আচার্য বালকৃষ্ণ Acharya Balkrishna ১৯৭২ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন উত্তরপ্রদেশের (আধুনা উত্তরাখণ্ড) হরিদ্বারে নেপালের স্যাংজা হতে আগত অভিবাসী সুমিত্রা দেবী এবং জয় বল্লভ সুবেদীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে নেপালে। পরবর্তীতে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং হরিয়ানার খানপুর গুরুকুলে পড়াশোনা করেন, যেখানে রামদেবের সাথে তার পরিচয় ঘটে। ১৯৯৫ সালের ৫ জানুয়ারী বালকৃষ্ণ, রামদেব এবং আচার্য কর্মবীর সম্মিলিতভাবে হরিদ্বারের কৃপালু বাগ আশ্রমে দিব্যা যোগ মন্দির ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সালে তারা এফএমসিজি, ভেষজ এবং আয়ুর্বেদিক পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবসায়ের দ্রুত বর্ধনশীল প্রতিষ্ঠান পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ প্রতিষ্ঠা করেন।
দেশের বড় থেকে ছোট, প্রায় প্রত্যেকটি শহর, জনপদে অন্তত একটি করে তাঁর বিপণি থাকেই। আর এই সংস্থার কথা বললে যোগগুরু রামদেবের কথাই মনে পড়ে। যদিও অনেকেরই অজানা যে, এই পতঞ্জলির সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন আরও এক জন। তিনি আচার্য বালকৃষ্ণ।দেশের বড় থেকে ছোট, প্রায় প্রত্যেকটি শহর, জনপদে অন্তত একটি করে তাঁর বিপণি থাকেই। আর এই সংস্থার কথা বললে যোগগুরু রামদেবের কথাই মনে পড়ে। যদিও অনেকেরই অজানা যে, এই সংস্থার সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন আরও এক জন। তিনি আচার্য বালকৃষ্ণ ।
সেই বহু যুগ আগে রামদেব আর আচার্য বালকৃষ্ণ এক আশ্রমেরই আশ্রমিক ছিলেন। সেখানে থেকেই তাঁদের মধ্যে সখ্য হয়। সেখান থেকেই ১৯৯০ সালে দু’জনে মিলে আয়ুর্বেদ এবং যোগ ব্যায়ামকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্কল্প নেন। সে সময় থেকেই ‘দিব্য ফার্মেসি’র নামে একটি আয়ুর্বেদ সংস্থা চালু করেন রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণ। পথ চলার সেই শুরু। পরবর্তী কালে ‘দিব্য ফার্মেসি’ নাম বদলে হয় ‘পতঞ্জলি’। এর পরে ধীরে ধীরে হরিদ্বারের ‘পতঞ্জলি যোগপীঠ’ মহীরূহের আকার নেয়। কিছু সময় আগে ‘পতঞ্জলি’ ব্র্যান্ড বাজারে এনেছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য। টেলিভিশন থেকে পোস্টারে ছেয়ে গেছে ‘পতঞ্জলি’র বিজ্ঞাপণ।
এখন ভারতে যতগুলি এফএমজিসি ব্র্যান্ড বা ফাস্ট মুভিং কনজিউম গুডস রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল ‘পতঞ্জলি’। আর পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং প্রধান স্টেকহোল্ডার হলেন এই বালকৃষ্ণ। জানা গিয়েছে, পতঞ্জলি-র সিইও হিসেবে বালকৃষ্ণ নাকি এক পয়সাও মাইনে নেন না। এই প্রতিষ্ঠান শুরুর সময় ব্যাঙ্ক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ নিয়েছিলেন। বালকৃষ্ণ এই আয়ুর্বেদ সংস্থার চেয়ারম্যান এবং সিইও। যোগগুরু রামদেবের ডানহাত তিনি। দিনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা কাজ করেন বালকৃষ্ণ। তার পরেও সংস্থা থেকে কোনও বেতন নেন না। যদিও কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক তিনি।
এই সংস্থার বড় অংশীদার বালকৃষ্ণ। সূত্রের খবর, সংস্থার ৯৪ শতাংশ শেয়ারই বালকৃষ্ণের হাতে। ৩৪টি সংস্থার মাথা তিনি। সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তিনটি ট্রাস্টেরও শীর্ষে রয়েছেন তিনি। সংস্থার মার্কেটিং এবং বিজ্ঞাপন কৌশল স্থির করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন বালকৃষ্ণ। উঁচু পদে কর্মী নিয়োগ থেকে পণ্য বিক্রির কৌশল, সবটাই সামলান একা হাতে। বালকৃষ্ণের সংস্থার তৈরি সব পণ্যই ভারতীয় সংস্কৃতির কথা বলে। এগুলির মূল উপাদান ভেষজ। সেটাই এই পণ্যগুলির মূল ইউএসপি।
আর এই ইউএসপি তৈরির নেপথ্যেও রয়েছেন বালকৃষ্ণ। ২০১২ সালে সংস্থার রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৬৩ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৯-২০ অর্থবর্ষে সংস্থার রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ৯০২২ কোটি টাকা। অ্যামাজন, বিগ বাস্কেটের মতো ই-কমার্স সংস্থার সঙ্গেও চুক্তি রয়েছে সংস্থার। এই সংস্থাগুলি তাদের পণ্য বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়। ২০১৯ সালে একটি ভোজ্য তেল প্রস্তুতকারী সংস্থা অধিগ্রহণ করেন বালকৃষ্ণ। নামও পাল্টে ফেলা হয় সংস্থার।
ব্যবসায়ে সফল বালকৃষ্ণ বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন। ২০১১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য ভুয়ো নথি তৈরি করিয়েছিলেন তিনি। দাবি করা হয়, হাই স্কুল এবং সম্পূর্ণ নন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশের নথি ভুয়ো। ওই স্কুল, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিতে নাকি বালকৃষ্ণের পাশ করার কথা লেখা নেই। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুয়ো নথির ভিত্তিতে পাসপোর্ট পেয়েছেন বালকৃষ্ণ। তাঁর নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও প্রমাণের অভাবে ২ বছর পর সেই মামলা বন্ধ হয়ে যায়। তার পর ক্রমে ক্রমেই আড়েবহরে বৃদ্ধি পায় তাঁর সংস্থা, যার নেপথ্যে রয়েছেন বালকৃষ্ণ নিজে। বেতন না নিয়েই তিনি কোটিপতি। ফোর্বসের ভারতের ১০০ ধনী টাইকুন তালিকা অনুযায়ী, ৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে, আচার্য বালকৃষ্ণ $৪ বিলিয়ন সম্পদের সাথে ৭৭ তম স্থানে রয়েছেন।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হতে ক্লিক করুন Aaj Bangla হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।