নদীয়ার শান্তিপুর Santipur একটি সুপ্রাচীন ও ঐতিহাসিক গঙ্গা (সুরধনী) তীরবর্তী জনপদ। প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন এই জনপদ বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতির পীঠস্থান ও বিখ্যাত তাঁত শিল্পের সূতিকাগার। মহাপুরুষ চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষাগুরু অদ্বৈত আচার্যর সাধনপীঠ শান্তিপুর। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণে দেখলে Santipur শান্তিপুর ২৩.২৫° উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮.৪৩° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।এই জনপদের পূর্ব দিকে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা ও ভাগীরথী নদী। দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে রানাঘাট-চাকদা সমভূমি। ভাগীরথী ছাড়াও ইছামতী, চূর্ণি, জলঙ্গী ইত্যাদি নদী এই জনপদের উপর দিয়ে আপন ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। এত নদীর বাহুল্য থাকায় এই অঞ্চলে প্রায়শই বন্যা দেখা যায়।
‘গঙ্গাভক্তি তরঙ্গিনী’ গ্রন্থে আছে গঙ্গার তীরেই Santipur শান্তিপুরের অবস্থান। আবার ‘অদ্বৈতমঙ্গল’ গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘শান্তিপুরে দ্রবময়ী বহে তিনভাগে’ অর্থাৎ গঙ্গা ও তার শাখা-প্রশাখা Santipur শান্তিপুরে নানাদিক থেকে প্রবাহিত হয়েছে। শান্তিপুরের নামকরণ নিয়ে মতানৈক্য আছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী শান্তামণি বা শান্তাপণ বা শান্তাচার্য মুনির নামানুসারে এখানকার নামকরণ হয়েছে। আবার অনেকে বলে থাকেন এই অঞ্চলের মানুষ শান্তিপ্রিয় এবং এখানকার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে শান্তি উপভোগ করতে মানুষ আসতেন বলে এখানকার নাম হয়েছে শান্তিপুর। শান্তিপুর বহু প্রাচীন জনপদ।
এর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শ্রীচৈতন্যদেবের নাম, জড়িয়ে আছে অতীত-বাংলার ঐশ্বর্যমণ্ডিত তাঁতশিল্পের অনুষঙ্গ আর জড়িয়ে আছে প্রাচীন বাণিজ্যের নানা কাহিনি। অদ্বৈতাচার্যের জীবনীমূলক পুঁথি ‘অদ্বৈতমঙ্গল’-এ শান্তিপুর জনপদ এবং এর তাঁতশিল্পের উল্লেখ পাওয়া যায় একটি শ্লোকে- ‘শান্তিপুরে যত ছিল তন্তুবায় / আচার্য প্রাঙ্গণে আসি হরিগুণ গায়’। এমনকি ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থেও দেখা যায় চৈতন্যদেব সন্ন্যাসগ্রহণের পর অদ্বৈতাচার্যের কাছে এলে এই একইভাবে শান্তিপুরের তন্তুবায়গণ সমবেত হন। ফলত বোঝাই যায় Santipur শান্তিপুরের তাঁতশিল্পের ইতিহাস অতি প্রাচীন। মনে করা হয় ১৪০৯ সালে নদীয়ার রাজা গৌর গণেশ দনু মর্দনদেবের আমলে এখানে তাঁতশিল্প শুরু হয় এবং এই তাঁত শিল্প কারখানার আকার নেয় নদীয়ার রাজা রুদ্র রায়ের আমলে।
ইংরেজরা পলাশির যুদ্ধে জয়লাভ করে পাকাপাকিভাবে বাংলার শাসনভার গ্রহণ করলে তাঁত শিল্পের ধ্বংস সাধনের করুণ ইতিহাস রচিত হয়। ইংল্যাণ্ডের কলে তৈরি কম দামের কাপড়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি বাংলার নিজস্ব তাঁতের কাপড়। জানা যায় ১৮১০ সালে শান্তিপুরের তাঁত-কুঠি বন্ধ হয়ে যায়। তবে আজও শান্তিপুর বলতে লোকে তাঁতের শাড়ির পীঠস্থানই বোঝে।বিখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র শান্তিপুরী শাড়ি প্রসঙ্গে বলেছিলেন- ‘‘শান্তিপুরে Santipur ডুরে শাড়ি সরমের অরি/ নীলাম্বরী, উলাঙ্গিনী, সর্বাঙ্গ সুন্দরী।’’ হয়ত সেই অতীত ঐতিহ্য আর নেই, তবু শান্তিপুরী শাড়ির নাম মাহাত্ম্য কিন্তু একই রয়ে গেছে। এখানকার শাড়ির বিশেষত্ব এই শাড়ির পাড়। এখানে তৈরি শাড়ির পাড়ে বিভিন্ন ধরণের জ্যামিতিক নক্সা যেমন দেখা যায় তেমনি বিভিন্ন পৌরানিক ঘটনাবলীও এই শাড়ির পাড়ে স্থান করে নেয়।
এখানকার শাড়ির পাড়ে বিভিন্ন ধরণের নক্সা দেখা যায় যাদের আবার বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন- নীলাম্বরী, গঙ্গা-যমুনা, ভোমরা, বেংকিপা, রাজমহল, চান্দমালা, আঁশ পাড়, বৃন্দাবনী ময়ূর পাড় ইত্যাদি। এই ধরণের শাড়ির ভাঁজের আবার নামও আছে। একে গুটি ভাঁজ বলে। সমগ্র নদীয়া ছিল একসময় বৈষ্ণবদের চারণভূমি, চৈতন্যের নামসংকীর্তনের মধুতান আজও নদীয়ার এই জনপদের বাতাসে ভাসে।শান্তিপুর ছিল শ্রী চৈতন্যের আচার্য অদ্বৈতচার্যের বাসস্থান। সন্ন্যাস গ্রহণের পরে গঙ্গা পেরিয়ে প্রথম শান্তিপুরেই এসেছিলেন শ্রী চৈতন্য। তাঁত-কুঠি ছাড়াও এখানে একসময় প্রচুর রেশম আর নীল চাষ হত। রেশমকুঠির হাতিশালাটি এখনো রয়েছে সুরধুনী গঙ্গার পাশে। অদ্বৈতাচার্যের বংশের নয়টি শাখার বিগ্রহবাড়িগুলি শান্তিপুরেই রয়েছে। অদ্বৈতাচার্যের সাধনক্ষেত্র অদ্বৈতপীঠও রয়েছে শান্তিপুরের অনতিদূরে।
মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের তোপখানার মসজিদ, সৈয়দ সাহেবের মাজারের সঙ্গেই সম্প্রীতির চিহ্ন নিয়ে রয়ে গেছে বহু শিব ও কালী পীঠ। সাহিত্যিক দামোদর মুখোপাধ্যায়, কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্যাভিনেতা ও নাট্যকার অহীন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ কৃতী গুণী মানুষদের একসময় বসবাস ছিল এই শান্তিপুরেই। সর্বোপরি বাংলার আরেক খ্যাতনামা কবি জন্মেছিলেন এই শান্তিপুরের ফুলিয়ায়, এখানে গঙ্গার তীরে বসেই লিখেছেন বাঙালি গৃহস্থের অমৃতকথা ‘রামায়ণ’। নিশ্চিতভাবে তিনি কৃত্তিবাস। ফুলিয়ায় তাঁর বাসগৃহের দক্ষিণ-পূর্বে এখনও একটি খাত দেখা যায়। মনে করা হয় এখান দিয়েই নাকি আগে গঙ্গা প্রবাহিত হত।তাই জনশ্রুতিতে একে ‘রামসাগর’ বলা হয়ে থাকে। শান্তিপুরের কাছে হরিপুর গ্রামে রয়েছে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের পৈতৃক বাসভূমি। সবশেষে জগৎবিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে চিত্রশিল্পী ললিতমোহন সেন, যোগাচার্য শ্যামসুন্দর গোস্বামী, স্যার আজিজুল হক এবং ব্রিটেনে ‘ইণ্ডিয়া হাউস’-এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রী অতুলপ্রসাদ চ্যাটার্জী এই শান্তিপুরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বড়ো হয়েছিলেন এখানকার জল-হাওয়ায়। এখানে সাক্ষরতার হার অনেকটাই বেশি প্রায় ৬৪ শতাংশ।
এই জনপদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ বিদ্যালয় (উচ্চ মাধ্যমিক), শান্তিপুর কলেজ, এমনকি নদীয়ায় শান্তিপুর বি.এড কলেজও শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিখ্যাত। বৈষ্ণব ধর্মের বিস্তারের কারণে শান্তিপুরে বহুকাল ধরেই রাস উৎসবের প্রাধান্য রয়েছে। বড় গোস্বামী বাড়ি, হাটখোলা গোস্বামী বাড়ি, শ্যামচাঁদ মন্দির, খাঁ বাড়ি, গোকুলচাঁদের বাড়ির মতো নানা বিগ্রহবাড়িতে রাস উৎসব হয়। অদ্বৈতাচার্যের কল্যাণে শান্তিপুর হয়ে ওঠে বৈষ্ণব পীঠস্থান আর সেই জন্যেই শ্রাবণ মাসের শুক্লা ত্রয়োদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত এখানে তিনদিন ধরে চলে ঝুলন উৎসব।আগে এই ঝুলন পূর্ণিমা উপলক্ষে সঙ আয়োজন হত।
ঐতিহাসিক দিক থেকে ১২৪৮ সনের এক ঝুলন পূর্ণিমা তিথিতেই এখানে জন্মেছিলেন আচার্য বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। ষোড়শোপচারে রাঁধা রাধাগোবিন্দের ভোগ আর অগণিত মানুষের সমাগমে সমগ্র শান্তিপুর হরিকীর্তনে আচ্ছন্ন থাকে এই উৎসবে। তবে শুধুই রাস উৎসব নয়, শান্তিপুরের উৎসবের তালিকায় আরেকটি সংযোজন করতেই হয় – গাজির বিয়ে। প্রতি বৈশাখ মাসের শেষ রবিবার মালঞ্চ এলাকার মাঠে ইসলাম ধর্মের এই লোক উৎসব পালিত হয়। দুটি বিশাল বাঁশ মাঠের মধ্যে পুঁতে রাখা হয় একহাত দূরত্বে। বাঁশ দুটির গায়ে নানা রঙের কাপড়ের খোল পরানো থাকে যাকে বলে জামা। এই বাঁশ দুটি হল মামা ভাগ্নের প্রতীক, একে ঘিরেই মেলা বসে। জনশ্রুতি বলে এই গাজি মিঞা আজমীর প্রদেশের একজন সাধক মুসলমান যিনি তাঁর বিবাহের দিনেই হিন্দুদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
তাঁর স্মৃতিতেই এই উৎসবের মাধ্যমে তাঁর অসমাপ্ত বিবাহের অনুষঙ্গ তুলে ধরা হয়। ঐ বাঁশগুলি আসলে নকল গাজি। এই উৎসব হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির বার্তা বহন করে চলেছে সেই সময় থেকেই। শান্তিপুরের বিখ্যাত শিল্পগুলির মধ্যে উল্লেখ করতেই হয় ডেলা চিনির কথা। খেজুর গুড় থেকে তৈরি হয় এই লাল রঙের চিনি। একসময় চিনি কারখানায় এই চিনি তৈরি হত এবং নানা জায়গায় রপ্তানি হত। বিদেশের এর প্রভূত চাহিদা ছিল। শান্তিপুরের খাপরা ডাঙা বলে যে রাস্তাটি আছে আজও তা এখানকার চিনি শিল্পের স্মৃতি বহন করেছে কারণ গুড় বহনকারী নাগরীর ভাঙা টুকরো (খাপরা) দিয়ে এই রাস্তা তৈরি হয়েছিল। বাংলার পটশিল্পের ইতিহাসে কালীঘাটের পটের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি শান্তিপুরের পটেশ্বরীও অনন্য নজির গড়েছে। মাটির পটে আঁকা সুদৃশ্য পটেশ্বরীর শিল্পীদের প্রাচীনকালে খুবই কদর ছিল। এই পটেশ্বরী আসলে কালী, রাসের সময় একইসঙ্গে এর পূজা হয়। এছাড়াও এখানে চাদর পিতলের ঠিলই, পাউলি, কমণ্ডলু, ঠাকুর পূজার ঘট তৈরির কুটিরশিল্প অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এখনও কাঁসারী গৌর দত্তের নাম শান্তিপুরের মানুষ মনে রেখেছে। তাঁতশিল্পের পাশাপাশি এখানে শাল, আলোয়ান, ধুতি, কাপড় কাচা ও ধোয়ার শিল্পও গড়ে উঠেছে যেমন সুপ্রাচীন টেরাকোটা শিল্প শান্তিপুরকে স্থাপত্য সৌন্দর্যে সমাহিত করেছে তেমন। শান্তিপুর মেয়েদের খোঁপার জন্যও একসময় বিখ্যাত ছিল। এই নিয়ে ছড়াও আছে: ‘উলার মেয়ের কলকলানি,/ শান্তিপুরের চোপা,/ গুপ্তিপাড়ার হাতনাড়া, আর/ বাঘনাপাড়ার খোঁপা।’ শান্তিপুরকে কেন্দ্র করে নানাসময়ে নানাবিধ প্রবাদ তৈরি হয়েছিল যেগুলি স্থানীয় লোকসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি প্রবাদ এরকম – ‘তাঁতী গোঁসাই পচাভুর এই তিন নিয়ে শান্তিপুর’। অর্থাৎ এর মধ্যে শান্তিপুরের তাঁতশিল্প, বৈষ্ণব পীঠস্থানের কথা যেমন বলা হল তেমনি পচাভুর বলতে ঝুরঝুরে গুড়কে বোঝানো হল। শান্তিপুরের গুড় থেকে চিনি তৈরির শিল্পও ছিল জনপ্রিয়।
এখানে দর্শনীয় স্থানের তালিকা বিশাল। সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সেনাপতি গাজী ইয়ার মহম্মদের তৈরি তোপখানার মসজিদ, ইঁটের তৈরি আটচালার শ্যামচাঁদ মন্দির, দানবীর মরহুম শরিবত সাহেবের মসজিদ, শৈশবতলা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চব্বিশটি বিগ্রহবাড়ি যার মধ্যে বড় গোস্বামীবাড়ি প্রধান। এছাড়াও অবশ্যই দেখতে হয় অদ্বৈতপীঠ, আগমেশ্বরী মন্দির, গোকুলচাঁদ মন্দির, সূত্রাগড়ে গণেশ মন্দির, জলেশ্বরের শিবমন্দির, পার্শ্ববর্তী ফুলিয়ায় কৃত্তিবাসের জন্মভিটে। শান্তিপুর নিয়ে কথা হবে আর শান্তিপুরের নিখুঁতির কথা হবে না তাই আবার হয় নাকি! বাংলার মিষ্টি ঐতিহ্যে শান্তিপুরের নিখুঁতি একটি বিখ্যাত নাম। নিখুঁতির জন্ম মনে করান হয় ১৮৫৬ সাল নাগাদ।
শান্তিপুর গো-ভাগাড় মোড়ে অবস্থিত এক ময়রার মেয়ে যে তাঁর নিখুঁত রূপের জন্য ‘নিখুঁতি’ নামে পরিচিত ছিল সে একদিন বাবার অনুপস্থিতিতে দোকানে বসাকালীন তেলে মাখা ছানা লম্বা করে পাকিয়ে কড়ায় ভেজে শেষ অবধি বাবার ভয়ে তাড়াহুড়ো করে রসের গামলায় ডুবিয়ে দেয়। পরে সেই মিষ্টি নিখুঁতির বাবা এক পরিচিত খদ্দেরকে বেচে দিলে সেই খদ্দের মিষ্টির অসামান্য স্বাদে খুশি হয়ে ঐ ময়রাকে মিষ্টির নাম জানতে চাইলে ময়রা নিজের মেয়ের নামটাই বলে দেন। জন্ম নেয় নিখুঁতি। সব মিলিয়ে শান্তিপুর ইতিহাসকে আঁকড়েই বেঁচে আছে। তবে প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শনগুলি কত নিপুণভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। ইতিহাসবিস্মৃত বাঙালি শান্তিপুরকে হেরিটেজের মর্যাদা দেবে নাকি কালের গহ্বরে সমস্ত নিদর্শন তলিয়ে যাবে অবহেলায় তা সময় বলবে। ||
শান্তিপুরের প্রায় ৭৯.১৫ % মানুষ হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী। এখানে ইসলামে ২০.২৫ %, খ্রিস্ট ধর্মে ০.০৪ %, শিখধর্মে ০.০২ %, বৌদ্ধ ধর্মে ০.০১ %, জৈন ধর্মে ০.০১ % মানুষ বিশ্বাসী। এছাড়া অন্যান্য ধর্মে ০.৪২ % মানুষ বিশ্বাসী ও বিবৃতি নেই এমন মানুষ ০.১১ %। ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে শান্তিপুর শহরের জনসংখ্যা হল ১৩৮,১৯৫ জন।[৪] এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং নারী ৪৯%। এখানে সাক্ষরতার হার ৬৪%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৬৯% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৫৮%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে শান্তিপুর এর সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ১২% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্র হল নদিয়া জেলার একটি বিধানসভা কেন্দ্র। ভারতের সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে ৮৬ নম্বর শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি শান্তিপুর পুরসভা, বাবলা, বাগানছরা, বেলগরিয়া-১, বেলগরিয়া-২, গয়েশপুর ও হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি শান্তিপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত। শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি ১৩ নম্বর রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের (তফসিলি জাতি) অন্তর্গত। আগে এই কেন্দ্রটি নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য ছ’বারের বিধায়ক অজয় দে’কে পরাজিত করেছিলেন। অরিন্দম ভট্টাচার্য একজন তরুণ নেতা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন বিশেষজ্ঞ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিকে হারিয়ে জয়লাভ করেছিলেন।
তিনি ১০৩,৫৬৬ টি ভোট পেয়ে ৫২.২৫ শতাংশ মার্জিনে ঐতিহাসিক জয়লাভ করেছিলেন। ২০১৪ সালের উপনির্বাচনে বিধায়ক অজয় দে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তার আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন কংগ্রেসের অজয় দে করেছিলেন। ২০০৬, ২০০১, ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের অজয় দে Santipur শান্তিপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। সিপিআইএমের শান্তনু চক্রবর্তী, নির্দলের বাদল বসাক, আরসিপিআইয়ের বিমলানন্দ মুখোপাধ্যায় ও আরসিপিআইয়ের অসীম ঘোষকে পরাজিত করেছিলেন।
পাশাপাশি জনতা পার্টির জ্ঞানেন্দ্রনাথ প্রামাণিককে ওই বছরগুলিতে পরাজিত করেছিলেন। ১৯৭২ সালে কংগ্রেসের আষ্মাজা দে এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন। তার আগে ১৯৭১ সালে বিমলানন্দ মুখোপাধ্যায় জিতেছিলেন। ১৯৬৯ সালে আরসিপিআইয়ের এম. মোকশাদ আলি জয়ী হয়েছিলেন।১৯৬৭ সালে সিপিআইএমের কে পাল জয়ী হয়েছিলেন।১৯৬২ সালে নির্দলের কানাই পাল এই আসনে জয়ী হয়েছিেন।১৯৫৭ সালে কংগ্রেসের হরিদাস দে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৫১ সালে দেশের প্রথম নির্বাচনে কংগ্রেসের শশিভূষণ খান শান্তিপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন।
শান্তিপুর Santipur শহর বাস ও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে রাজ্য রাজধানী কলকাতা ও জেলা সদর কৃষ্ণনগরের সাথে যুক্ত। কলকাতা হতে শান্তিপুরের ওপর দিয়ে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অতিক্রম করেছে। রেলপথে শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন হতে সরাসরি শান্তিপুর বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত। অতীতে Santipur শান্তিপুর – কৃষ্ণনগর – নবদ্বীপ ঘাট ন্যারো গেজ রেলপথ ছিল। অধুনা তা ব্রড গেজে রূপান্তরিত হয়েছে। ভাগীরথী নদীর অপর পাড়ে বর্ধমান জেলার কালনা ও হুগলী জেলাস্থিত গুপ্তিপাড়ার সাথে শান্তিপুর নৌকা পথে যুক্ত।