
Mayapur Iskcon temple
মায়াপুর ইসকন মন্দির Mayapur Iskcon temple শ্রীচৈতন্যের স্মৃতিবিজড়িত নদীয়ার Mayapur মায়াপুরের খ্যাতি এখন নবদ্বীপের থেকেও খানিক বেশি। বহু বহু কাল ধরে শাক্ত আর বৈষ্ণবদের সংঘাত চলেছিল বাংলায়। তবু উভয় সম্প্রদায়ের সহাবস্থান টিকে ছিল। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের যে কয়টি পীঠস্থান রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে তার মধ্যে মায়াপুর (Mayapur) অন্যতম প্রধান। কলকাতার খুব কাছেই দু-এক দিনের সপ্তাহান্তের ছুটিতে মায়াপুর ঘুরে আসা যায় সহজেই। নবদ্বীপের মতো প্রাচীনত্বের গন্ধ না থাকলেও বেশ সাজানো গোছানো স্বচ্ছ-সুন্দর এই মায়াপুরের প্রশান্তিময় পরিবেশ কিংবা ইস্কন মন্দির প্রাঙ্গনের সৌন্দর্য ও শান্তি সব মিলিয়ে মায়াপুর ভ্রমণ হয়ে উঠবে অনবদ্য উপভোগ্য এক যাত্রা। নদীয়া জেলার ছোট্ট এক জনপদ মায়াপুর ভাগীরথী নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত। জলঙ্গী নদী এসে মিশেছে এই ভাগীরথী নদীতে। এখানে তাই জলের রঙও আলাদা।
নদীয়ার নবদ্বীপের একেবারে সংলগ্ন এই মায়াপুর জনপদটি। ঐতিহাসিক দিক দিয়ে মায়াপুরের গুরুত্ব অপরিসীম। সেন বংশের বল্লাল ঢিপি ও চাঁদ কাজীর সমাধির জন্য একসময় এই স্থানের নাম ‘মিঞাপুর’ ছিল বলে জনশ্রুতি আছে যা থেকে পরবর্তীকালে ‘মায়াপুর’ নামের উৎপত্তি হয়। তবে অনেকেই মনে করেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান হিসেবে মায়াপুর বিখ্যাত৷ তবে শ্রীচৈতন্যের জন্ম মায়াপুরে নাকি নবদ্বীপে এ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক রয়েছে ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতমহলে। চৈতন্যের মৃত্যুর কিছুকাল পর থেকেই রচিত সমস্ত চৈতন্যজীবনী গ্রন্থে নবদ্বীপকেই তাঁর জন্মস্থান বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু মায়াপুরের ধারণাটি পাওয়া গেছে একমাত্র ঘনশ্যাম দাসের লেখা ‘ভক্তিরত্নাকর’ কাব্যে।
উনিশ শতকের শেষদিকে এই মায়াপুরে মুসলমান কৃষকদের বাস ছিল। সেই সময় নদীয়া জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কেদারনাথ দত্ত তাঁর বৈষ্ণবশাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের দ্বারা কেবলমাত্র নবদ্বীপের ব্রাহ্মণদের কাছে গুরুত্ব পাবার কারণেই ‘ভক্তিরত্নাকর’ কাব্যের অনুসরণ করে মায়াপুরকে শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান হিসেবে ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছিলেন।জাতিতে কায়স্থ কেদারনাথ দত্ত বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হয়ে ভক্তিবিনোদ ঠাকুর নামে মায়াপুরে চৈতন্যের একটি অস্থায়ী মন্দির তৈরি করেন। এমনকি পরে তাঁর পুত্র বিমলাপ্রসাদ দত্ত ১৯১৮ সালে সেখানেই একটি স্থায়ী চৈতন্য মন্দির গড়ে তোলেন। মায়াপুরে আজকে যে বিরাট ইস্কনের মন্দির গড়ে উঠেছে তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন অভয়চরণ দে।
ভক্তিসিদ্ধান্তের কাছে দীক্ষিত হয়ে তিনি প্রথমে আমেরিকায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস’ বা ‘ইসকন’ (ISKCON)। তারপরে ১৯৭২ সালে মায়াপুরে এসে তিনি এখানেও একটি ইস্কন মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তী প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এই ইস্কন মন্দিরের সৌজন্যেই মায়াপুর শ্রীচৈতন্যের জন্মভূমি হিসেবে বহুল প্রচারিত হয়েছে। মায়াপুরের আরেকটি বিশেষত্ব হল এখানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ আসে রথে করে। এই প্রসঙ্গে একটি সুন্দর পৌরাণিক কাহিনী আছে।অতীতে মায়াপুর এবং রাজাপুর পাশাপাশি দুটি গ্রাম ছিল যার মধ্যে রাজাপুরের বেশিরভাগ বাসিন্দাই ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। প্রায় পাঁচশো বছর আগে এক পুরোহিত স্বপ্ন দেখেন রাজাপুর থেকে মায়াপুরে যাবার ইচ্ছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার। আবার সেখান থেকেও তাঁরা রথে চড়েই ফিরে আসবেন। এই স্বপ্নাদেশ মেনেই প্রতি বছর রথযাত্রা উৎসব পালিত হয় মায়াপুরে।
মায়াপুর বলতেই সর্বপ্রথম যে ছবিটি চোখে ভাসে তা হল Mayapur Iskcon temple ‘ইস্কন’ মন্দির যার আসল নাম চন্দ্রোদয় মন্দির। দেশ দেশান্তর থেকে পর্যটকেরা আসেন কেবলমাত্র এই মন্দিরটির টানে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে জড়িত নানান কাহিনী রয়েছে এই মায়াপুরে। কৃষ্ণ-ভক্তদের কাছে মায়াপুর তাই অতি প্রিয় একটি স্থান। সকলে মিলে একসঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামে উপাসনা করেন এখানে। মন্দিরের সৌন্দর্য এবং বিগ্রহ দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্র। সম্প্রতি এখানে Mayapur Iskcon temple ইস্কনের নির্মীয়মান নতুন মন্দিরের মাথায় স্থাপিত হয়েছে একটি বিশালাকার চক্র।মন্দির প্রাঙ্গণের এক প্রশান্তিময় পরিবেশই পর্যটকদের আকর্ষণ করে। চন্দ্রোদয় মন্দিরে সন্ধ্যারতির সময় হরিনাম সংকীর্তনের যে পবিত্র পটভূমি তৈরি হয় তা মনকে মোহাবিষ্ট করতে বাধ্য। ট্রেনে মায়াপুর যেতে চাইলে হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কাটোয়া লোকাল ধরে নবদ্বীপের আগের স্টেশন বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে নেমে পড়লে সুবিধে হয়। কিন্তু যেহেতু বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে সব ট্রেন দাঁড়ায় না, তাই সরাসরি নবদ্বীপ স্টেশনে নেমে পড়াই ভালো।
তারপর স্টেশন থেকে কিছুটা হেঁটে লঞ্চঘাট, সেখান থেকে লঞ্চে চেপে ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যেই মায়াপুরের হুলোর ঘাটে পৌঁছে যাওয়া যায়। লঞ্চ ছাড়া খেয়া নৌকাতেও নদী পেরোনো যায়। তারপর সেখান থেকে টোটোয় অথবা পায়ে হেঁটে Mayapur Iskcon temple মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরে পৌঁছানো যায়। অন্য আরেকটি উপায় আছে। শিয়ালদা থেকে গেলে কৃষ্ণনগর লোকাল ধরে প্রথমে কৃষ্ণনগরেও নেমে পড়া যায় এবং তারপর স্টেশনের পাশ থেকেই সরাসরি টোটো ধরে পৌঁছে যাবেন নবদ্বীপ ঘাটে এবং সেখান থেকে খেয়া নৌকায় জলঙ্গি নদী পেরিয়ে মায়াপুর ইস্কন মন্দির চলে আসা যায়।খেয়া নৌকার ভাড়া নেয় মাত্র দু টাকা। খেয়াঘাট থেকে সামান্য পথ হেঁটেই চলে যাওয়া যায় Mayapur Iskcon temple মন্দিরে। এক্ষেত্রে স্টেশন থেকে টোটোয় মাথাপিছু তিরিশ-চল্লিশ টাকা লাগে। গাড়ি করে কলকাতা থেকে ৩৪ নং জাতীয় সড়কপথে রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর পেরিয়ে মোটামুটি চার ঘন্টার মধ্যেই এখানে গাড়ি পার্কিং করার নির্দিষ্ট জায়গা আছে। ২৪ ঘণ্টা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ১০০ টাকা নেয়। মূল মন্দিরের সামনে গাড়ি আসে না। তবে সবথেকে সুবিধা হল কলকাতায় মায়াপুর ভ্রমণ অফিসে যোগাযোগ করে সেখান থেকে এসি বাসে আসা।
একই দিনে এসে আবার সেই বাসেই ফেরা যায়, অথবা একদিন থেকে পরদিনও ফেরা যায়। কলকাতা থেকে প্রতিদিন ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে এই এসি বাস ছাড়ে এবং বেলা ১১টার সময় মায়াপুরে পৌঁছায়। ফেরার বাস আবার মায়াপুর থেকে ছাড়ে বিকেল ৪টের সময়। তবে এক্ষেত্রে আগে থেকে অফিসে যোগাযোগ করে নেওয়া জরুরি। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী মায়াপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভাল জায়গা তাঁদের নিজস্ব গেস্টহাউসগুলি যা অনলাইনেও বুক করা যায়। গেস্টহাউসগুলির নাম যথাক্রমে শঙ্খভবন, বংশীভবন, ঈশোদ্যানভবন, গীতা ভবন ও গদাভবন। বিভিন্ন মানের ও দামের ঘর আছে। এর মধ্যে মন্দিরের সবচেয়ে কাছে রয়েছে শঙ্খভবন। এর বারান্দা থেকে সন্ধ্যারতিও দেখা যায়।২০২১ সালের তথ্য অনুসারে শঙ্খ ভবনের ঘরভাড়া ৮০০ টাকা। মন্দির থেকে ৫-৭ মিনিটের হাঁটাপথের দূরত্বে ঈশোদ্যান ভবন, গদাভবন এবং বংশীভবন। গীতাভবনটি মন্দির থেকে অনেকটাই দূরে। তবে এখানে ঘরভাড়া মাথাপিছু ধরা হয় না, একটি ঘরে সর্বোচ্চ ছয়জন থাকতে পারে। পরিবার নিয়ে থাকার জন্য এই গেস্টহাউসগুলি উপযুক্ত। ইস্কন কমপ্লেক্সের বাইরে কিছু হোটেল থাকলেও সেগুলি পরিবার নিয়ে থাকার অযোগ্য, সেখানে না থাকাই শ্রেয়। ছুটির দিনে আসতে চাইলে আগে থেকে ঘর বুক করে রাখা জরুরি।
তাছাড়া প্রাঙ্গণের মধ্যেই একেবারে টিনের চাল দেওয়া কিছু ছোট ছোট কুটির আছে যেমন নিত্যানন্দ কুটির, চৈতন্য কুটির ইত্যাদি। এগুলির ভাড়া মাত্র ২০০ টাকা। কুটিরে থাকার জন্য ভিতরে দুটি খাট আর কম্বল দেওয়া থাকে। একটি ঘরে একসঙ্গে সাত-আটজনও থাকতে পারে, কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কুটিরে থাকলে শৌচকর্মের জন্য বাইরে এসে একটি কমন বাথরুম কমপ্লেক্স ব্যবহার করতে হয়।Mayapur Iskcon temple মায়াপুরের ইস্কন মন্দির প্রাঙ্গণেই অবশ্য দ্রষ্টব্য স্থান রয়েছে অনেক। মূল চন্দ্রোদয় মন্দির দিয়ে শুরু করে একে একে সব ঘুরে দেখতে পারেন। চন্দ্রোদয় মন্দির : এটিই মায়াপুরের মূল মন্দির। এই মন্দিরের সান্ধ্যকালীন আরতি অবশ্য দ্রষ্টব্য। মন্দিরের মূল বিগ্রহ রয়েছে রাধা-কৃষ্ণ এবং জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার। এখানে শ্রীকৃষ্ণের জীবন কাহিনী প্রদর্শিত হয়েছে সুন্দর চিত্র ও মূর্তি সহযোগে। এই প্রদর্শনী দেখার সময় সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা এবং বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা।
অন্য সময় মন্দিরে প্রবেশ করতে পারলেও প্রদর্শনী দেখা যাবে না এবং মূল বিগ্রহটিও পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকবে। সমাধি মন্দির : Mayapur Iskcon temple ইস্কন মন্দিরের মূল ফটকের ডান দিকে এই সমাধি মন্দিরে প্রতিষ্ঠাতা শীল প্রভুপাদের বর্ণাঢ্য স্মৃতিমন্দির দেখা যায়। মন্দিরের দোতলায় প্রভুপাদের ব্যবহৃত জিনিসের সংগ্রহশালা দেখা যায়। সকাল ৭.৩০ থেকে বেলা ১.০০টা পর্যন্ত এবং পরে আবার দুপুর ৩.৩০ থেকে রাত ৮.৩০ পর্যন্ত এই মন্দির দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। মন্দির দর্শনের জন্য টিকিট কাটা জরুরি।ভজন কুটির : মন্দিরে প্রবেশের পথে বাঁদিকেই খড়ের ছাউনি দেওয়া এই মন্দিরে বহু দেশি-বিদেশি ভক্তের সমাবেশ দেখা যায়। গোশালা : ইস্কনের মন্দির প্রাঙ্গণের ভিতরেই রয়েছে নিজস্ব গোয়ালঘর যেখানে প্রায় ২০০টি গরু রয়েছে। এই গরুর দুধ থেকে উৎপাদিত ঘি, দই, মাখন, ক্রীম, পনির সবই গোশালা সংলগ্ন কাউন্টারে বিক্রি হয়। মন্দিরের বৈষ্ণব ভক্ত ও সেবায়েতরাই এই গরুদের সেবাযত্ন করে থাকেন। এছাড়া নির্মীয়মান বিশালাকায় মন্দিরটিও দেখতে পারেন বাইরে থেকে।
ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে আশেপাশের অনেকগুলি স্থান রয়েছে দেখার মত। যেমন শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠ, অদ্বৈত ভবন, শ্রীবাস অঙ্গন বা খোল ভাঙার ডাঙা, ভক্তি সারঙ্গ গোস্বামী মহারাজ মঠ, পুণ্যিপুকুর শ্যামকুণ্ড, একই চত্বরে রাধাকুণ্ড ইত্যাদি। করেছিলেন। রিকশা ভাড়া করে বা পায়ে হেঁটে ঘুরে নেওয়া যায় এই মন্দিরগুলি। এছাড়া সাইটসিইং হিসেবে Mayapur Iskcon temple মায়াপুরের নিকটবর্তী বামুনপুকুর গ্রামে অবস্থিত বল্লালঢিপি দেখে আসতে পারেন। সেন রাজবংশের রাজা বল্লালসেনের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে যিনি দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে বাংলায় শাসন করতেন।অন্যদিকে মায়াপুরে ঘুরতে এসে একেবারে কাছেই নবদ্বীপের মহাপ্রভুর বিগ্রহ মন্দির, বুড়ো শিব মন্দির ও হরিসভা, পোড়ামা তলা সহ নবদ্বীপের অন্যান্য ঐতিহ্যসম্বলিত স্থানগুলি ঘুরে দেখতে পারেন সাইটসিইং হিসেবে। বছরের যেকোন সময় মায়াপুরে আসা যায়। তবে দোলপূর্ণিমা, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, রাস ইত্যাদি উৎসবের সময় মায়াপুর সুসজ্জিত হয়ে ওঠে আলাদাভাবে। কিন্তু এই সময় দর্শনার্থীদের ভিড়ও বেশি হয়। তাই ভিড় এড়াতে হলে এই উৎসবের দিনগুলি বাদ দিয়ে আসতে হবে মায়াপুরে। মায়াপুর মন্দির দর্শন করে সেখানে প্রসাদ না খাওয়া অর্থহীন।
মন্দিরের প্রসাদ অত্যন্ত সুস্বাদু এবং খরচও কম। এছাড়াও সকালের জলখাবার থেকে শুরু করে রাতের খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে মন্দির চত্বরের মধ্যেই। তবে সব খাবারই নিরামিষ। দুপুরে খাবার জন্য ১২টার মধ্যে কুপন সংগ্রহ করতে হবে। গীতা ভবন, গদা ভবনেই খাবার পাওয়া যায়, যার জন্য নির্দিষ্ট মূল্যের কুপন আগে থেকে কাটতে হয়। খাবারের পদ প্রতি দিন পরিবর্তিত হয়, তবে কমবেশি একই রকম থাকে। রাত্রের খাবারে ভাতের সঙ্গে রুটিও পরিবেশন করা হয়। বাইরে কোথাও না খেয়ে, মন্দির প্রাঙ্গণের ভিতরেই সুস্বাদু ও নিরাপদ খাবার খাওয়া উচিত। তাছাড়া সকালে প্রতিদিন অন্নভোগ দেওয়া হয় ১১টা থেকে, তা দিয়ে সকালের জলখাবার সেরে ফেলা যায়।মন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যেই নিরামিষ খাবারের দোকানও রয়েছে কিছু যেখানে কেক, পেস্ট্রি, প্যাটিস, সিঙারা ইত্যাদি পাওয়া যায়। মন্দির চত্বরের আশেপাশে কেনাকাটার জন্য বহু দেশি-বিদেশিদের দোকান রয়েছে। দোকানদারেরা সকলেই বৈষ্ণব। সাধারণত পুজোর দ্রব্য, জপের মালা, গৌরাঙ্গের বা কৃষ্ণের ছবি, মূর্তি, প্রভুপাদের অনূদিত গীতা কিংবা তাঁর লেখা অন্য ধর্মীয় বই-পত্র, কাঠের টুকটাক জিনিস, মণিহারি ইত্যাদি সবই এখানে পাওয়া যায়। দরদাম করে সাধ্যের মধ্যে উপহার দেবার জন্য জিনিসও কিনতে পারেন এখান থেকেই। ট্রিপ ট্রিপস কীভাবে যাবেন – মায়াপুর ও ইস্কন মন্দির দর্শনের জন্য কলকাতায় ক্যামাক স্ট্রিটে ইস্কনের অফিস থেকে এসি বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে।
প্রতিদিন সকাল ৫টা ১৫ মিনিটে কলকাতা থেকে ছাড়ে ও সকাল ১১ টায় মায়াপুর পৌঁছায়। ঐ দিনই আবার বিকেল ৪টে থেকে কলকাতা ফেরার বাস ছাড়ে মায়াপুর থেকে। ঐ দিনই ফিরতে পারেন অথবা পরের দিনও ফিরতে পারেন। ট্রেনের ক্ষেত্রে শিয়ালদা এবং হাওড়া থেকে কাটোয়া লোকাল ধরে নবদ্বীপ স্টেশনে নেমে সেখান থেকে কিছুটা হেঁটে লঞ্চঘাট। লঞ্চে চেপে ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যেই মায়াপুরের হুলোর ঘাটে পৌঁছে যাওয়া যায়। লঞ্চ ছাড়া খেয়া নৌকাতেও নদী পেরোনো যায়।তারপর সেখান থেকে টোটোয় অথবা পায়ে হেঁটে মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরে পৌঁছানো যায়। শিয়ালদা থেকে ট্রেনে করে প্রথমে কৃষ্ণনগরেও নেমে পড়া যায়, তারপর কৃষ্ণনগর থেকে প্রথমে টোটোয় নবদ্বীপ ঘাট এবং তারপর খেয়া পেরিয়ে মায়াপুর। কলকাতা থেকে মায়াপুরের সড়ক পথে দুরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। গাড়িতে করে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর পেরিয়ে সাড়ে ৪ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন মায়াপুর। কোথায় থাকবেন – মন্দির প্রাঙ্গণের ভিতরেই গদা ভবন, শঙ্খ ভবন, গীতা ভবন ইত্যাদি বিভিন্ন মানের ও দামের থাকার জায়গা আছে।
তাছাড়া খুব কম খরচের কিছু কুটিরও আছে। কি দেখবেন – Mayapur Iskcon temple মন্দির প্রাঙ্গণের ভিতরে চন্দ্রোদয় মন্দির, ভজন কুটির, গোশালা আর নির্মীয়মাণ বিরাট মন্দিরটি অবশ্য দ্রষ্টব্য। তাছাড়া মন্দিরের বাইরে বল্লাল সেনের ঢিপি, রাধা ও শ্যামকুণ্ড, মহাপ্রভুর জন্মস্থান, মহাপ্রভুর মাসির বাড়ি এবং নবদ্বীপ শহর ও সেখানকার উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলিও সাইটসিইং হিসেবে দেখে আসতে পারেন।কখন যাবেন – বছরের যে কোন সময়েই মায়াপুর যাওয়া যায়, তবে শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মদিন, দোল পূর্ণিমা কিংবা রাস উৎসবের সময় মায়াপুর মায়াময় হয়ে ওঠে, প্রচুর দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। তাই ভিড় এড়াতে চাইলে এই উৎসবের দিনগুলি এবং সরকারি ছুটির দিনগুলি বাদ দিয়ে আসতে পারেন। সতর্কতা – মন্দির চত্বর বা তার আশেপাশের অঞ্চলে বর্জ্য পদার্থ ফেলবেন না বা বাইরে থেকে আমিষ খাবার নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করবেন না।
কোন রকম মাদকদ্রব্য সর্বাগ্রে বর্জনীয়। মূল মন্দিরের সদর দরজা বন্ধ হওয়ার নির্দিষ্ট সময় আছে, তা জেনে নিয়ে তবেই বাইরে ঘুরতে বেরোনো উচিত। মন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যে অযথা শোরগোল না করাই উচিত। চন্দ্রোদয় মন্দিরের আরতি ও বিগ্রহ দর্শন এবং ভোগ বিতরণের নির্দিষ্ট সময়সূচি আছে তা মাথায় রাখবেন। পরিবার নিয়ে আরামে থাকতে হলে মন্দিরের ভিতরে যে কোন হোটেলে থাকাই শ্রেয়।কুটিরগুলি ছাড়া সব হোটেলেই গিজারের ব্যবস্থা আছে, ফলে শীতে এলেও কষ্ট হবে না। দুপুরের ও রাতের খাবার খাওয়ার কুপন নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া হয়, ওই সময়ের মধ্যেই কুপন সংগ্রহ করে নিতে হবে। বাইরে বেরোতে হলে কুপন সংগ্রহ করে নিয়েই বেরোনো উচিত। বিশেষ পরামর্শ – মন্দিরের ভিতরে ঘোরার ক্ষেত্রে সঙ্গে বয়স্ক মানুষ থাকলে ভক্ত বৈষ্ণবদের চালিত টোটো করে ঘুরতে পারেন আর বাইরে সাইটসিইং-এর ক্ষেত্রে টোটো রিজার্ভ করে ঘোরাই ভালো। খাদ্যরসিকেরা ইস্কন মন্দিরের গোশালার বাইরের কাউন্টার থেকে সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত খাঁটি ঘি সংগ্রহ করতে পারেন।
মায়াপুরে কী কী দেখার আছে? মায়াপুরে কি দেখতে এবং করতে পারেন: Mayapur Iskcon temple ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা এসি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের সমাধি মন্দির গোপীনাথ মন্দির, কৃষ্ণের সপার্ষদ গোপীনাথকে উৎসর্গ করা একটি মন্দির চন্দ্রোদয় মন্দির, কৃষ্ণের শৈশবের বিনোদনের জন্য উৎসর্গীকৃত একটি মন্দির ভক্তিবিনোদ ঠাকুর আশ্রম, 19 শতকের বৈষ্ণব সাধক ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের বাড়ি।
কেন মায়াপুর বিখ্যাত? মায়াপুর রিট্রিট পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় অবস্থিত মায়াপুর হল একটি শ্রদ্ধেয় তীর্থস্থান এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের একটি প্রধান আধ্যাত্মিক কেন্দ্র। চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান হিসাবে পরিচিত, 15 শতকের একজন সাধক এবং এই আধ্যাত্মিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, মায়াপুর সারা বিশ্ব থেকে দর্শনার্থী এবং ভক্তদের আকর্ষণ করে।
মায়াপুর ইসকন মন্দিরের ইতিহাস কী? Mayapur Iskcon temple ইসকনের সদর দপ্তর মায়াপুরে অবস্থিত এবং হিন্দুধর্মের মধ্যে এটিকে অনেক অন্যান্য ঐতিহ্যের দ্বারা একটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান হিসাবে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের অনুসারীদের কাছে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, যাকে কৃষ্ণের বিশেষ অবতার হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
কলকাতা থেকে মায়াপুর ট্রেনে কিভাবে যাবেন? মায়াপুরে কোনও রেলওয়ে স্টেশন নেই। তবে, আপনি হাওড়া জংশন থেকে ট্রেন ধরতে পারেন। ট্রেনটি নবদ্বীপ ধামের উপর দিয়ে যাবে, যেখানে আপনি থামতে পারবেন। রেলওয়ে স্টেশন থেকে, আপনি সহজেই মায়াপুরে পৌঁছাতে পারবেন যা প্রায় 30 কিমি দূরে অবস্থিত।
কোন শহরকে মায়াপুরী বলা হয়? মায়াপুর – মায়াপুর বা শ্রীমায়াপুর নদিয়া জেলায় অবস্থিত একটি গ্রাম ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র৷ এটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান নামে খ্যাত৷ মায়াপুর ভাগীরথী নদীর পূর্বপাশে অবস্থিত। মায়াপুরের কাছেই জলঙ্গী নদী ভাগীরথী নদীতে মিশেছে।
ইসকন কী? কি কাজ করে এই সংগঠন … ইসকন (ISKCON)-এর পূর্ণরূপ হলো আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (International Society for Krishna Consciousness), যা একটি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন এবং আধ্যাত্মিক সমাজ। তারা শ্রী কৃষ্ণের উপাসনা করে এবং একটি সেবামূলক সংস্থা। সারা পৃথিবী জুড়ে ইসকনের ৬৫০টারও বেশি মন্দির আছে। ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে শ্রীল এ.
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মন্দির কোনটি? বর্তমান বৃহত্তম মন্দির Angkor Wat হল একটি মন্দির কমপ্লেক্স যা Angkor , কম্বোডিয়ায় 162.6 হেক্টর (402 একর) পরিমাপের জায়গায় অবস্থিত। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করে।
নবদ্বীপ শহর কেন বিখ্যাত? নবদ্বীপ চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান ও সন্ন্যাসপূর্ব লীলাক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। নবদ্বীপ পৌরসভা ১৮৬৯ সালে স্থাপিত। বাংলায় সেন রাজাদের আমলে (১১৫৯ – ১২০৬) নবদ্বীপ ছিল রাজধানী। ১২০২ সালে রাজা লক্ষ্মণসেনের সময় বখতিয়ার খলজি নবদ্বীপ জয় করেন, যা বাংলায় মুসলিম সাম্রাজ্যের সূচনা করে।
নদীয়া কি জন্য বিখ্যাত? নদিয়া জেলা ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় নদিয়া হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য একটি তীর্থস্থান। রাজা বল্লাল সেন নদিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন বাংলার হিন্দু রাজারা গৌড়ের পাশাপাশি নদিয়াতেও অবস্থান করতেন। রাজা বল্লাল সেন তাঁর শাসনামলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাগীরথী নদীতে তীর্থস্নান করার উদ্দেশ্যে আসতেন।
নবদ্বীপের পূর্ব নাম কী ছিল? নবদ্বীপ ( / ˌ n æ b ə ˈ d w iː p / ), এছাড়াও নবদ্বীপ বানান, প্রাচীনভাবে নদীয়া বা নুদিয়া , ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। এটি হিন্দুদের দ্বারা একটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত এবং এটি চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান।
নদিয়া জেলার পুলিশ কয়টি? প্রশাসনিক উপবিভাগ কৃষ্ণনগর জেলা সদর দপ্তর। এই জেলায় ১৯টি থানা , ২টি মহিলা এবং ১টি সাইবার ক্রাইম থানা, ১৮টি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ব্লক, ১১টি পৌরসভা, ১৮৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত (৩১১৪টি সেট) এবং ২৬৩৯টি গ্রাম রয়েছে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হতে ক্লিক করুন Aaj Bangla হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।