হুগলি জেলার সিঙ্গুর অঞ্চল এলাকায় অবস্থিত সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দির Dakat Kali Mandir in Singur | বাংলার ডাকাতদের সঙ্গে কালীর যোগাযোগ যেন চিরকালীন। অতীতে মা কালীর পুজো সেরে তবেই ডাকাতি করতে বেরোত সর্দার ও তার দলবল। সে রঘু ডাকাত হোক বা গগন ডাকাত, প্রত্যেকেই ছিলেন কালী ভক্ত। হুগলির তেমনই দুই কুখ্যাত ডাকাতের কালী ভক্তির কথা এখন প্রায় প্রবাদের পর্যায়ে। সনাতন ডাকাত এবং গগন ডাকাত। সিঙ্গুরের ত্রাস এই দু’জনও নাকি নিয়মিত কালী পুজো করে তবেই বেরোতেন ডাকাতি করতে। সিঙ্গুরে ডাকাত কালীর পুজো বেশ বিখ্যাত। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, এই মন্দিরের দেবী খুবই খুবই জাগ্রত।
প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ বছরেরও পুরনো Dakat Kali Mandir in Singur সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস | তবে নির্দিষ্ট করে বলা এই ডাকাতকালী মন্দিরে কবে থেকে পুজো শুরু হয়েছে | তাই অনুমান অনুযায়ী প্রায় ৫০০ বছরেরও পুরোনো এই মন্দির | সিঙ্গুরের এই ডাকাত কালীর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ডাকাত সর্দার সনাতন বাগদীর হাতে। সরস্বতী নদীর তীরে বাস ছিল সনাতনের। ডাকাতি করতে বেরোনোর আগে গভীর রাতে নিবিড় জঙ্গলে মা কালীর উপাসনা করতেন তিনি। তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রচলিত কাহিনি। সে বার ঘোর অমাবস্যা।
ঝড়-জলের রাত তার উপরে। পুজোর উপচার সব তৈরি। গোল বাধল পুজো শুরু করতে গিয়ে। বলির জোগাড় নেই যে! সর্দার রেগে আগুন। নরবলির ব্যবস্থা করার আদেশ দিলেন তখনই। সর্দারের সেই কথায় গা করেনি দলের লোকজন। আগে থেকেই অসন্তোষ জমে ছিল তাদের মনে। ওই রাতে ডাকাতের দল ভাগ হয়ে যায় দু’দলে। শুরু হয় বিষম যুদ্ধ। এমন সময়ে সেখানে এসে পৌঁছয় এক দল তীর্থযাত্রী। সর্দারের আদেশে ডাকাত দল হামলা করে তাঁদের উপরে। ডাকাত দল ও তীর্থযাত্রীদের লেঠেল বাহিনীর মধ্যে শুরু হয় ভীষণ যুদ্ধ।
তাতে প্রাণ যায় খোদ ডাকাত সর্দার সনাতন বাগদী-সহ আরও অনেকের। বন্ধ হয়ে যায় কালী পুজোও। শোনা যায়, এই ঘটনার বহু বছর পরে উনিশ শতকের শুরুর দিকে হঠাৎই জঙ্গলের মধ্যে সেই ডাকাত কালীর পরিত্যক্ত পুজোর জায়গাটি খুঁজে পান গগন ডাকাত। তিনিই ঘট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। শোনা যায়, গগন ডাকাত নাকি মা কালীর পুজোর সময়ে ঘট থেকে ফুল পড়লে তবেই সে দিন বেরোতেন। না হলে বেরোতেন না। ঘট থেকে ফুল পড়াকে তিনি মায়ের আশীর্বাদ বলে মানতেন। রয়েছে আরও বহু জনশ্রুতি। ডাকাতের হাতে পুজো হলেও কোনও দিন সে ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি মন্দির। তা হয় পরবর্তী কালে। শোনা যায়, মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান এলাকার এক অবস্থাপন্ন কৃষক। তিনিই এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। লোকে বলে, মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য সোনার মোহর নাকি জোগাড় করে দেন মা নিজেই। ধানের বস্তা থেকে পাওয়া গিয়েছিল সেই স্বর্ণমুদ্রা। মন্দিরে নিত্য পুরোহিত নিয়োগ করেন বর্ধমানের রাজা। তৈরি হয় এক চালা মন্দির।
ডাকাতকালী মায়ের মন্দিরে জড়িয়ে আছে মা সরদারও নাম | কথিত আছে, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব যখন অসুস্থ ছিলেন তখন তাঁকে দেখতে মা সারদা মনি কামার পুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছিলেন, সেই সময় তার পথে আটকে দাঁড়ায় রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত | এই দুই ডাকাতের মূল উদ্দেশ্যে ছিল মায়ের থেকে ডাকাতি করা | ঠিক সেই সময় ওই দুই ডাকাত মা সারদা মনির মধ্যে তারা রক্ত চক্ষু মা কালীর মুখ দেখতে পায় | সঙ্গেসঙ্গে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে মা সারদার কাছে ক্ষমা চায় তারা | ততক্ষনে সন্ধে নেমে এসেছে সেই জন্য রাতে মা সারদাকে ডাকাতরা নিজেদের আস্তানায় মায়ের থাকার ব্যবস্থা করে দেয় |
জানা যায়, মা সারদা মনিকে ডাকাতরা রাত্রে বালাই চাল ভাজা ও কড়াই ভাজা খেতে দিয়েছিলেন | সেই থেকে কালীপুজোর দিনে চাল কড়াই ভাজা দেওয়া হয় | এ ছাড়াও পুজোর প্রসাদ হিসাবে লুচি ভোগ, ফল দেওয়া হয় | কালি পুজোর দিন শুদ্রদের আনা গঙ্গার জল মন্দিরের দরজা বন্ধ করে ঘটে দেওয়া হয় | সেই জল থাকে সারা বছর ধরে | চার প্রহরে চার বার পুজো হয় | তারসঙ্গে হয় ছাগল বলিও | রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত মিলে রক্ত চক্ষু মায়ের এই মুর্তি তৈরী করে ছিলেন | পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন সিঙ্গুর থানার চালকেবাটি গ্রামের মোড়লরা |
কালী পুজোর দিন মোড়লদের পুজোর পর অন্য ভক্তরা পুজো দিতে পারেন | মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মল্লিকপুরে এই ডাকাতে কালীর মায়ের মন্দির থাকায় মল্লিকপুর, জামিনবেড়িয়া ও পুরষোত্তমপুর, এই তিন গ্রামে কোন কালী পুজো আর হয় না | এমনকি তারা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় কোন বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো থাকেনা ক্যালেন্ডার বা কোন মূর্তি | মা এতটাই জাগ্রত যে এলাকাবাসী সাহসই পান না কেউ অন্য কোন প্রতিমার পূজা করার |এই ডাকাত কালী মন্দিরের দেওয়ালে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি, বিষ্ণুর দশাবতারের মূর্তি ও পোড়ামাটির লতাপাতা খোদিত রয়েছে।
মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রায় নয় ফুট উচ্চ বিগ্রহ অবস্থিত। মন্দিরের গর্ভগৃহে চর্তুভূজা দেবীর মূর্তি এককথায় অসাধারণ।প্রাচীন রীতি মেনে কালীপুজোর দিন দুপুরে শূদ্রদের আনা গঙ্গাজল দিয়ে প্রতি বছর ঘটের জল পরিবর্তন হয় সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুর মন্দিরে। এই প্রাচীন কালীমন্দিরে অতীতে নরবলি হতো এমনটাও জনশ্রুতি আছে। আজও অমাবস্যার বিশেষ তিথি সহ প্রতিদিন পূজা পান সিঙ্গুরের এই বিখ্যাত সিদ্ধেশ্বরী কালী।
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস