যা করেন কংস।
কথিত আছে, দেবকীর সপ্তম ভ্রুণটি দেবকীর গর্ভ থেকে রাজকুমারী রোহিনীর গর্ভে স্থানান্তরিত হয়। অষ্টম সন্তানের জন্মের সময় পুরো রাজপ্রসাদ ঘুমিয়ে পড়ে। সেই তালে বাসুদেব সদ্যোজাতকে মাথায় নিয়ে, সমুদ্র পেরিয়ে বৃন্দাবনে নন্দদুলাল ও যশাদার কাছে রেখে আসেন। সেই বিনিময়ে, বাসুদেব একটি শিষুকন্যাকে নিয়ে প্রাসাদে ফেরেন। সেই শিশুকে কংসের হাতে তুলে দিলে দুষ্ট রাজা তাকেও হত্যা করতে উদ্য়ত হন। কিন্তু সেই চেষ্টা করতে গেলে সেই শিশুকন্যা দেবী দূর্গায় পরিণত হন। তিনিই কংসকে নিজের ধ্বংসের কথা বলে সতর্ক করেছিলেন। এইদিন বাড়ির বা স্থানীয় কোনও শিশুকে কৃষ্ণের মূর্তির মত সাজিয়ে স্নান করানো হয়। তবে এইদিন কৃষ্ণের আরাধনা করা হয় একদম সদ্যোজাত শিশুর মত। স্নান করানো, জামা পরানো, মধ্যরাতে একটি দোলনায় রেখে দেওয়া হয়। কথিত আছে, গভীর রাতেই শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই মধ্যরাতে দোলনায় সাজিয়ে গোপাল পুজো করা হয়।
(Janmashtami) জন্মাষ্টমীর দিন রাত ১২টায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এই দিনে শ্রীকৃষ্ণকে দুধ ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। তার পর পরানো হয় নতুন পোশাক। এরপর ময়ূরের পালক, বাঁশি, মুকুট, চন্দন, মালা, তুলসি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয় গোপালকে। ফল, ফুল, মাখন, মাখন, চিনি, মিষ্টি, শুকনো ফল ইত্যাদি নিবেদন করুন। তার পর শ্রীকৃষ্ণের সামনে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালান। শেষে শ্রী কৃষ্ণের শিশুরূপের আরতি করুন। সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করুন।