যোরহাট এর দর্শনীয় স্থান গুয়াহাটির থেকে ৩১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উজনি অসমের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। আহোম শাসনের শেষ রাজধানী যোরহাট কে অসমের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। অসমের চা উৎপাদনের অন্যতম স্থান জোড়হাট প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে জনপ্রিয়। মাজুলী মহকুমা জোড়হাট জেলার এক অংশ। মাজুলী জোড়হাট জেলার সাথে অসমের একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটনস্থল। জোড়হাটে টোকোলাই চা গবেষণা কেন্দ্র, হাতীগড় শিবদোল, বুঢ়ীগোসানী দেবালয়, গরখীয়া দোল, ঢেকীয়াখোরা বর নামঘর, লাচিত বরফুকন মৈদাম, অসম সাহিত্য সভার মুখ্য কার্য্যালয় সাল্দ্রকান্ত সন্দিকৈ ভবন ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য পর্যটন স্থান আছে।
যোরহাটকে অসমের সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। যোরহাটের সংস্কৃতিক প্রেমী জনসাধারনের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে নগরটিতে এখনও পুরানো ঐতিহ্যের সাক্ষর দেখা যায়। ১৯১৫ সনে যোরহাট সাহিত্য সভা স্থাপিত হয়। অসম সাহিত্য সভার এক মুখ্য কার্য্যালয় রাধাকান্ত সন্দিকৈ কর্তৃক দান দেওয়া চন্দ্রকান্ত সন্দিকৈ ভবন এখানেই অবস্থিত। যোরহাট জেলা অসমের বহুসংখ্যক প্রসিদ্ধ মণিসীর জন্মস্থান। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাধ্যক্ষ কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার বিজয়ী বীরেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য, নীলমণি ফুকন ও অন্যান্য বহুসংখ্যক প্রসিদ্ধ কবি, সাহিত্যিক, গবেষক পণ্ডিত, কারিকরী বিশারদ ও সাংবাদিক যোরহাটে জন্মগ্রহণ করেছেন।
দক্ষিণপাট সত্র- দক্ষিণপাট সত্র হল অসমের চারটি রাজসত্রের মধ্যে দ্বিতীয় সারির সত্র। শিষ্যের সংখ্যা অন্যান্য রাজসত্রের মধ্যে তুলনায় বেশি। আহোম রজা জয়ধ্বজ সিংহের সময় ১৫৮৪ শকে মাজুলিতে স্থাপন করা হয়। প্রথম সত্রাধিকার ছিলেন শ্রীশ্রী বনমালিদেব। আউনীআটী সত্র- আউনীআটী সত্র হল অসমএর প্রথম শ্রেণীর রাজসত্র আহোম রাজা জয়ধ্বজ সিংহ মাজুলীতে ১৫৭৫ শকে এই সত্র নির্মাণ করান। বর্তমান সত্রাধিকারী হলেন শ্রীশ্রী পীতাম্বর দেব গোস্বামী। ঠেঙাল ভবন- ঠেঙাল ভবন হল অসমের জোড়হাট জেলাতে অবস্থিত একটি পুরানো ভবন রায়বাহাদুর শিরপ্রসাদ বরুয়া ১৮৮০এর দশকে ঠেঙাল ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন।১৯২৯ সালে তিনি এখানে একটি ছাপাশাল স্থাপন করান। প্রথমে, এর থেকে একটি সাপ্তাহিক বাতরি কাকত প্রকাশিত হয়েছিল।
যোরহাট নগর যোরহাট লোকসভার অন্তর্গত। বর্তমান সাংসদ হচ্ছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গৌরব গগৈ। বর্তমান বিধায়ক হচ্ছেন ভারতীয় জনতা পার্টির হিতেন্দ্র নাথ গোস্বামী।
তাহলে জেনে নেওয়া যাক যোরহাট এর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। জোড়হাট জিমখানা ক্লাব- স্থাপিত হবার বছর থেকে এখানে ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, সব বিজয়ীকে “গভার্ণরস্ কাপ” প্রদান করা হয়।এখানে থাকা ‘নাইন হোল গল্ফ কোর্স’ এশিয়ার অন্যতম পুরানো গল্ফ কোর্স ও বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরানো এখানে অনেক লন টেনিস গ্রাস কোর্ট, সুইমিং পুল, বিলিয়ার্ডস্, পোলো ও সিনেমা থিয়েটারের সুবিধা আছে।
চন্দ্রকান্ত সন্দিকৈ ভবন রাধাকান্ত সন্দিকৈ কর্তৃক দান করা চন্দ্রকান্ত সন্দিকৈ ভবন অসম সাহিত্য সভার মুখ্য কার্য্যালয়। ১৯২৬ এটি নির্মাণ করা হয়। যোরহাট থেকে চন্দ্রধর বরুয়া, ডিম্বেশ্বর নেওগ, মিত্রদেব মহন্ত ইত্যাদি ব্যক্তিরা অসম সাহিত্য সভায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
বঙাল পুখুরী বঙাল পুখুরী যোরহাট নগরের দক্ষিণে ন-আলি পথের পাশে অবস্থিত বঙাল পুখুরী। ১৭৩৯ সালে বদন বরফুকন স্নান করতে যাওয়ার সময় রূপসিং বঙাল তাকে হত্যা করেন। হত্যা করা পুরস্কারের ধন দিয়ে রূপসিং বঙাল একটি পুকুর খনন করান। হত্যা করা ধনে নির্মিত পুকুর বলে জনসাধারন এই পুকুরের জল ব্যবহার করেনা।
বুঢ়ীগোসানী দেবালয় বুঢ়ীগোসানী দেবালয় হচ্ছে যোরহাট নগরের মাঝে স্থিত গড় আলি পথের পূর্বদিকে স্থিত এক শাক্ত মন্দির। ১৭০৮ সালে আহোম রাজা রুদ্রসিংহ জয়ন্তীয়া রাজ্য থেকে দেবির প্রতিমা এনে গড়গাঁও-এ প্রতিষ্ঠা করেন। গড়গাঁও থেকে রংপুর ও রংপুর থেকে যোরহাটে আহোম রাজ্যের রাজধানী স্থানান্তর হওয়ায় দেবীর মন্দির বর্তমান স্থানে স্থাপিত হয়। দেবালয়টিতে দুর্গা দেবীর প্রতিমূর্তি রয়েছে। পূর্বকালে বুঢ়ীগোসানী দেবালয় বরপূজাঘর দোল নামে পরিচিত ছিল।
রজা মৈদাম রজামৈদাম রজা মৈদাম হচ্ছে ১৮৯৪ সালের ১ অক্টোবরে মৃত্যু হওয়া আহোম রাজা পুরন্দর সিংহের সমাধীস্থল। এটি টোকোলাই নদীর দক্ষিণ পারে অবস্থিত।
যোরহাট জিমখানা ক্লাব যোরহাট জিমখানা ক্লাব ১৮৭৬ সালে যোরহাটের চেকনীধরা গাঁও নামক স্থানে ডি. স্লিমন নামক ব্যক্তি দ্বারা স্থাপিত হয়। স্থাপিত হওয়ার সময় থেকে এখানে ঘোঁড়া দৌর অনুষ্ঠিত হয় বিজয়ীকে গভার্ণরছ কাপ প্রদান করা হয়। এখানকার নাইন হল গল্ফ কর্স এশিয়ার সবচেয়ে পুরাতন ও বিশ্বের তৃতীয় পুরাতন গল্ফ কর্স। এখানে লন টেনিস গ্রাস কর্ট, সুইমিং পুল, বিলিয়ার্ডস, পোলো ও সিনেমা থিয়েটারের সুবিধা রয়েছে। ক্রিকেটের জন্য যোরহাট জিমখানা মাঠ র্য়েুছে। নগর থেকে ক্লাব অভিমুখে পথটি ব্রিটিশ দ্বারা নির্মিত প্রথম পাকা পথ।
উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নগরের সহিত যোরহাট স্থলপথ দ্বারা সংযুক্ত। তরাজান কটকীপুখুরী নামক স্থানে আন্তঃরাজ্যিক বাস আস্থান অবস্থিত। ৩৭নং রাষ্ট্রীয় ঘাইপথ নগরটিকে সম্পূর্ণ অসমের অন্যান্য শহরের সহিত সংযুক্ত করেছে। যোরহাট ভারতীয় রেলসেবার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলসেবার অন্তর্গত। নগরটির ভিতরে স্থিত যোরহাট রেল স্টেশন ও কিছু দূরত্বে স্থিত মরিয়নি রেল জংশন। গুয়াহাটি-যোরহাট জন শতাব্দী এক্সপ্রেশ ও গুয়াহাটি-যোরহাট-মরিয়নি ইন্টারশিটি এক্সপ্রেশ হচ্ছে এখানকার প্রধান রেল সংযোগ। যোরহাট বিমান বন্দর বরৈয়া বিমান বন্দর নামে পরিচিত। এটি নগরের মাঝে অবস্থিত। এই বিমানবন্দর থেকে নিয়মিতভাবে গুয়াহাটি, কলকাতা, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুতে বিমান চলাচল করে।