হৈসল সাম্রাজ্য hoysala samrajya in bengali ছিল দক্ষিণ ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য কন্নড় সাম্রাজ্য। খ্রখ্রিস্টীয় ১০ম থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে অধুনা ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চল এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। প্রথম দিকে hoysala samrajya in bengali হৈসল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল বেলুরু শহর। পরে তা হৈলেবিডু শহরে স্থানান্তরিত হয়। কন্নড় লোককথায় সল নামে এক যুবকের কাহিনি পাওয়া যায়। অঙ্গডির বাসন্তিকা দেবীর মন্দিরে সল একটি সিংহকে আঘাত করে তার জৈন গুরু সুদত্তকে রক্ষা করেন। হৈলে কন্নড় ভাষায় ‘আঘাত’ শব্দটির প্রতিশব্দ হল ‘হৈ’।
তা থেকেই ‘হৈ-সল’ নামটির উৎপত্তি। বিষ্ণুবর্ধনের বেলুরু উৎকীর্ণ লিপিতে এই কিংবদন্তিটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে সলের এই কাহিনিটির মধ্যে বেশ কয়েকটি অসংগতি থাকায় এটিকে নিছক একটি লোককথা বলেই ধরে নেওয়া হয়। সম্ভবত টালাকাডের যুদ্ধে রাজা বিষ্ণুবর্ধন চোলেদের পরাজিত করার পর এই কিংবদন্তিটির উদ্ভব ঘটে বা এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। কারণ হৈসল রাজপ্রতীকে দেখা যায় কিংবদন্তি যোদ্ধা সল একটি বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।বাঘ ছিল চোলেদের রাজপ্রতীক। প্রথম দিকের উৎকীর্ণ লিপিগুলিতে হৈসলদের যাদবের বংশধর এবং হৈসল বংশকে ‘যাদব বংশ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও প্রাচীন সূত্র থেকে উত্তর ভারতের যাদবদের সঙ্গে হৈসলদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইতিহাসবিদগণ হৈসল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতাদের মালেনাডু কর্ণাটকের আদি বাসিন্দা বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, একাধিক উৎকীর্ণ লিপিতে এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতাদের ‘মালেপারোলগন্ড’ বা ‘মালে দলপতিদের প্রভু’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই কন্নড় উপাধিটি হৈসল রাজারা তাঁদের উৎকীর্ণ লিপির রাজসাক্ষরে সগর্বে ব্যবহার করতেন। সমসাময়িক কালের কন্নড় ও সংস্কৃত সাহিত্য থেকেও জানা যায় যে, তাঁরা অধুনা কর্ণাটক রাজ্য নামে পরিচিত ভূখণ্ডেরই আদি বাসিন্দা ছিলেন। হৈসলদের প্রথম পারিবারিক তথ্যসূত্রটি ৯৫০ খ্রিস্টাব্দের। এই সূত্র থেকে দলপতি হিসেবে আরেকাল্লার নাম পাওয়া যায়। এরপর মারুগা ও প্রথম নৃপ কাম রাজা হন। পরবর্তী শাসক মুণ্ডের পর দ্বিতীয় নৃপ কাম রাজা হন। তিনি ‘পেরমনডি’ ইত্যাদি উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।তা থেকে বোঝা যায়, পশ্চিম গঙ্গ রাজবংশের সঙ্গে গোড়ার দিক থেকেই তাদের মিত্রতা ছিল। এই ধরনের সাধারণ সূচনা থেকে হৈসল রাজবংশ পশ্চিম চালুক্যদের এক শক্তিশালী সামন্ত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।বিষ্ণুবর্ধনের সুদূর প্রসারী সামরিক অভিযানগুলির ফলে হৈসল রাজ্য প্রথম সত্যকারের রাজ্যের মর্যাদা লাভ করেছিল।১১১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চোলেদের কাছ থেকে গঙ্গবডি অধিকার করে নেন এবং বেলুরু থেকে হৈলেবিডুতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
বিষ্ণুবর্ধন একটি স্বাধীন সাম্রাজ্য স্থাপনের ব্যাপারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তার এই আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন তার পৌত্র দ্বিতীয় বীর বল্লাল। তিনি ১১৮৭-১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে হৈসলদের চালুক্য অধীনতা থেকে মুক্ত করেন।এই ভাবে পশ্চিম চালুক্যদের এক সামন্ত শক্তি হিসেবে হৈসলদের ইতিহাস সূচিত হলেও, ধীরে ধীরে বিষ্ণুবর্ধন, দ্বিতীয় বীর বল্লাল ও তৃতীয় বীর বল্লালের মতো শক্তিশালী রাজার হাত ধরে কর্ণাটকে তারা নিজস্ব সাম্রাজ্য স্থাপনে সমর্থ হন।এই সময় উপদ্বীপীয় ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য লাভের উদ্দেশ্যে হৈসল, পাণ্ড্য, কাকতীয় ও দেবগিরির সেউন যাদব রাজবংশ – এই চারটি রাজশক্তির মধ্যে সংগ্রাম চলছিল। দ্বিতীয় বীর বল্লাল চোল রাজ্য আক্রমণকারী আগ্রাসী পাণ্ড্যদের পরাজিত করেন। তিনি ‘চোলরাজ্যপ্রতিষ্ঠাচার্য’, ‘দক্ষিণ চক্রবর্তী’ ও ‘হৈসল চক্রবর্তী’ উপাধি ধারণ করেছিলেন।
কন্নড় লোককথা অনুসারে, তিনিই বেঙ্গালুরু শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১২২৫ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ হৈসলরা অধুনা তামিলনাড়ু ভূখণ্ডে পদার্পণ করেন। এই সময় তারা শ্রীরঙ্গমের নিকটস্থ কন্নানুর কুপ্পাম শহরটিকে প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদা দেন। এই ভাবেই দক্ষিণ ভারতের রাজনীতি হৈসল নিয়ন্ত্রণে আসে এবং দাক্ষিণাত্যের দক্ষিণাঞ্চলে হৈসলদের একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপিত হয়।দ্বিতীয় বীর নৃসিংহের পুত্র বীর সোমেশ্বর পাণ্ড্য ও চোলেদের থেকে ‘মামাডি’ সম্মান লাভ করেন। পাণ্ড্য রাজ্যেও হৈসলরা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।পরবর্তীকালে পাণ্ড্য বিদ্রোহের ফলে তামিল দেশের যে অঞ্চলগুলি হৈসলদের হাতছাড়া হয়েছিল, সেগুলি ১৩শ শতাব্দীর শেষ ভাগে তৃতীয় বীর বল্লাল পুনরায় অধিকার করেন। এর ফলে রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ অংশগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়।
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস