প্রাথমিক স্কুলে ৩০০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী রাখা যাবে না। সরকারের নির্দেশে চিন্তায় বহু প্রাথমিক বিদ্যালয় । উচ্চ প্রাথমিকে সীমা ৫০০ জন। প্রাক প্রাথমিকে ৫০ জন ভর্তি করা যাবে লটারির মাধ্যমে। এ বছর ২৩ থেকে ২৮ ডিসেম্বর প্রাথমিকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তার আগে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে এই সরকারি নির্দেশনামা আসায় মাথায় হাত পড়েছে শিক্ষকদের। শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রেও এই নিয়মেই চলবে ভর্তি প্রক্রিয়া। রাজ্য শিক্ষা দফতরের এই নির্দেশ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকদের হাত ঘুরে প্রতিটি প্রাথমিকের চক্রে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের হাতে পৌঁছেছে সোমবার।
মঙ্গলবার তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলিকে। মুর্শিদাবাদের জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক অপর্ণা মণ্ডল বলেন, “সরকারি নির্দেশ এটাই। এটা কড়া ভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে। তবে কোনও স্কুলে বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার থাকলে অভিভাবকেরা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে একটি অতিরিক্ত পড়ুয়া ভর্তির তালিকা পাঠালে তা অনুমোদন করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া পড়ুয়াদের দু’টি শিফট করা যাবে।” বহু স্কুল এর ফলে সমস্যায় পড়েছে। শঙ্করপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫-৬টি গ্রামের ছেলেমেয়ের ভরসা।
১১১১ জন ছাত্রছাত্রী। প্রাক প্রাথমিকে দেড়শো জন। এ বার ৫০ জন কী করে করবেন ভেবে পাচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক। রঘুনাথগঞ্জ পূর্ব চক্রের এস আই স্বপ্নেন্দু বিশ্বাস বলেন, “জেলার ৪১টি চক্রেই তিনশোর বেশি পড়ুয়া আছে বহু স্কুলেই। ৬০০ থেকে ৮০০ পড়ুয়া সংখ্যার স্কুলও কম নেই। দুটো শিফট করা যাবে। কিন্তু তার জন্য শিক্ষক দরকার। সব দিক থেকে কিছুটা সমস্যা তো হবেই।”
সম্প্রতি উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে শিক্ষা দফতর। এ বার টাকা দেওয়ার সঙ্গে কোথায় এই টাকা খরচ করবে তা ২৩ দফা নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়ে দিল রাজ্য। আর এখানেই শিক্ষক মহলের বক্তব্য বছর শেষে মাত্র রাজ্যের তরফে দেওয়া হচ্ছে ২৫ শতাংশ। স্কুলগুলি এই সামান্য টাকায় চক ডাস্টার থেকে শুরু করে বিদ্যুতের বিল কী করে মেটাবে। তার উপর কোথায় খরচ করা হবে টাকা, তাও ঠিক করে দিচ্ছে সরকার। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘শিক্ষাবর্ষের শেষে কম্পোজ়িট গ্রান্ট-এর মাত্র ২৫ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা দেওয়া হবে কি না সেটা নিয়ে ও শিক্ষা দফতর কিছু বলছে না। তার ওপর টাকা খরচের এত রকম শর্ত চাপিয়ে দিলে তো স্কুলগুলো অসুবিধায় পড়বে। আমরা দাবি করছি রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করে অবিলম্বে বাকি টাকা স্কুলগুলোকে মিটিয়ে দিক।’’
বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথ উদ্যোগে এই কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা দিয়ে থাকে। সেখানে এ বছর এক টাকাও দেয়নি কেন্দ্র। রাজ্য সরকার তার ভাগের ২৫ শতাংশ দিচ্ছে। প্রায় আট হাজারও বেশি স্কুলকে এই টাকা দেওয়া হবে। এতে সরকারের খরচ হবে প্রায় ২২ কোটি টাকা। সমগ্র শিক্ষা মিশনের তরফ থেকে দেওয়া নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে স্কুল পরিচালনার জন্য অনুদান প্রাপ্ত স্কুলগুলির শৌচাগার ও স্কুল পরিষ্কার, পানীয় জলের সুবিধা এবং ল্যাবরেটরি উন্নয়নের জন্য আরও ১০ শতাংশ বরাদ্দ করা হবে। শুধু তাই নয়, বহু স্কুলের বৈদ্যতিক বিলের খরচা অনেক বেশি থাকে। সেই সমস্ত স্কুলগুলিকে বছরের অতিরিক্ত টাকা দেওয়া হবে।
বিকাশ ভবনের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘এই টাকা রাজ্য এবং কেন্দ্র যৌথ ভাবে দেয়। রাজ্য তাদের ভাগের কম্পোজ়িট গ্রান্টের আংশিক টাকা দিয়েছে। কেন্দ্র কিছুই দেয়নি। বাকি অংশের টাকা দেওয়ার নিয়ম বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।’’ এই টাকা কোথায় খরচ করতে পারবে তার ২৩ দফা গাইডলাইন দিয়েছে সমগ্র শিক্ষা মিশন। গাইডলাইন অনুযায়ী—স্কুল বাড়ির ভাড়া, ক্লাসের প্রয়োজনীয় চক ডাস্টারের মতো অন্যান্য জিনিস কেনা, হাত পরিষ্কার করার সাবান, অফিস স্কুল ও শৌচালয় পরিষ্কার করা, ক্লাসরুমের পরিকাঠামো উন্নয়ন, পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা-সহ একাধিক বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে, শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মীদের মোবাইল বিল, গাড়ির খরচা বাবদ বিল এই সমস্ত কোন খরচ দেওয়া হবে না এই কম্পোজ়িট গ্রান্টে। উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিকে কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা দিলেও এই খাতে শিকে ছেঁড়েনি প্রাথমিক স্কুলগুলির জন্য। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের মতে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের চেয়েও প্রাথমিক স্কুলে সবচেয়ে বেশি দরকার এই টাকা। এ প্রসঙ্গে, উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য কেন্দ্রের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্জলী যাত্রার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার ইচ্ছে মতো ক্লাবগুলিকে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে বহু সময় অনুদান দিয়ে থাকে।
যদি টাকা না থাকে তা হলে সমগ্র মিশনের টাকা থেকে কী ভাবে ট্যাবের টাকা দিচ্ছে সরকার?’’ কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ স্কুলগুলির দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ এবং রাজ্য দেয় ৪০ শতাংশ। পড়ুয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে স্কুলকে এই টাকা দেওয়া হয়। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০০-এর বেশি, তাদের বছরে এক লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা। যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০০-এর কম, কিন্তু ২৫০-এর বেশি, সেখানে ৭৫ হাজার টাকা এবং যে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০ থেকে ২৫০-এর মধ্যে, সেখানে ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা।
যে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০-র আশেপাশে, সেই স্কুলের ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। উপরোক্ত পরিমাণের মাত্র ২৫ শতাংশ দেওয়ার ফলে বছর শেষে যৎসামান্য টাকা পাচ্ছে স্কুলগুলি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির পড়ুয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে তালিকা পাঠানো হয়েছে ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসারদের (ডিআই) কাছে। সেই তালিকা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, পড়ুয়ার সংখ্যা যেখানে ৩০-এর মধ্যে তাদের দেওয়া হবে ২৫০০ টাকা, ৩০ থেকে ১০০র মধ্যে পড়ুয়ার সংখ্যা সেখানে ৬২৫০ টাকা, ১০০ থেকে ২৫০ যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা সেখানে ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ২৫০-১০০০ পড়ুয়া হলে দেওয়া হবে ১৮৭৫০ টাকা। আর হাজারের বেশি যাদের পড়ুয়ার সংখ্যা, তাদের দেওয়া হবে ২৫ হাজার টাকা করে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হতে ক্লিক করুন Aaj Bangla হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।