১৭ হাজার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করল কেন্দ্র । সাইবার অপরাধ এবং ডিজিটাল গ্রেফতারের মতো ঘটনা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পদক্ষেপ করল। কোন অ্যাকাউন্টগুলি থেকে এই ধরনের সাইবার প্রতারণার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে, এ বার সে রকমই বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সূত্রের খবর, ১৭ হাজার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এগুলির বেশির ভাগই পরিচালনা করা হচ্ছে কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, তাইল্যান্ডের মতো বেশ কয়েকটি দেশ থেকে।
গত কয়েক মাস ধরে নানা রকম সাইবার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে দেশ জুড়ে। তার মধ্যে যে বিষয়টি জনমানসে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে তা হল ডিজিটাল গ্রেফতারি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদীও সরব হয়েছেন। এমন অভিযোগ বার বার প্রকাশ্যে আসতেই, সেগুলি পর্যবেক্ষণ করে মন্ত্রক। সূত্রের খবর, সেই নজরদারি চালানোর সময় বেশ কিছু সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টের হদিস পায় তারা। তখনই হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষকে ওই অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধের নির্দেশ দেয় কেন্দ্র।
সূত্রের খবর, ভারতীয় নাগরিকদের অনেক ক্ষেত্রে লাওস, কম্বোডিয়া, মায়ানমারের মতো দেশগুলিতে কাজের লোভ দেখাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। তার পর অনলাইনের মাধ্যমে তাঁদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার শাখার এক সূত্রের খবর, প্রতি দিন ডিজিটাল গ্রেফতারির মাধ্যমে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। এ বছরে প্রথম ১০ মাস, অর্থাৎ অক্টোবর পর্যন্ত সাইবার অপরাধীরা ২১৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
অক্টোবর পর্যন্ত ৯২ হাজার ৩৩৪টি সাইবার অপরাধের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে দেশে। দেশ জুড়ে একের পর এক ডিজিটাল গ্রেফতারির ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে এই প্রতারণা কী ভাবে এড়ানো যাবে, কী করতে হবে, তার কয়েকটি উপায়ও বলে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি বার্তা দিয়েছিলেন, ডিজিটাল গ্রেফতারি বলে কিছু হয় না। দেশের কোনও আইনে এই ধরনের গ্রেফতারির কথা বলা নেই। নাগরিকদের এই ধরনের ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র।
কিন্তু তার পরেও ডিজিটাল গ্রেফতারির ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন অনেকেই। নামে গ্রেফতার শব্দটি থাকলেও গ্রেফতারির সঙ্গে দূরদূরান্তেও কোনও সম্পর্ক নেই এই শব্দবন্ধের। এটি আসলে সাইবার প্রতারণার একটি ফাঁদ। অনলাইনে জালিয়াতি চক্রের পাণ্ডাদের হাতে নতুন ‘অস্ত্র’ হয়ে উঠেছে এটি। ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’র প্রতারকেরা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সরকারি সিবিআই, নারকোটিক্স শাখা, আরবিআই, ট্রাই, শুল্ক এবং আয়কর আধিকারিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফোন করে। যাঁকে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর কোনও অভিযোগের কথা বলা হয়। কখনও আবার তাঁর কোনও পরিজনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এর সপক্ষে তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত ‘প্রমাণ’ রয়েছে। এক বার ফাঁদে পা দিলেই ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ করা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে।