সোনারুন্দি রাজবাড়ি Sonarundi Rajbari মুর্শিদাবাদ Murshidabad জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাসের বহুমূল্য সম্পদ। কোথাও রাজবাড়ি কোথাও বা জমিদারবাড়ি এবং আছে নবাবের শহর হাজারদুয়ারি। কিন্তু অনেক জমিদার বাড়ি আছে যা আজকে ধ্বংসের মুখে। ঠিক তেমনই মুর্শিদাবাদ জেলার সালারের Sonarundi Rajbari সোনারুন্দি রাজবাড়ি। এখানে এলেই দেখতে পাবেন বঙ্গ দেশের দ্বিতীয় বৃন্দাবন। কথিত আছে, রাজকুমার গোবিন্দ দেব বাহাদুর মূল রাজবাড়ির সংলগ্ন পশ্চিম অংশে কিশোরী বনয়ারিলালের মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাধাকৃষ্ণ ও অষ্টসখীর মূর্তি।
বৃন্দাবনের অনুসরণে তিনি এই সখীসহ যুগল মূর্তির নাম দেন কিশোরী বনয়ারিলালজি। তার চারদিকে দালান, মাঝে নাট মন্দির। লাল বেলে পাথর দিয়ে মন্দিরের সামনের দেওয়াল সাজিয়ে তুললেন। মূল প্রাসাদে একশোর বেশি ঘর ছিল। মন্দিরের পাশেই কিশোরী-সায়র পুকুর কেটে তার ঘাটে স্নানঘর ও পাশেই গোপেশ্বর শিব মন্দির নির্মাণ করলেন। নজর-বাগানে সুদৃশ্য ফুলের ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল। রাজবাড়ির বাইরে বারোটি কুঞ্জ নির্মাণ করেছিলেন। মূলত তিনি এই বঙ্গদেশে দ্বিতীয় বৃন্দাবন নির্মাণ করছিলেন। তবে আজকে সব কিছুই ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে ।তবে দ্বিতীয় বৃন্দাবন দেখতে ভিড় জমান বহু পর্যটক।
ভারতের ইতিহাসে মধ্যযুগ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল সেই যুগের ফসল ভক্তি আন্দোলন। তুকারাম, রামদাস, মীরাবাই, কবীর, দাদু যে ভক্তি আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিলেন তার একমাত্র উপাদান ছিল ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিও আনুগত্য। আমরা দেখেছি তখন বৃন্দাবন চন্দ্র দ্বারকাধিপতি শ্রীকৃষ্ণ, অযোধ্যার দুলাল রামচন্দ্রকে নিয়ে যে ভক্তিস্রোত প্লাবিত হয়েছিল, তার ঢেউ এসে লেগেছিল বাঙালির ঘর গেরস্থালিতে। বেশ কিছু পরিবার তাঁদের প্রবাসজীবন সাঙ্গ করে বৃন্দাবনের সুধা বুক ভরে নিয়ে এসেছিলেন বাংলায়। আজ আমরা সেইরকম এক রাজ পরিবারের কাহিনীই শোনাব।
বাংলার Murshidabad মুর্শিদাবাদ জেলার সালার অঞ্চলের Sonarundi Rajbari সোনারুন্দি রাজপরিবার বিশেষভাবে এক ঐতিহ্যকে ধারণ করে রয়েছে। এই রাজপরিবারের রাজা গোবিন্দদেব বাহাদুর বাংলাতেই বৃন্দাবন গড়ে তোলার ইচ্ছায় এক কৃষ্ণমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই মূর্তির নাম দেন কিশোরী বনোয়ারীলালজি সোনারুন্দি রাজবাড়ি Sonarundi Rajbari। মূর্তিটি রাধা সহ বনবিহারী কৃষ্ণের। কিন্তু রূপটি একটু ভিন্ন। এই কষ্টিপাথরের কৃষ্ণের সঙ্গে রয়েছেন অষ্টধাতুময় রাধামূর্তি। কিন্তু কেবল রাধা নন, তাঁর সঙ্গে কৃষ্ণের অষ্টসখীও পৃথক আসনে অধিষ্ঠিতা। মূল রাধাকৃষ্ণকে ঘিরে বিরাজ করছেন আর সখীরা দূরত্বে রয়েছেন। এই অষ্টসখীরা হলেন ললিতা, বিশাখা, সুচিত্রা, চম্পকলতা, রঙ্গদেবী, সুদেবী, তুঙ্গবিদ্যা, ইন্দুরেখা। মূর্তিগুলির শিল্পমূল্য অনন্য। এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য ও তাঁর পঞ্চপার্ষদের দারুমূর্তিও দেখতে পাওয়া যায়।
তবে নির্মাণধারা দেখে অনুমান করা যায় এই দারুমূর্তির সংযোজন বনোয়ারীলালজির অনেক পরে হয়েছিল। মুর্শিদাবাদ জেলার এক অংশ আর বীরভূম জেলার এক প্রান্ত পরস্পরকে স্পর্শ করে আছে। Sonarundi Rajbari সোনারুন্দির অবস্থান ঠিক এরকমই এক স্থানে। এই রাজবাড়ি যেখানে সেই স্থানের নাম বনোয়ারীবাদ। বৃন্দাবনের যেন খুবই কাছাকাছি এক শব্দ। শুধু স্থানটির নাম নয়, এর সঙ্গে বনোয়ারী বা বনোয়ারীলালের প্রতিষ্ঠাতা এই রাজপরিবারের নামের সঙ্গেও যুক্ত থাকে বনোয়ারী শব্দটি। যার মাধ্যমে রাজপরিবারের সদস্যদের কেবল নাম শুনেই চিহ্নিত করা সম্ভব।
এ কেবল একটি দেবতাকে প্রতিষ্ঠা করা নয়। এ হল একটি সংস্কৃতিকে নতুন করে গড়ে তোলা। বৃন্দাবনচন্দ্রের বৃন্দাবনকে আস্বাদ করার, পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার তীব্র ব্যাকুলতা এর পিছনে কাজ করেছে। বহু দিন আগেকার কথা। প্রায় তিনশো বছর আগের ইতিহাস। বনোয়ারীবাদ রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা নিত্যানন্দ দালাই জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৭৫২ সালে। এই অঞ্চল তাঁতিদের বসবাস বেশি ছিল। নিত্যানন্দ দালাই-এর পিতা জগমোহন দালাই নিজে বুননকার্য না করলেও সুতো ও বস্ত্র ব্যবসায়ে খুব নাম করেছিলেন। তিনি সুতির বস্ত্রব্যবসায়ীদের মধ্যে দালাল রূপে কাজ করতেন। অর্থাৎ তিনি মূল উৎপাদনকারী তাঁতিদের মূলধন দিয়ে কাজ করাতেন এবং সেই বস্ত্র বাজারীকরণ প্রক্রিয়ায় তিনি ছিলেন প্রধান স্তম্ভ।
কিন্তু তাঁর পুত্র নিত্যানন্দ কিন্তু পারিবারিক ব্যবসা সম্বন্ধে একেবারেই উদাসীন ছিলেন। নিত্যানন্দের পড়াশোনার দিকে অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল। তিনি ব্যবসার কিছু বুঝতেন না, পছন্দও করতেন না। সেদিকে কোনও আকর্ষণ ছিল না বলে পিতৃব্যবসার প্রতি উদাসীন ছিলেন। জগমোহন কিন্তু সেই উদাসীনতাকে ভালো নজরে দেখতেন না। লেখাপড়ার প্রতি পুত্রের আগ্রহকেও তিনি আমল দিতেন না। নিজের বুদ্ধিবলে যে পদমর্যাদা তিনি তৈরি করেছিলেন পুত্র তার উত্তরসূরি হোক, সেটাই তিনি চাইতেন। একদিন চোদ্দো বছরের নিত্যানন্দকে তিনি ব্যবসার প্রতি উদাসীনতার জন্য বকুনি দিলেন।
বকুনি খেয়ে নিত্যানন্দ সেদিন বুঝতে পারলেন এই পরিবারে থেকে তার পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তিনি সুযোগ বুঝে একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন এবং গৃহত্যাগ করে উপস্থিত হলেন পাটনা শহরে। Murshidabad মুর্শিদাবাদ থেকে পাটনা- দূরত্ব কম নয়। কিন্তু এই দুই শহরের মধ্যে সাদৃশ্য একটিই ছিল। দুই শহরই ছিল বাদশা শাসিত। পাটনা পৌঁছে নিত্যানন্দ ফারসি ভাষা শিখলেন। এতেও তাঁর মন ভরল না। তিনি আরবি ভাষা শিখতে উপস্থিত হলেন দিল্লি। তখন মোঘল শাসকের শেষ কাল। মসনদে রাজত্ব করছেন শাহ আলম। একবার শাহ আলমের সঙ্গে তাঁর পুত্রের কোনও বিষয় নিয়ে মতভেদের সৃষ্টি হয়। সেই মতভেদ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে পিতা পুত্রের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
এই সময় আরবি ভাষায় পণ্ডিত রূপে স্বীকৃত নিত্যানন্দ শাহ আলমের পুত্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি পিতা ও পুত্রের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। এর ফলে যুদ্ধের সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়। পিতা ও পুত্রের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হয়। এই ঘটনায় বাদশা শাহ আলম আরবিতে সুপণ্ডিত নিত্যানন্দকে সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত করেন। তার সঙ্গে তাঁকে ‘রায় দানিশমন্দ’ উপাধি প্রদান করেন। এটি তৎকালীন পাণ্ডিত্যের জন্য বিশেষ সম্মান রূপে চিহ্নিত করা হত। মোঘল বাদশা শাহ আলম এতটাই তাঁর কাজে খুশি হয়েছিলেন যে তিনি কেবল উপাধি প্রদান করেই ক্ষান্ত হলেন না। তিনি সাম্রাজ্যের বিচার ব্যবস্থার কাজে নিত্যানন্দকে নিযুক্ত করলেন এবং তাঁকে ‘মীর মুন্সী’ পদ প্রদান করলেন। নিত্যানন্দ দালাই কিন্তু এখানেই থেমে রইলেন না।
তিনি নিজের কার্যে আরও নিপুণতা দেখালেন। এর ফলে বাদশা তাঁকে ‘মহারাজা আমির-উল-মুলক, আজমতদ্দৌল্লা, যোগীন্দ্র বাহাদুর, সফদরজং’ উপাধি প্রদান করলেন। কেবল তাই নয়। তাঁকে ‘হপ্তা হাজারী’ পদ দান করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুন্সী পদ যুক্ত হতে তিনি নবাবের কাছ থেকে পাঁচটি কামান ব্যবহার করার অধিকার লাভ করলেন। দিন অগ্রগামী। পিছনে যা পরে থাকে তার দিকে সম্মুখপথ কৃপাদৃষ্টি নিক্ষেপ করে। বর্তমানের সোনারুন্দি রাজবাড়িতে আজ অবহেলায় মাটিতে শায়িত নিত্যানন্দের কষ্টে অর্জিত কামান।
যাই হোক রায় দানিশমন্দ রূপে নিত্যানন্দ দিল্লি কোর্টে কাজ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেন এবং সেই অর্থ দিয়ে তিনি অধুনা উত্তরবঙ্গের রঙ্গপুর বা রংপুর জেলার কিছু অংশ, দিনাজপুর, বগুড়া, Murshidabad মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম, বর্ধমান, পূর্ণিয়া ইত্যাদি বাংলার বেশ কিছু অঞ্চল ক্রয় করেন। কিন্তু বাদশা দরবারের কর্মজীবী হয়ে, আরবি, ফারসি ভাষা শিখেও নিজের সংস্কৃতি ও ধর্মকে ভুলে যাননি নিত্যানন্দ। বিশেষ করে উত্তর ভারতে তখন বৃন্দাবন রাজ শ্রীকৃষ্ণের প্রভাব গভীর ছাপ রেখেছে। তারই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বৃন্দাবনচন্দ্রের লীলাস্থল বৃন্দাবন নগর। বৃন্দাবনের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছেন নিত্যানন্দও।
প্রচুর ধনসম্পত্তির অধিকারী হয়ে তিনি নিজের মনে লালিত ইচ্ছার বাস্তব রূপদানে অগ্রসর হলেন। তিনি কল্পনা করেছিলেন বাংলায় একটা বৃন্দাবনের মতো নগর গড়ে তুলবেন। যে নগরের প্রাণকেন্দ্র হবে স্বয়ং বৃন্দাবনচন্দ্র শ্রীকৃষ্ণ। এই স্বপ্ন নিয়ে তিনি একটি সুন্দর মন্দির গড়ে তুললেন এবং যা উৎসর্গ করলেন ‘বনোয়ারীজি’ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের নামে। তিনি কষ্টিপাথরের কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে রাধা ও অষ্টসখীর ধাতুমূর্তি স্থাপন করলেন। এই বনোয়ারীজির নাম অনুসারে স্থানটির নামও হল বনোয়ারীবাদ। তখনই এই মন্দিরে দিনে প্রায় একশো পঞ্চাশজন প্রসাদ গ্রহণ করতে পারত। বর্তমানেও এর ব্যতিক্রম হয় না।
এই মন্দির ঘিরে গড়ে তোলেন বিরাট রাজমহল, যা হল নিত্যানন্দের বাসস্থান। মন্দিরটির গঠনভঙ্গি খুবই চিত্তাকর্ষক। তার সম্মুখভাগ দেখলে বৃন্দাবনের স্থাপত্যের কথা স্মরণে আসবেই। উত্তরপ্রদেশীয় ধরনে সম্মুখভাগের খিলান তৈরি। তার গায়ে অপূর্ব ফুল পাতার কাজ। যা মোঘল শিল্পকলাকে স্মরণ করায়। আছে রাসমঞ্চ। কারণ যেখানে কৃষ্ণ সখী সঙ্গে বিরাজিত হন সেখানে তাঁর রূপ মূলত মদনমোহন রূপ। এই রূপে তিনি রাসলীলা সম্পাদন করেন। নিত্যানন্দ উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি ছিলেন। কেবল বনোয়ারীবাদ নির্মাণ করে ক্ষান্ত হলেন না। তিনি নিজের দানিশমন্দ উপাধি লাভের কৃতিত্বের সাক্ষর যুগের কষ্টিপাথরে খোদাই করে যেতে আগ্রহী হলেন।
তিনি সেই সময় যুগ গণনার জন্য ‘দানিশাব্দের’ প্রচলন করেন। একটি মানুষের বড় হয়ে ওঠার ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গৃহদেবতার ইতিহাস। সোনারুন্দি হল বনোয়ারীবাদের পাশে গা লাগানো এক গ্রাম। সেই গ্রাম শুধু প্রতিষ্ঠা করেননি নিত্যানন্দ। তিনি সেই স্থানে বড় বড় পুকুর, দুর্লভ বৃক্ষের সারি দিয়ে সাজিয়ে তুলেছিলেন। এখনও দুধ ফলের গাছ নামে একটি বিরল বৃক্ষের দেখা মেলে। ছোট ছোট সাদা ফল, স্বাদ মিষ্টি আর ভাঙলে দুধ রঙের রস বের হয়। শোনা যায় মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় তারই পাশে একটি বিরাট পুকুর প্রতিষ্ঠা করেন। এই পুকুরে প্রথম দিন যে মাছ ছাড়া হয়েছিল তারই বংশধর এখনও বিরাজ করছে।
কারণ, Sonarundi Rajbari বনোয়ারীজির প্রসাদ খেয়ে এরা বেঁচে থাকে। এরা তাঁর প্রিয়। কেউ এই মাছ ধরে না। প্রবাদ আছে এই পুকুরের সারিবদ্ধ মাছ দেখে কারও মনে লোভ সৃষ্টি হয়। সেই ব্যক্তি মাছ ধরতে গেলে তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। রক্তবমি করে মারা যায় সেই ব্যক্তি। সেই দিন থেকে কেউ আর মাছ ধরে না। আগে রাজবাটীর সদস্যরা মাছের নাকে নথ পড়িয়ে দিতেন। নথ পরা মাছ দেখতে সকলে উপস্থিত হত। প্রথা আছে খুব বড় মাছ মারা গেলে তাকে তুলে নিয়ে উধানপুরের গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকে উধানপুরের নাম হয় বনোয়ারীগঞ্জ। ছোট মাছগুলোকে পুকুরেই পুঁতে দেওয়া হয়।
এখানেই শেষ নয়, বহরমপুর শহর থেকে বীরভূমের দিকে যে রাস্তাটি গিয়েছে সেই পথ মনোরম ও মসৃণ করে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তখন বহরমপুরও ছিল বাংলার নবাবের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক শহর। এক সফল জীবনযাপন করে, একটি নগর ও গৃহদেবতার আরাধনাস্থল নির্মাণ করে ১৮১২ বঙ্গাব্দে মৃত্যু হয় নিত্যানন্দ দানিশমন্দের। নিত্যানন্দের তিন পুত্র। জ্যেষ্ঠ পুত্র যোগোদীন্দ্র Sonarundi Rajbari বনোয়ারীলাল বাহাদুর ১৮০৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নিত্যানন্দ কেবল পিতার ব্যবসাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেননি। তিনি পিতৃলব্ধ দালাই পদবিকেও ত্যাগ করেছিলেন।
তাঁর বংশের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিটি সদস্যদের নামের মধ্যভাগে গৃহদেবতার নাম যুক্ত করা হতে থাকে। পিতার মতোই কীর্তিমান ছিলেন যোগোদীন্দ্র বনোয়ারীলাল বাহাদুর। শোনা যায় পিতার মতো তিনি শিক্ষা বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। কলকাতা হিন্দু স্কুল নির্মাণে তিনি প্রভূত অর্থ দান করেন। তিনি অবৈতনিক স্কলারশিপের জন্য অর্থও দিয়েছিলেন। তাঁর জনকল্যাণমুখী কাজের জন্য লর্ড বেন্টিংক তাঁকে ‘মহারাজা’ উপাধি প্রদান করেছিলেন। সেই থেকে সোনারুন্দি রাজপরিবারের সৃষ্টি হয়। এরপর কুমার বনোয়ারী অনন্তদেব ও কুমার বনোয়ারী মুকুন্দদেব বাহাদুর রাজত্ব করেন।
তবে নিত্যানন্দের মূল বংশধর কিন্তু মহারাজা যোগোবীন্দ্র দেব বাহাদুরের থেকেই রুদ্ধ হয়ে যায়। যোগোদীন্দ্র বনোয়ারীলাল বাহাদুরের ছোট ভাই ছিলেন যোগোবীন্দ্র বনোয়ারীলাল দেব বাহাদুর। তিনি নাকি লর্ড ক্যানিং এর সঙ্গে বহুমূল্য পোশাকের ব্যবসা করে ছিলেন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পর তিনি রাজত্ব পেলেও তাঁর কোনও সন্তান ছিল না। তিনি এক নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে একটি পুত্রসন্তান দত্তকরূপে গ্রহণ করেন।তাঁর নাম ছিল কুমার রাজবল্লভ।
শোনা যায়, বংশধর লোপ পাওয়ার জন্য এই বংশে কোনও সদ্যোজাত শিশুকে গরম তেলের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। সেই থেকে এই বংশে পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। আজও এই রাজবাড়ির চার কন্যা বিদেশে থাকায় শতাব্দীপ্রাচীন রাজমহল ভগ্নপ্রায়। দ্বিতীয় বৃন্দাবন গড়ে তোলার ইচ্ছায় যে দেবতাকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিল সেই দেবতা এখন বেতনভুক ব্রাহ্মণের মাধ্যমে পূজিত হন। রাজপরিবারের সঙ্গে পরিবারের গৃহদেবতাও তাঁর জৌলুস হারিয়েছেন ঠিকই তবু নিত্যানন্দের যে সদিচ্ছা তা এখনও ইতিহাসের পাতায়, ভগ্ন প্রাসাদের আনাচকানাচে, লোককথায়, প্রবাদ ও কিংবদন্তীর মধ্যে জীবন্ত হয়ে ফেরে।
Sonarundi Rajbari রাজবাড়ির প্রথম বা মূল ফটক গেটের করুণ অবস্থা। চারিদিকে আবর্জনা স্তুপ ও মাথার উপর জংলা গাছের আবরনে ভগ্নাবস্থায় পড়ে আছে গেটটি। যদিও বর্তমানে রাজ বাড়ি ভেঙে পড়েছে, কুঞ্জ গুলি ধ্বংস, মন্দিরের অবস্থাও ভালো না। নজর বাগান এখন অবহেলিত । চারটি অসাধারণ তোরণের দুটি সম্পূর্ণ ধ্বংস। বাকি দুটিও প্রায় শেষ। সরকার যদি এই দিকে নজর দেয় তাহলে এটিও একটি অসাধারণ পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বলেই দাবি ইতিহাসবিদদের।
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস