চের রাজবংশ Chera dynasty ছিল দক্ষিণ ভারতের অধুনা কেরল রাজ্য এবং Tamil Nadu তামিলনাড়ুর কিয়দাংশের আদি ইতিহাসের অন্যতম প্রধান রাজবংশ। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের প্রথম ভাগের কয়েক শতাব্দীকাল চের, উরাইয়ুরের চোল ও মাদুরাইয়ের পাণ্ড্য রাজবংশ প্রাচীন তামিলকমের তিন প্রধান রাষ্ট্রশক্তি (মুবেন্তর) হিসেবে পরিচিত ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে চতুর্থ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাম্রাজ্যগুলো ছিল পাণ্ড্য, চের ও চোল।
ভারতের আদি মধ্যযুগীয় রাজ্যসমূহ বলতে বোঝায় খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতে উদ্ভূত রাজনৈতিক শক্তিগুলিকে। ২৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিমুক কর্তৃক সাতবাহন রাজবংশের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভারতে আদি মধ্যযুগীয় রাজন্যবর্গের শাসনের সূত্রপাত ঘটে। এই যুগ ভারতের ধ্রুপদি যুগ নামে পরিচিত।
এই যুগে বিশ্বের সামগ্রিক অর্থসম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে এক চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমগ্র প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে ভারত। এই “আদি মধ্যযুগ” মোটামুটি ১,৫০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে মুসলিম সালতানাতগুলির উত্থান (১২০৬ সালে দিল্লি সুলতানির প্রতিষ্ঠা) এবং দক্ষিণ ভারতে চালুক্য চোল রাজ্যের পতনের (১২৭৯ সালে তৃতীয় রাজেন্দ্র চোলের মৃত্যু) সঙ্গে সঙ্গে ভারতে আদি মধ্যযুগীয় রাজন্যবর্গের শাসনের সমাপ্তি ঘটে।
Chera dynasty চেরদের রাজত্ব ছিল ত্রিবাঙ্কুরের উত্তরাংশ ও মালাবার অঞ্চলে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে পাণ্ড্যরা এই রাজ্যের ত্রিবাঙ্কুর অধিকার করে। এরপর দীর্ঘদিন চের দুর্বল রাজ্য হিসেবেই থেকে যায়। খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে চেরদের উত্থান ঘটে নেডুঞ্জেরল-আদম।দক্ষিণভারতে অধিকাংশ স্থান দখল করে নেন। এছাড়া কদম্ব রাজ্য জয় করেন এবং গ্রিক ও রোমান নৌবাহিনীকে পরাজিত করে রাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষা করেছিলেন। পরে রোমের রাজাদের সাথে কূটনৈতিক হৃদ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
নেডুঞ্জেরল-আদমের মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্র সেরান-সিঙ্গভুবান রাজত্ব লাভ করেন। সেরান-সিঙ্গভুবানও পিতার মতো প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করেছেন। এর পরবর্তী চের রাজাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে পাণ্ড্য ও চোলরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে এবং এদের ক্রমাগত আক্রমণে চের রাজ্য বিলীন হয়ে যায়। তামিল সাহিত্য থেকে জানা যায়, চেররা বহুবার উত্তর ভারত আক্রমণ করেছিল।
এ সকল যুদ্ধে চেররা সাময়িক কিছু সুবিধা লাভ করলেও শেষ পর্যন্ত উত্তর ভারতের অধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয় নি। ভৌগোলিক দিক থেকে চের দেশের অবস্থান ভারত মহাসাগরে সমুদ্র বাণিজ্যের পক্ষে অনুকূল ছিল। বিভিন্ন সূত্র থেকে চেরদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও গ্রিকো-রোমান বণিকদের মশলা (বিশেষত গোলমরিচ) বিনিময়ের কথা জানা যায়। আদি যুগের চেরদের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী – আনুমানিক খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দী) কেন্দ্র তামিলনাড়ুর কারুরে এবং কেরলের ভারত মহাসাগরীয় উপকূলের মুচিরি (মুজিরিস) ও তোন্ডি (তিন্ডিস) বন্দরে অবস্থিত ছিল বলে জানা যায়।
তাঁরা দক্ষিণে আলেপ্পি থেকে উত্তরে কসরগোডের মধ্যবর্তী মালাবার উপকূল শাসন করত। পালঘাট গিরিবর্ত্ম, কোয়েম্বাটুর, সালেম ও কোল্লি মালাই এই অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। সঙ্গম যুগে (আনুমানিক খ্রিস্টীয় প্রথম-চতুর্থ শতাব্দী) চের রাজবংশ কোয়েম্বাটোর অঞ্চল শাসন করত। এই অঞ্চলটি ছিল মালাবার উপকূল ও তামিলনাড়ুর মধ্যে প্রধান বাণিজ্যপথ পালঘাট গিরিবর্ত্মের প্রবেশদ্বার।