কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ Krishnananda Agamavagisha (জন্ম: আনুমানিক ১৬০০-১৬১০ খ্রি:) ছিলেন সপ্তদশ শতকের এক উচ্চস্তরের তন্ত্রসাধক, যিনি নদিয়া জেলার নবদ্বীপ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তন্ত্রশাস্ত্রে সুপণ্ডিত এই তন্ত্রসাধক ১৭০ টি গ্রন্থ থেকে নির্যাস গ্রহণ করে বিখ্যাত “তন্ত্রসার” গ্রন্থটি রচনা করেন এবং সমগ্র দেশে এই গ্রন্থটি সমাদৃত হয়। কৃষ্ণানন্দ ছিলেন উদারচেতা, ধর্মবিষয়ে তাঁর কোনো গোঁড়ামি ছিল না। তাই তন্ত্রসার গ্রন্থে শৈব, গণপত্য, শাক্ত, বৈষ্ণব ও সৌর সম্প্রদায়ের তন্ত্রগ্রন্থগুলির সার গ্রহণ করে সন্নিবেশন হয়েছে।
তিনি তন্ত্র বিষয়ে তত্ত্ববোধিনী নামে আরও একটি গ্রন্থ লেখেন। তাঁর প্রকৃত নাম কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য। তন্ত্র সাধনার আগম পদ্ধতিতে সিদ্ধি লাভ করে তিনি ‘আগমবাগীশ’ উপাধি পান। তিনি বাংলায় কালী সাধক Krishnananda Agamavagisha কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন শ্রীশ্রী রামপ্রসাদ সেনের তন্ত্রগুরু। নবীন লেখক অভীক সরকারের এবং ইনকুইজিশন গ্রন্থের ছোটগল্প অনুসারে পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ একটি বাংলা আধিভৌতিক রহস্যকাহিনী মূলক চলচ্চিত্র জিও স্টুডিওর ব্যানারে প্রকাশিত হয়েছে অক্টোবর, ২০১৯ সালে। এই চলচ্চিত্রে কৃষ্ণানন্দর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলা তথা নবদ্বীপের সুপণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিকে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মহেশ্বর গৌড়াচার্য। কৃষ্ণানন্দ বাংলায় “কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য্য” নামেও পরিচিত। বিভিন্ন তথ্য থেকে পাওয়া যায় যে তিনি ১৬০০ থেকে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ ১৬৩০ থেকে ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বিখ্যাত তন্ত্রসার গ্রন্থটি রচনা করেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, রাঢ়দেশে তন্ত্রশাস্ত্র রচনাকারদের মধ্যে আগমবাগীশের রচনা সবচেয়ে মার্জিত।
সুপ্রাচীন কাল থেকেই তন্ত্র সাধনক্ষেত্র হিসাবে নবদ্বীপের বিশেষ খ্যাতি ছিল। শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই নবদ্বীপের তন্ত্র সাধনা সাধারণ মানুষের কাছে বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থা চলেছিল কৃষ্ণানন্দের সময়কাল পর্যন্ত। এই সব দেখে সাধকশ্রেষ্ঠ ও পণ্ডিতপ্রবর Krishnananda Agamavagisha কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ শুদ্ধাচারে তন্ত্র সাধনা প্রতিষ্ঠিত করা এবং ঘরে ঘরে শক্তি আরাধনা প্রবর্তন করার জন্য় কৃত সংকল্প হলেন। কৃষ্ণানন্দ তাঁর সাধনলব্ধ ঐশী শক্তির দ্বারা দৈবাদেশ পান ও সেই মতো তিনি মা কালীর শান্ত রূপ কল্পনা করেন। সেই রূপ দক্ষিণাকালী নাম খ্যাত। ভক্তিনম্র হৃদয়ে প্রাণের আকুতি নিয়ে সহজ সরল পদ্ধতিতে মায়ের সেই মঙ্গলময়ীরূপী বিগ্রহ তৈরি করে তিনিই বাংলার ঘরে ঘরে মা কালীর পূজার প্রচলন করেন।
প্রচলিত মত ও ইতিহাসবিদদের সমর্থন অনুযায়ী, Krishnananda Agamavagisha কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে প্রথম দক্ষিণাকালীর রূপ কল্পনা করেন। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মা কালীর রূপেই সম্পূর্ণ বাংলা ও তার বাইরে কালী পূজা হয়। তার আগে কালীমূর্তি পূজার প্রচলন ছিলনা।
কৃষ্ণানন্দ দীপান্বিতা অমাবস্যায় একই দিনে ছোট আকারের কালীমূর্তি নির্মাণ করে রাত্রে পূজার্চনা শেষে ভোরে বিসর্জন দিতেন। এই কারণে লোকে বলতো “আগমবাগীশি কাণ্ড”। কথাটি প্রবাদে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁর পূজিত দেবী আগমেশ্বরী মাতা নামে প্রতিবছর নবদ্বীপে পূজিত হয়।
কৃষ্ণানন্দ মা কালীর রূপ কীভাবে পেলেন, এই নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে এক প্রচলিত শ্রুতি পাওয়া যায়। ক’দিন ধরেই পুজোয় বসে কালীসাধক কৃষ্ণানন্দ বায়না করেন, “ এ বার সাকার রূপে দেখা দাও মা, মূর্তি গড়ে তোমার অর্চনা করি! ” সন্তানের আকুতি মা ফেলতে পারলেন না। বিধান দিলেন, মহানিশার অবসানে প্রাতঃমুহূর্তে কৃষ্ণানন্দ প্রথম যে নারীমূর্তি দর্শন করবেন, সেই মূর্তিই হবে ইচ্ছাময়ীর যথার্থ সাকার মূর্তি। পরের দিন ভোরে গঙ্গাস্নানে বেরিয়ে কৃষ্ণানন্দ দেখলেন, এক দরিদ্র বধূ গাছের গুঁড়ির উপর নিবিষ্ট মনে ঘুঁটে দিচ্ছেন। বাঁ হাতে গোবরের মস্ত তাল, ডান হাত উঁচুতে তুলে ঘুঁটে দিচ্ছে।
নিম্নবর্গীয় কন্যা, গাত্রবর্ণ কালো, বসন আলুথালু, পিঠে আলুলায়িত কুন্তল, কনুই দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে সিঁদুর লেপ্টে গেছে। এ হেন অবস্থায় পরপুরুষ কৃষ্ণানন্দকে দেখে লজ্জায় জিভ কাটলেন সেই বধু।— এই ছবিটিই মানসপটে এঁকে গঙ্গামাটি নিয়ে মূর্তি গড়তে বসলেন কৃষ্ণানন্দ। কৃষ্ণানন্দের এই মূর্তিই পরবর্তীতে দুই বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠল। এছাড়াও কথিত আছে, কৃষ্ণানন্দ কোনো এক ধনী নবশাকের বাড়ি দুর্গাপূজা করতে গিয়েছিলেন; সেখানে দুর্গাপূজার শেষে ওই বাড়ির কর্তা নিজের অহংবোধের বশবর্তী হয়ে কৃষ্ণানন্দকে বলেন যে তিনি প্রতিমার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেননি। কৃষ্ণানন্দ ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন যে তিনি যদি প্রাণপ্রতিষ্ঠা না করে থাকেন এক্ষুনি তার প্রমাণ দেবেন; কিন্তু প্রমাণ হওয়ার পরে ওই গৃহের কেউ আর জীবিত থাকবেনা। কর্তা সম্মতি জানালে কৃষ্ণানন্দ একটি কুশি ছুঁড়ে দেন দেবী প্রতিমার ঊরুতে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমার ঊরু ফেটে রক্তপাত হয়; এবং ওই গৃহের প্রত্যেকেও মুখে রক্ত উঠে তৎক্ষণাৎ মারা যান।
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস