
red fort history
ভারতবর্ষের ইতিহাসে দিল্লী red fort history in bengali শহরটির আলাদা এক গুরুত্ব রয়েছে। এই শহরটির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে কত জানা-অজানা ইতিহাস। মোঘল রাজত্ব থেকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সামাজ্যের নানা স্মৃতি বিজড়িত এক শহর এই দিল্লী। দিল্লীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার একটি রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লা। ভারতের রাজধানী দিল্লীতে অবস্থিত এই লাল কেল্লাকে ঘিরে আছে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই কেল্লা এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা গল্প আজও ঐতিহাসিকদের অবাক করে দেয়।
red fort history in bengali মোঘল সম্রাট শাহজাহান অনেক দিন ধরে ভাবছিলেন তার রাজধানী আগ্রা থেকে স্থানান্তর করার জন্য। সভাসদদের পরামর্শ মোতাবেক তিনি সিদ্ধান্ত নেন আগ্রা থেকে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে তা দিল্লীতে প্রতিষ্ঠা করবেন। তার জন্য দরকার সম্রাটের বাসস্থান নির্মাণ। কারণ এখান থেকেই তো তাকে ভারত উপমহাদেশের এই বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করতে হবে।তাই ডাক পড়লো মোঘল সাম্রাজ্যের দুই প্রতিষ্ঠিত স্থাপত্যশিল্পী ওস্তাদ আহমেদ ও ওস্তাদ হামিদের।
তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হলো সম্রাটের বাসস্থান এমনভাবে নির্মাণের যার দুটি প্রবেশ পথ থাকবে এবং এই প্রবেশ পথ ভারতীয় উপমহাদেশের দুটি প্রধান শহরের দিকে মুখ করে থাকবে। অর্থাৎ প্রবেশ পথের একটি হবে লাহোরের দিকে এবং অন্যটি দিল্লীর দিকে মুখ করে।সম্রাটের নির্দেশনা মতো কাজে নেমে পড়লেন এই দুই স্থাপত্যশিল্পী। ১৬৪৮ সাথে এই কেল্লা নির্মাণের কাজ শেষ হয়। এর জন্য সময় লেগেছিল প্রায় দশ বছর। পুরনো দিল্লীর যমুনা নদীর তীরে সম্রাটের জন্য নির্মিত হয় এক নতুন রাজকীয় ভবন। সেই সাথে প্রতিষ্ঠিত হয় সম্রাট শাহজাহানের নতুন রাজধানী।
সম্রাটের এই বাসভবনের নাম কেন লাল কেল্লা হলো তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। সম্রাট শাহজাহান এর নাম দিয়েছিলেন কিলা-ই-মুবারক। সম্রাটের পরিবারের সদস্যরা যেহেতু এখানে বসবাস করবেন তাই সম্রাট এই নামকরণ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই নামের পরিবর্তে ‘লাল কেল্লা’ বা ‘রেড ফোর্ট’ নামেই বেশি পরিচিতি লাভ করে। অনেকে মনে করে থাকেন, যেহেতু সম্পূর্ণ লাল বেলে পাথর ও ইট দিয়ে তৈরি এই কেল্লা, সেই কারণেই এর নাম দেওয়া হয়েছে লাল কেল্লা।লাল কেল্লার বিভিন্ন দর্শনীয় জিনিসের মধ্যে একটি হলো ‘ইন্ডিয়ান ওয়ার মেমোরিয়াল মিউজিয়াম’। লাল কেল্লার নহবতখানার কিছুটা অংশ এবং পুরাতন মমতাজ মহলকে নিয়ে ১৯১১ সালে এই জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে। যেসব ভারতীয় সৈনিক বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই জাদুঘরে যুদ্ধকালীন সৈনিকদের ব্যবহৃত নানা অস্ত্রশস্ত্র, কামান, তলোয়ার, বর্ম, পোশাক ইত্যাদি সব রাখা আছে। এককথায়, এই জাদুঘর সেই সময়ের ইতিহাস জাদুঘরে আসা দর্শকদের সামনে তুলে ধরে।
স্থাপত্যশিল্পীরা শুধু কেল্লা নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হননি। এর সুরক্ষার কথাও চিন্তা করেছিলেন। সেজন্য কেল্লার চতুর্দিকে নির্মাণ করা হয় বিশাল পরিখা। এর পানি আসতো যমুনা নদী থেকে। কেল্লার সুরক্ষায় পরিখায় রাখা হতো কুমির। তারপরও যদি কেউ সেই পরিখা অতিক্রম করতো তারপরও তার পক্ষে সম্ভব হতো না কেল্লার ভিতরে প্রবেশ করা। কারণ কেল্লার দেওয়াল এমন পিচ্ছিল রাখা হতো যাতে কেউ দেওয়াল বেয়ে উঠতে না পার। আর এই পিচ্ছিল বিশাল উঁচু খাড়া দেওয়াল বেয়ে প্রবেশ করা এক কথায় অসম্ভব ছিল। তারপরেও কেল্লার সুরক্ষায় সারা দিন-রাত পালাক্রমে প্রহরী নিয়োজিত রাখা হতো।