ঝাড়গ্রাম jhargram darshniya sthan পশ্চিমবঙ্গের ২২ তম জেলা হিসেবে পরিচিত জেলা Jhargram ঝাড়গ্রাম । ঝাড়গ্রাম কিন্তু আমাদের রাজ্যের নবীনতম জেলা গুলোর মধ্যে একটি, যা পূর্বে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অংশ ছিল। ২০১৭ সালের ৪ঠা এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহল এলাকা গুলোকে নিয়ে Jhargram ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন করা হয়। Jhargram ঝাড়গ্রাম জেলা কিছু বছর আগেও সন্ত্রাস ও মাওবাদী আন্দোলনে মুক্তাঞ্চল ছিল। বর্তমানে আজ সবকিছুই নির্মূল হয়ে শান্তি ফিরে এসেছে। Jhargram ঝাড়গ্রামে কিন্তু দেখার মত দারুণ দারুণ অনেক জায়গাই আছে, কিন্তু মাওবাদী এলাকা হওয়ার জন্য এই জেলায় তেমন কোনো পর্যটক আসতো না, কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় মানুষের সহযগীতায় এবং সরকারি উদ্যোগে পুরনো পর্যটনস্থলগুলোর নতুনরূপে সংস্কার এবং নতুন নতুন কিছু পর্যটনস্থল খুলে দেওয়া হয়েছে, এছাড়াও পর্যটকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন কটেজ ও গেস্ট হাউস ও নির্মাণ করা হয়েছে।
ঝাড়গ্রামকে বলা হয়, অরণ্য সুন্দরী। বর্তমানে দক্ষিণ বঙ্গের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সুন্দরবন, দীঘা, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া জেলার পর্যটন কেন্দ্রের মতোই বর্তমানে সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর অন্যতম কেন্দ্র এই ঝাড়গ্রাম। অরণ্য, নদী, পাহাড়, জলপ্রপাত, নীল কুঠি, লেক, রাজবাড়ি, শিল্পী গ্রাম ইত্যাদি সব কিছুরই অবস্থান রয়েছে এই জেলায়। দক্ষিণের গোপীবল্লভ পুর থেকে শুরু করে উত্তরের বেলপাহাড়ী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জঙ্গল পাহাড় ঘেরা অঞ্চলে রয়েছে হাতি বাড়ি, ঝিল্লি পাখিরালয়, রামেশ্বর মন্দির, চোরচিতার চোরেশ্বর জিউর মন্দির, সুবর্ণরেখা নদী, কৃষগার্ডেন, চিলকিগড় রাজবাড়ি, কনক দুর্গা মন্দির, সাবিত্রী মন্দির, ট্রাইবাল মিউজিয়াম, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, ঝাড়গ্রাম মিনি জু, খোয়াব গা, ঘাগরা জলপ্রপাত, হুদহুদ জলপ্রপাত, শিলদা রাজবাড়ি, লাল জল প্রগ ঐতিহাসিক গুহা, গাঢ়রাসিনী পাহাড়, লকাই সিনি পাহাড়, খাঁদারানী জলাধার, কেটকি ঝর্না, কাকড়াঝোর, মাকুরভুলা জলপ্রপাত, শ্বেত পাথরের পাহাড়, লাট্টু পাহাড়, চাতন পাহাড়, পলাশ বন, তুলসীবনী সরোবর, রঙিন পাহাড়, ডাকাই উপত্যকা ইত্যাদি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপা Jhargram ঝাড়গ্রাম। বনে বনে শাল, পিয়াশাল, কেঁদ গাছের সমারোহ। শালের জঙ্গল আর চারিদিকের সবুজের সমারোহ, সুবর্ণরেখা, কাঁসাই, ডুলুং, তারাফেনী পর্যটকদেরকাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে Jhargram ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির সামনে তৈরি হয়েছে টুরিস্ট কমপ্লেক্স।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি :- jhargram darshniya sthan অরণ্য সুন্দরী Jhargram ঝাড়গ্রাম শহরের মধ্যে ভ্রমণের জন্য আকর্ষনীয় ও পরিচিত জায়গা যদি বলতে চান তাহলে একবাক্যে বলা যেতে পারে Jhargram ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির নাম। আপনারা অনেকে হয়তো জানেন না Jhargram ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির বংশধরেরা কিন্তু রাজস্থানের রাজপুতানা থেকে আগত। রাজা সর্বেশ্বর সিং ছিলেন এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। রাজা সর্বেশ্বর সিং ছিলেন মোগল সম্রাট আকবরের আমলে মানসিং এর একজন অধস্থন সেনাপতি। তিনি ১৫৭৪ খ্রী আমেরের রাজা মান সিংহ মুঘলরাজ্ আকবরের আদেশে বাংলা জয় করতে এসেছিলেন। রাজা সর্বেশ্বর সিং রাজপূত সামরিক বাহিনী ও অশ্বারোহী বাহিনীর সহায়তায় জঙ্গলখণ্ড আক্রমণ করেছিলেন ও মাল রাজাকে পরাস্ত করে মল্লদেব উপাধি ধারণ এবং Jhargram ঝাড়গ্রাম নামে তার রাজধানী স্থাপন করেন।
মোঘল সেনাপতি মানসিং ও এখানে বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত করেছিলেন তারপর সর্বেশ্বর সিং এর হাতে পুরো দায়িত্ব দিয়ে তিনি আগ্রা ফিরে যান, এভাবেই সূচনা হয় ঝাড়গ্রাম রাজবংশের।বর্তমানে যে অতি সুন্দর রাজবাড়িটি দেখতে পান এর কাজ শুরু হয় ১৯২২ খ্রি রাজা নরসিংহ মল্লদেব মহাশয়ের সময়কালে ও সম্পাদন হয় ১৯৩১ খ্রি। এই বাড়িটিতে এখন কিন্তু এই রাজ পরিবারের বংশধরেরা থাকেন এবং এটিকে এখন হোটেলে রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে থাকা, খাওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের রাজকীয় ব্যবস্থা থাকছে। আপনি অনলাইনে বুক করে চলে আসতে পারেন, তবে বুকিং ছাড়া ভেতরে ঢোকার পারমিশন সচরাচর দেয়না, অনেক অনুরোধ করার পর আমি ঢুকতে পেরেছিলাম, স্টেশন বা বাস স্ট্যান্ড থেকে একটা টোটো ভাড়া করে এখানে খুব সহজেই চলে আসতে পারেন।
আল্পনার গ্রাম – খোয়াবগাঁ :- jhargram darshniya sthan ঝাড়গ্রামের Jhargram পর্যটন মানচিত্রে নবতম সংযোজন হল এই আল্পনার গ্রাম – খোয়াবগাঁ। গ্রামটির প্রকৃত নাম কিন্তু লালবাজার, Jhargram ঝাড়গ্রাম শহর থেকে মাত্র ৫ – ৬ কি.মি দূরে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা লালমাটি বেস্টিত ছোট্ট, সুন্দর সাজানো একটি গ্রাম এই লালবাজার। চিত্রকলার কারুকার্জে Jhargram ঝাড়গ্রামের খোয়াবগাঁ যেনো এক রূপকথার দেশ। গ্রামে বসবাস ১৩ টি লোধা পরিবারের এবং মাত্র ৭৬ জন লোধা সম্প্রদায়ের মানুষের, আর এই ১৩ পরিবারের বাড়িতে গেলেই দেখতে পাবেন তাদের দেওয়ালে গ্রামবাসীরা সুন্দর সুন্দর সব আল্পনা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে, যার টানেই পর্যটকেরা এখানে ছুটে আসছে, আর এই গ্রামের চিত্রকে একদম বদলে দেওয়ার পেছনে যাদের হাত আছে তারা হল কলকাতার চালচিত্র অ্যাকাডেমি।
এই চালচিত্র অ্যাকাডেমি এই গ্রামের যুবক যুবতিদের চিত্রকলার প্রশিক্ষন দিয়ে তাদের হাত দিয়েই ফুটিয়ে তুলছেন অসাধারণ সব চিত্রকলা, গল্প, কাহিনী। প্রতিবছর দীপাবলির পর থেকে নতুন আল্পনা দেওয়ার কাজ শুরু হয় যা চলে প্রায় এক মাস ধরে, এই কাজে তাদের কলকাতা থেকে আগত কিছু শিল্পীরাও সহায়তা করে। এবার আসি আপনারা কেমন করে এখানে আসবেন, বলতে গেলে জঙ্গল দিয়ে যেহেতু ঘেরা গ্রামটি, তাই গ্রামটিতে যাওয়া একটু হলেও কঠিন কাজ। ট্রেনে বা বাসে আসলে স্ট্যান্ড থেকেই একটা টোটো রিজার্ভ করে নেবেন, বলবেন লালবাজার, খোয়াবগাঁ যাবো আপনাকে পৌঁছে দেবে, আর নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসলে কাউকে জিজ্ঞেস করবেন বলে দেবে।
রেল গেট পেরিয়ে সৎ সংঘ আশ্রমের ঠিক আগে বাঁ দিকে মোড়ামের রাস্তা, তারপর কাজু বাদামের বাগান আর শাল জঙ্গল পেরিয়ে এখানে পৌঁছতে হবে, গ্রামের ঢোকার মুখে নিয়মাবলীর বোর্ড দেওয়া আছে তাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা সেটা হলো ভেতরে ফটো ও ভিডিওগ্রাফির কোনো অনুমতি নেই, কিন্তু আপনি কিছু অর্থ সাহায্য গ্রামের ফান্ডে দিয়ে ছবি বা ভিডিও করতে পারেন। এই আল্পনার কারণে গ্রামের হাল ও অর্থনীতি একদমই পাল্টে গেছে এখন গ্রামবাসীদের ভালোই রোজগার হচ্ছে আর তাদের ছেলে মেয়েরাও দিন মজুরি না খেটে হাতের কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে।
চিল্কিগড় রাজবাড়ি :– jhargram darshniya sthan ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে ডুলুং নদী এবং কনকদূর্গা মন্দিরের অনতিদূরত্বে জামবনী ব্লকের অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান হল চিল্কিগড় রাজবাড়ী। বর্তমানে সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত না হলেও সর্বত্র অবহেলা ও অযত্নের ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় তিনশো বছরের পুরনো, বেশ বড় এই রাজবাড়ীটি। এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জামবনীর রাজা গোপিনাথ সিংহ। তার মৃত্যুর চিল্কিগড়ের রাজা হোন তার জামাই রাজা জগন্নাথ (সিংহ) দেও ধবলদেব। রাজবাড়ী প্রবেশের আগেই চোখে পড়বে বড় তোরণদ্বার, তারপর ঢুকেই দেখতে পাবেন একটা উন্মুক্ত প্রান্তর, বাঁদিক একটা প্রাচীন বৃহৎ অশ্বত্থ গাছ, তিনটি মন্দির, পরিত্যক্ত সার্ভেন্ট কোয়ার্টার ও আউটহাউস এবং ডাইনে মূল রাজপ্রাসাদ। রাজবাড়ির মুল প্রাসাদে এখনো বংশধরেরা বসবাস করে, তাই সেখানে যাওয়া একদমই নিষেধ। মুঘল এবং ব্রিটিশ মিলিত স্থাপত্যশৈলীতে এই দ্বিতল বিশিষ্ট এই রাজবাড়িটি নির্মিত। Jhargram ঝাড়গ্রাম থেকে জামবনী যাওয়ার রাস্তায় জামবনী পেরিয়েই কিছুদূর গেলেই প্রথমে পড়বে কনকদূর্গা মন্দির তারপর ডুলুং নদী ক্রস করে কিছুদূর গেলেই এই রাজবাড়ি ।
চিল্কিগড়ের কনকদূর্গা মন্দির :- jhargram darshniya sthan প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশী পুরনো Jhargram ঝাড়গ্রাম ট্যুরিসমের ক্ষেত্রে আরো একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান চিল্কিগড়ের কনকদূর্গা মন্দির। Jhargram ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি দূরে জামবনী ব্লকের অন্তর্গত চিল্কিগড়ের ডুলুং নদী তীরবর্তী কনক অরণ্যের মাঝে এই প্রাচীন মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন জামবনীর মহারাজা গোপিনাথ সিংহ ।কথিত আছে রাজা গোপীনাথ স্বপ্নে এক মাতৃ মূর্তির দর্শন করে, এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন| এটা শোনা যায় যে রাজবংশের সময়ে নরবলি একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ছিল। নরবলি বন্ধ হয়ে পাঠাবলি শুরু হয়, যতক্ষণ না বলির রক্ত ডুলুং নদীতে পৌছাতো ততক্ষন বলি চলতেই থাকতো। কনক দুর্গা মন্দির পরিদর্শন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেয়। কনক অরণ্যের মাঝে অবস্থিত এই মন্দিরটি, নির্জন পরিবেশ পশুপাখির ডাক সত্যি একটা আলাদা অনুভূতি দেয়।
লালগড় ও রামগড় রাজবাড়ি :- jhargram darshniya sthan একসময়ের অশান্ত জঙ্গলমহলে এখন ফিরে এসেছে শান্তির বাতাবরন। তাই ধীরে ধীরে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় ধীরে ধীরে বাড়ছে পর্যটকদের আগমন, সেরকমই একটি জায়গা হলো জঙ্গলমহলের লালগড়, এই লালগড়ের প্রধান আকর্ষন লালগড় রাজবাড়িও পার্শ্ববর্তী রামগড় রাজবাড়ি এবং আরো কিছু প্রাচীন মন্দির। লালগড়ের পাশেই আছে রামগড়, এই রামগড়েও একটা রাজবাড়ি আছে এবং রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন মন্দির, দুটো রাজবাড়ির মধ্যেই গভীর সম্পর্ক আছে সেটা নিয়েই এখন আলোচনা করবো। জনস্রুতি অনুসারে বাংলার নবাব আলীর্বদীর খাঁ এর আমলে উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া থেকে পুরী যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন দুই ভাই যাদের নাম রাম সিং এবং লাল সিং। কোন কারণে তারা জঙ্গলমহলের এই এলাকায় এসে বসতি স্থাপন করে। তাদের নাম থেকেই জায়গা দুটির নাম হয় রামগড় এবং লালগড়।
এবং ধীরে ধীরে তারা জমিদার পত্তন করেন। একদা রাজা রাম সিং একটি সিংহের শিকার করেছিলেন, সেইজন্য আলীর্বদী খাঁ তাকে সিংহসাহস রায় উপাধি দেন এবং লাল সিং তাকে সাহস জুগিয়েছিলেন বলে তাকে সাহস রায় উপাধি দেন, সেই উপাধি এখনো চলে আসছে। লালগড় রাজবাড়ির চত্বরেই রয়েছে প্রায় তিনশো বছরের পুরনো ‘রাধামোহন জিউ’য়ের মন্দিরটি, মন্দিরটি বিষ্ণুপুরি জোড়বাংলা শৈলীতে নির্মিত। এছাড়াও আছে লালগড়ের সর্বমঙ্গলার পরিত্যক্ত মন্দির, এছাড়াও আছে কানাইলাল, শ্রীমতী মন্দির, এবং রাজবাড়ির দুর্গা মন্দির। রাজবাড়ির শেষ রাজা ছিলেন বিজয়নারায়ণ সাহসরায়ের , তার পৌত্র দর্পনারায়ণ সাহসরায় বর্তমানে এই মন্দির গুলো দেখাশোনার দায়িত্বে আছে। লালগড় থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে রামগড়েও আছে একটি পরিত্যক্ত রাজবাড়ি, এবং কুলদেবতা কালাচাঁদ জিউয়ের মন্দির। এছাড়াও রামগড় জুড়ে আছে বুড়ো শিবের মন্দির, শীতলা মন্দির ,এবং রাধেশ্যাম মন্দির। আপনি লালগড় বা রামগড় দুদিক থেকেই আসতে পারেন এক মেদিনীপুর হয়ে দুই ভাদুতলা মোড় থেকে পীরাকাটা হয়ে এছাড়াও আরো অনেক রাস্তা আছে।
জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক :– jhargram darshniya sthan বৈচিত্র্যে ঘেরা অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রাম শহরের আরো একটি আকর্ষন বলতে পারেন ঝাড়গ্রাম মিনি জু যা বর্তমানে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের পরিণত করা হয়েছে। এর যাত্রা শুরু হয় ঝাড়গ্রাম মিনি জু হিসেবে ১৯৮০ সালে তারপর বেশ কিছু পরিবর্তন করে ২০০৫ সালে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে পরিনত করা হয়। বর্তমানে ১৬ টি আলাদা স্পিসিসের ১৮৭ টি স্তন্যপায়ী, ১২ টি আলাদা স্পিসিসের ১৫৩ টি সরিসৃপ এবং ১৮ টি আলাদা স্পিসিসের ৭৪ টি পাখির বাস ৩৩ একর জঙ্গলের উপর গড়ে ওঠা এই জ্যুলজিকাল পার্কে।
ট্রাইবাল ইন্টারপিটেশন সেন্টার :– jhargram darshniya sthan ঝাড়গ্রাম শহর ১ কি.মি দূরে অবস্থিত বাঁদরভুলা সেখানেই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে ট্রাইবাল ইন্টারপিটেশন সেন্টার। চারদিক দিয়ে শাল গাছের জঙ্গল দিয়ে ঘেরা এক অসাধারন জায়গা, চাইলেই এখানে একটা দিন কাটাতে পারে, এখানে সরকারি বেশ কয়েকটি পর্যটকদের জন্য কটেজ রয়েছে। আদিবাসীদের কলা ও সংস্কৃতিকে খুবই সামনে থেকে দেখার সুযোগ পাবেন।
জঙ্গলকন্যা সেতু :– jhargram darshniya sthan পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় দীর্ঘতম সেতু যা অবস্থিত Jhargram ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রামে ভাসরাঘাটে সুবর্ণরেখা নদীর ওপরে। ২০১৬ সালে এই ব্রিজ উদ্বোধন হওয়ার ফলে এই জেলার সুবর্ণরেখা নদীর ওপারের বসবাসকারী কয়েক হাজার মানুষের খুবই উপকার হয়েছে। আপনি মেদিনীপুর বা খরগপুর থেকে কেশিয়ারি হয়ে এই ভা়ঁসরাঘাট ব্রিজে চলে আসতে পারেন।
ঝিটকা জঙ্গল :- jhargram darshniya sthan মেদিনীপুরের ভাদুতলা মোড় থেকে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার পথে লালগড় ঢোকার ঠিক আগে এই বিশাল জঙ্গলটি পরে যা লালগড় ফরেস্ট নামেও পরিচিত। একসময় এই মাওবাদী আন্দোলনের জন্য পরিচিত ছিল। বেশ সুন্দর জঙ্গলটি রাস্তা ও যথেষ্ট ভাল, ছবি ও ভিডিওগ্রাফি করার জন্য একদমই বেস্ট জায়গা।
বেলপাহাড়ি সার্কিট :– jhargram darshniya sthan কলকাতার আসেপাশে এরকমই অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে যেগুলো থেকে ২ বা ৩ দিনের জন্য খুবই সুন্দরভাবে ঘুরে আসা যায়। সেরকমই এরকম একটা জায়গা হলো বেলপাহাড়ি। বেলপাহাড়ি ঝাড়গ্রামের বিনপুর ব্লকের অন্তর্গত একটু গ্রাম। এটি একটি গ্রাম হলেও এর আশপাশের এলাকা গুলোকে একসাথে বেলপাহাড়ি সার্কিট বলে এখানে দেখার মত আছে অনেক গুলো জায়গা, যেগুলোকে কভার করতে আপনার প্রায় ২ দিন তো লাগবেই, চাইলে আপনি ৩ দিনও দিতে পারেন। এখানে পর্যটক আসার প্রধান সিজন হল শীতকালের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। কিন্তু এখানকার প্রধান আকর্ষন ঝর্ণাগুলো ও পাহাড় গুলো সৌন্দর্য নিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে বর্ষাকালে এসময় গরমটাও অনেকটা কমে যায় আর এলাকার সৌন্দর্য অনেকটা বেড়ে যায়।
গদ্রাসিনী পাহাড় :- jhargram darshniya sthan গদ্রাসিনী পাহাড় বেলপাহাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার এবং ঝাড়গ্রাম থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।গদ্রাসিনী পাহাড়ের নীচে অবস্থিত গদ্রাসিনী আশ্রম। নীরব পরিবেশে সময় কাটাতে এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সন্ধান করতে অনেক অঞ্চলের মানুষ এখানে আসেন। প্রতি বছর, অঘ্রায়ন মাসে বিপুল সংখ্যক আধ্যাত্মিক সাধক এই স্থানটি পরিদর্শন করেন।
খান্দারানি লেক :- jhargram darshniya sthan বেলপাহাড়ির খান্দারানি হ্রদ ঝাড়গ্রামের কাছে সবচেয়ে মনোরম স্থানগুলির মধ্যে একটি। Jhargram ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত এই লেকে আসলে আপনারা নিশ্চিন্তে এক থেকে দুঘন্টা কাটাতে পারবেন। লেকের চারপাশের পরিবেশ নিরিবিলি, এবং লেক ঘিরে আছে সবুজ গাছপালা এবং পর্বতমালা, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই ।
ঘাঘরা জলপ্রপাত :- jhargram darshniya sthan বেলপাহাড়ির আরো একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হল ঘাঘরা জলপ্রপাত। বেলপাহাড়ি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জলপ্রপাত হল এক মনোরম গন্তব্য। “ঘাগরা” নামটি “গাগরা” শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ জলে ভরা একটি কলসী, গিরিখাতের আকৃতির কারণে কলসীর মতো। জলপ্রপাতটি কালো পাথরের একটি গিরিখাতের মধ্য দিয়ে গেছে, যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়েছে। ঘাগরা জলপ্রপাত বন্য সবুজ এবং পাথুরে পাদদেশের মধ্যে অবস্থিত, যা দর্শনার্থীদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি আশ্চর্যজনক দৃশ্য প্রদান করে। গ্রামীণ পরিবেশ, রহস্যময় ঝোপ, এবং অত্যধিক শিলা স্থানটির অবর্ণনীয় আভাকে বাড়িয়ে তোলে। বর্ষাকালে, ঘাগরা জলপ্রপাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, যা অবিলম্বে পিকনিক করতে এবং মিলিত হওয়ার জন্য আসা লোকদের আকর্ষণ করে।
তারাফেনি ব্যারেজ :– jhargram darshniya sthan বেলপাহাড়িতে অবস্থিত তারাফেনি ব্যারেজ দর্শনার্থীদের দেখার জন্য আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান। এটি বেলপাহাড়ি থেকে প্রায় 5 কিমি দূরে অবস্থিত। এই ব্যারেজের প্রধান আকর্ষন হলো এখানকার নদীর স্রোত যা দেখে সত্যি আপনি অবাক হয়ে যাবেন। এই ব্যারেজ কিন্তু এই পুরো বেলপাহাড়ি এলাকার পানীয় জলের প্রধান উৎস।
কাঙ্কেরঝোড় :- jhargram darshniya sthan কাঁকড়াঝোর ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ৬৫ কি.মি দূরে এবং ২৩ কি.মি দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি। যারা যারা জঙ্গল ভালোবাসেন তাদের কাছে এই জায়গাটি একটা স্বর্গরাজ্য। প্রায় ৯০০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই এলাকা ।বিভিন্ন ধরণের গাছ যেমন – শাল, সেগুন, মহুয়া, পলাশ আকাশমনী প্রভৃতি এখানে দেখতে পাবেন । Jhargram ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড় এবং জঙ্গলের সাথে এই জঙ্গলের যোগাযোগ আছে, তাই বিহীন প্রাণী বিশেষ করে হাতি দলমা থেকে কাঁকড়াঝোরে চলে আসে, ওড়িশা রাজ্য ও এখান থেকে খুবই কাছেই। এখানে আসলে জঙ্গলের সাথে সাথে পুরনো মন্দির, আদিবাসী মানুষ, তাদের সংস্কৃতি খুবই সামনে থেকে অনুভব করতে পারবেন।
লালজল গুহা :- jhargram darshniya sthan ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে দিগন্ত – প্রসারিত লালজল পাহাড়। জঙ্গলের মধ্যদিয়ে ঝাঁ-চকচকে চড়াই উতরাই রাস্তা অতিক্রম করে শেষ তিন কিলোমিটার পাহাড়ী পথে লালজল গুহাতে পোছানো যায় । পাহাড়ের ২০০ মিটার উচ্চতায় পাথর কেটে গুহাটি একদা নির্মিত হয়েছিল । অনুমান করা হয় প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে এটা ছিলো আদিম মানুষের আবাসস্থল । গুহার মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষায় প্রস্তরায়ূধ পাওয়া গেছে, যা কোলকাতার জাদুঘরে সংরক্ষিত । গুহাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয় । বর্তমানে সজারু ও বন্য জন্তুর বাস । পাহাড়ের মাথা থেকে দূরের দৃশ্য নয়নাভিরাম।
ডাঙ্গিকুসুম ভিউ পয়েন্ট এবং ওয়াচ টাওয়ার :- jhargram darshniya sthan ডাঙ্গিকুসুম যদি বেড়াতে আসেন তাহলে একদিন অবশ্যই এখানে থাকতে হবে, ঘোরার মত এখানে বেশ কিছু জায়গা আছে, এখানে কিন্তু সচরাচর পর্যটকেরা খুবই কমই আসে কারণ জায়গাগুলো একদমই অচেনা ও অফবিট এবং ওড়িষ্যা বর্ডার লাগোয়া। সেরকমই একটি জায়গা হলো ডাঙ্গিকুসুম ভিউ পয়েন্ট এবং ওয়াচ টাওয়ার। এই ওয়াচ টাওয়ারে যদি খুব সকাল সকাল আসেন তাহলে পুরো এলাকার 360 ডিগ্রি ভিউ এবং অনেক পাখি দেখার ও সম্ভাবনা আছে, তবে তার জন্য এখানে আপনাকে একদিন অবশ্যই থাকতে হবে, ডাঙ্গিকুসুমে থাকার মতো বেশ কিছু কটেজ ও হোমস্টে এখন গড়ে উঠেছে।
ডাঙ্গিকুসুম ফলস্ :- jhargram darshniya sthan ওড়িষ্যা বর্ডার থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত এই ঝর্ণা। আপনি যদি Adventure প্রেমী হোন তাহলে অবশ্যই আমি সাজেস্ট করবো এই জলপ্রপাতটিকে। জঙ্গলের মাঝ দিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে অনেকখানি পথ হেঁটে আপনাকে পৌঁছতে হবে, Jhargram ঝাড়গ্রাম জেলার এই লুকোনো জায়গাটিতে। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ৫৬ কি.মি দূরে, Jhargram ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ি, শিলদা হয়ে এই ডাঙ্গিকুসুম পৌঁছানো যায়, এই জায়গা গুলোতে আসলে অবশ্যই Jhargram ঝাড়গ্রাম বা বেলপাহাড়ি থেকে গাড়ি বুক করে আসবেন, আর নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসলে গাইড বা লোকাল মানুষের সাহায্য নিতে ভুলবেন না।
ডুংরি ফলস্ :- jhargram darshniya sthan ঝাড়গ্রামের পর্যটন মানচিত্রে আরো একটি অফবিট ও অজানা জায়গা হলো এই ডুংরি ফলস্। Jhargram ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ৫৮ কি.মি দূরে অবস্থিত একদম ওড়িষ্যা বর্ডার লাগোয়া ডাংগিকুসুম এবং আমলাসোলের ঠিক মাঝে এই জায়গাটি অবস্থিত। জায়গাটি একদমই অফবিট, আর কয়েকশো মিটার গেলেই ওড়িষ্যা। আপনাকে এই ফলস্ এ পৌঁছতে হলে ৫ – ১০ মিনিট ট্রেকও করে তারপর পৌঁছতে হবে, এই জায়গার আশেপাশে কিন্তু আরো বেশ কিছু ফলস্ আছে তবে একটা কথাই বলবো এখানে আসলে অবশ্যই বর্ষাকালে আসবেন নাহলে কিন্তু ঝর্ণার আসল দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন না।
ঝিল্লি হ্রদ:- jhargram darshniya sthan ঝাড়গ্রাম শহর থেকে গোপীবল্লভপুর হয়ে সড়ক পথে ৬৭ কিমি দূরে অবস্থিত এই হ্রদ এটি হাতিবাড়ি কটেজ থেকে ১০ কিমি দূরে। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে, আপনি যদি সকালের সূর্যের মৃদু আলোতে জায়গাটি পরিদর্শন করেন তবে আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য হ্রদে এক ঝাঁক পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির অপেক্ষা করবে। আপনি জায়গাটি পরিদর্শন করার সময়, সবুজের গালিচার মাঝে পাবেন এক বিশাল জলাধার। জলাধারে আপনি পাখির কিচিরমিচির শব্দের মাঝে লেকের স্বচ্ছ জলে নৌকাবিহারের এক অনবদ্য সুযোগ পাবেন। প্রকৃতির এই সৌন্দর্যে থাকার জন্য গোপীবল্লবপুর পঞ্চায়েত সমিতির সুন্দর কটেজ এখানে রয়েছে।
কানাইসোর পাহাড় :- jhargram darshniya sthan ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থেকে প্রায় ১২ কি.মি দূরে ঝাড়খণ্ড বর্ডারের একদম কাছে এই কানাইসোর পাহাড়টি অবস্থিত । এই কানাইসোর পাহাড়ের ওপরে প্রতি বছর জুলাই মাসে মাসে আদিবাসীদের পাহাড় পূজা উপলক্ষে এক গ্রাম্য মেলা অনুষ্ঠিত হয় যা দেখার জন্য দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে মানুষ এখানে এসে থাকে। পাহাড়ের ওপর থেকে চারিদিকের দারুণ উপভোগ করতে পারবেন।
নিকটতম বিমানবন্দরটি ভারতের কলকাতা, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় ১৮৮ কিলোমিটার দূরে । হাওড়া / টাটানগর থেকে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে পৌঁছাতে এক্সপ্রেস / লোকাল ট্রেন আছে ।কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রামে পৌঁছাতে একটি ট্রেনের সর্বনিম্ন সময় লাগে ২ ঘন্টা ২৪ মিনিট। কলকাতা থেকে জাতীয় সড়ক ৬ (মুম্বাই-কলকাতা মহাসড়ক) দ্বারা ঝাড়গ্রামে পৌঁছাতে ৪ ঘন্টা সময় লাগে ।