ভুজঙ্গাসন Bhujangasana শরীর সুস্থ রাখার জন্য দেহে রোগ নিরাময় করা প্রয়োজন। আর রোগ নিরাময়ের সবচেয়ে ভালো কার্যকর উপায় হল যোগব্যায়াম। যোগা শুধু রোগ নিরাময়ই করে বরং শরীরে এনার্জি প্রদান করে। আর এই যোগাসনের মধ্যে একটি আসন হল ভুজঙ্গাসন। আজকে আমরা এই আসনটির সম্পর্কে আলোচনা করব। এই যোগাসনটি অভ্যাস করলে কি কি উপকার হয় এবং কীভাবে করবেন এই আসন। এছাড়াও আপনাদের জানাব এই আসন করার কয়েকটি সতর্কতা।
ভুজঙ্গ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। ভুজঙ্গ কথার মানে সাপ এবং আসন মানে কোনও অবস্থা অথবা ভঙ্গিকে বোঝায়। অর্থাৎ ভুজঙ্গাসন কথার অর্থ সাপের ভঙ্গিতে আসন। ভুজঙ্গাসনকে ইংরেজিতে কোবরা পোজ বলা হয়।সব আসনগুলির মধ্যে ভুজঙ্গাসন খুব জনপ্রিয় একটি আসন। এটি পিঠে ব্যথার রোগীদের জন্য খুব কার্যকর। পাশাপাশি মেরুদন্ড শক্তিশালী হয় এই আসন অভ্যাস করলে। এছাড়া নিয়মিত এই ভঙ্গিটি কাঁধ, হাত, কনুই, পিঠ, কিডনি এবং লিভার শক্তি লাভ করে এবং অনেক রোগ থেকে মুক্তি পায়।
পদ্ধতি: পা দু’টো সোজা করে সটান উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। পায়ের পাতার উপর দিকটা যতদূর সম্ভব মুড়ে মেঝেতে রাখতে হবে। দু’হাতের তালু উপুড় করে পাঁজরের কাছে দু’পাশে মেঝেতে রাখুন। এবার পা থেকে কোমর পর্যন্ত মেঝেতে রেখে হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে মাথা যতদূর সম্ভব উপরে তুলুন এবং মাথাকে সাধ্যমত পেছনদিকে বাঁকিয়ে উপরের দিকে তাকান।শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর আস্তে আস্তে মাথা ও বুক নামিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। কিছুদিন অভ্যাসের পর হাতের তালুর উপর ভর না দিয়ে বুক ও মাথা উপরে তুলতে হবে। শুধু বুক ও পিঠের উপর জোর দিয়ে মাথা ও বুক উপরে রাখতে হবে এবং হাত দু’টো কাঁধ বরাবর তুলে উঁচু করে রাখতে হবে। এভাবে আসনটি ২ বার করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
কী ভাবে করবেন?
• প্রথমে উপুড় হয়ে ম্যাটের উপর শুয়ে পড়ুন। পা সোজা করে আরাম করুন। দুই হাতের তালু কাঁধের পাশে মাটিতে রাখুন, কনুই থাকুক শরীর ঘেঁষে। এ বার কপাল মাটিতে রেখে চোখ বন্ধ করুন।
• এটি শুরুর অবস্থান। এই অবস্থানে ভাবনাচিন্তা মন থেকে সরিয়ে শরীর শিথিল (বিশেষ করে শরীরের নীচের অংশ) করার চেষ্টা করুন।
• এ বার ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে মাথা ও বুক উপরের দিকে তুলুন। ভাঁজ করা হাত পাশে থাকবে। কিন্তু, চেষ্টা করবেন হাতে ভর না দিয়ে পেট-সহ শরীরের নীচের অংশে ভর দিয়ে মাথা ও বুক উপরের দিকে তোলার।
• খেয়াল রাখবেন, নাভি যেন মাটি থেকে ৩ ইঞ্চি উপরে ওঠে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নাভির নীচে শ্রোণি অঞ্চল মাটিতে ঠেকে থাকবে। ভুজঙ্গাসনের ক্ষেত্রে এই অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• এ বার দুই হাতে ভর দিয়ে শরীর যতটা সম্ভব উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। মাথা পিছন দিকে হেলিয়ে রাখুন। ঘাড়ে যাতে কিছুটা টান পড়ে, খেয়াল রাখবেন।
• আপনার সুবিধা মতো হাত কনুই থেকে ভাঁজ করে রাখতে পারেন, আবার টান টান করে হাতে ভর দিয়ে শরীর উপরের দিকে তুলতে পারেন। এই অবস্থানে যত ক্ষণ সম্ভব থাকুন। তবে বেশি চাপ দেবেন না।
• এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। এক রাউন্ড সম্পূর্ণ হল।
• আসন শেষে শবাসনে বিশ্রাম নিন। ২–৩ রাউন্ড ভুজঙ্গাসন অভ্যাস করুন।
কেন করবেন? ভুজঙ্গাসন আমাদের নানা শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। যাঁদের একটানা বসে কম্পিউটারে কাজ করতে হয় বলে ঘাড় ও পিঠের পেশি শক্ত হয়ে যায়, তাঁদের এই আসন অভ্যাসে মেরুদণ্ডের পেশিগুলিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও ব্যথার হাত থেকে রেহাই মেলে। শিরদাঁড়ার সমস্যা হলে স্নায়ুতন্ত্রের কাজ করার অসুবিধা হবেই। নিয়মিত ভুজঙ্গাসন অভ্যাস করলে মেরুদণ্ডে রক্ত চলাচল বাড়ে বলে স্নায়ুতন্ত্র উজ্জীবিত হয় ও সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। যে কোনও স্ত্রীরোগে এই আসনটি অভ্যাস করলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভুজঙ্গাসন করলে ফুসফুস ও বুক প্রসারিত হয় বলে এই আসন হাঁপানির রোগীদের জন্যে অত্যন্ত উপযোগী। নিয়মিত অভ্যাস করলে পেটের মধ্যে থাকা সব ক’টি প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বাড়ে। লিভার ও কিডনি ভাল থাকে, হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
সতর্কতা যাঁদের হাইপার থাইরয়েড, পেপটিক আলসারের সমস্যা বা হার্নিয়া আছে, তাঁরা এই আসন অভ্যাস করবেন না। পিঠে বা কোমরে ব্যথা থাকলে আসনটি না করাই ভাল।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হতে ক্লিক করুন Aaj Bangla হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।