দুর্গা পুজোর রীতিনীতির মধ্যে বীরভূমের সদর শহর Siuri সিউড়ির বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো বসাক বাড়ির দুর্গাপুজো আলাদা ঐতিহ্য বহন করে। এই পুজো মানেই দুই বাংলার মিলনক্ষেত্র। বনেদি বাড়ির পুজো রীতি রেওয়াজ ওপার বাংলার। আর সেই ওপার বাংলার রীতি রেওয়াজ সযত্নে Siuri সিউড়ির এই বসাক বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে। সিউড়ির এই বসাক বাড়ির দুর্গাপুজো কমকরে ৩০০ বছরের বেশি পুরাতন শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের ঢাকার ধামরাই গ্রামে।
এক সময় এই দুর্গা প্রতিমা ছিল মৃন্ময়ী মূর্তির, তবে সেই মূর্তি বিসর্জন করার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ লোকের প্রয়োজন হয় তার অভাব থাকায় ধীরে ধীরে তা ধাতুর মূর্তিতে পরিণত হয়েছে। এখন সিউড়ির বসাক বাড়িতে সারা বছরই থাকে এই ধাতুর দুর্গা মূর্তি। বাংলাদেশের ঢাকার ধামরাই গ্রামে প্রথম এই দুর্গাপুজোর শুরু হওয়ার পর দেশভাগের সময় বসাক পরিবারের সদস্যরা ভারতে চলে আসেন। তাদের ঠিকানা হয় সিউড়িতে। তবে দেশ ত্যাগের পর ভিনদেশে এলেও তাদের মন থেকে মুছে যায়নি সেই সংস্কৃতি।
সিউড়িতে আশ্রয় নিয়েই তারা তৈরি করেন দুর্গা মন্দির। এই দুর্গা মন্দির তৈরি হয় হুবহু ধামরাই গ্রামের দুর্গা মন্দিরের আদলে। একই রকম বেদি এবং সামনে নাটমন্দির রাখা হয়। অন্যদিকে তারা দেশ ত্যাগের সময় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এসেছিলেন তাদের পূজা দেবী মনসার ঘট। সেই ঘটটি প্রতিষ্ঠা করা হয় সিউড়িতে তৈরি মন্দিরে। এই বসাক বাড়ির পুজোর রীতি নীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে পঞ্চমীর দিন থেকেই পুজো শুরু হয়ে যায়।
বাংলাদেশ যেমন দুর্গা পুজোর আগে মা মনসার পুজো দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু করা হতো সেই একই রীতি এখানেও পালন করা হয়। মহা পঞ্চমীতে আগে মা মনসার পুজো দেওয়া হয় এবং তারপর শুরু হয় দশোভূজা আবাহন। বসাক বাড়ির সদস্য মন্দিরা গাঙ্গুলী জানিয়েছেন, “আমাদের এই পুজো বৈষ্ণব মতে হয়ে থাকে। যে কারণে মহাপঞ্চমীর দিন থেকে যখন পুজো শুরু হয়ে যায় তখন থেকেই আর কোন আমিষ খাবার বাড়িতে ঢোকে না।
অন্যদিকে বাংলাদেশের যেমন রীতিনীতি মেনে পুজো করা হতো সেই একই রীতিনীতি মেনে এখানে পুজো করা হয়ে থাকে। তবে বিজয়া দশমীর পর আগে মৃন্ময়ী মূর্তি বিসর্জন করার যে রীতি ছিল তা এখন আর নেই। কারণ আমাদের মা এখন ধাতুর প্রতিমাতে পরিণত হয়েছে এবং সারা বছরই তিনি এখানে থাকেন।” একটা সময় যখন বাংলাদেশ বসাক বাড়ির এই দুর্গাপুজো হতো সেখানে যাত্রা নাটক সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সে সকল আজ এখন অতীত। তবে বসাক পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সেই রীতি বজায় রেখে পরিবারের সদস্যরাই নাট মন্দিরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিজেদের মধ্যে গানের আসর বসান।