পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম একটি জেলা হল Hooghly District হুগলি জেলা। চুঁচুড়া শহরে এই জেলার সদর দফতর অবস্থিত। Hooghly District হুগলি জেলার নামকরণ করা হয়েছে এই জেলার অন্যতম প্রধান শহর হুগলির নামানুসারে। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারের মতে, ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে পর্তুগিজ বণিকেরা সপ্তগ্রাম থেকে সরে এসে অধুনা হুগলি অঞ্চলে তাদের পণ্য মজুত করার জন্য যে গুদাম বা গোলা তৈরি করেছিল, সেই গোলা শব্দ থেকেই হুগলি নামের উৎপত্তি।
সেই সূত্রে Hooghly District হুগলি জেলার নামটির সঙ্গে কোনও দুর্গের সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে বলে যদুনাথ সরকার মনে করেন। তাঁর মতে, পর্তুগিজদের ভাষায় ও-গোলিম বা ও-গোলি কথাটিই বাঙালিদের উচ্চারণে হুগলি-তে পরিণত হয়েছিল। শম্ভুচন্দ্র দে অবশ্য এই মত স্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, এই অঞ্চলে হুগলি নদীর তীরে প্রচুর হোগলা গাছ ছিল। হোগলা গাছ থেকেই নদী ও এলাকার নামকরণ হয় হুগলি এবং এই হুগলি নামটিই বিকৃত হয়ে গোলিন বা গোলিম হয়েছিল। প্রমাণস্বরূপ তিনি বলেন, আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে হুগলি নামটির সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় এবং উক্ত গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, সাতগাঁও (সপ্তগ্রাম) ও হুগলি বন্দর দু’টির ব্যবধান ছিল মাত্র আধ ক্রোশ এবং দুই বন্দরই ছিল বিদেশিদের প্রভাবাধীন।
আইন-ই-আকবরি-র অল্পকাল পরে লেখা পর্তুগিজ লেখক ফারিয়া সোউজারের গ্রন্থে “গোলিন” নামটি পাওয়া যায়। ১৬২০ সালে হিউগেস ও পার্কারের পত্রাবলিতে হুগলিকে “গোল্লিন” নামে অভিহিত করা হয়েছে। আবার ১৬৬০ সালে ওলন্দাজ লেখক মাথুজ ফান দেন ব্রুক এই অঞ্চলটিকে “Oegli” ও “Hoegli” নামে উল্লেখ করেছেন, যা বাংলা “হুগলি” নামটির প্রায় অনুরূপ। এই জন্য শম্ভুচন্দ্র মনে করতেন, “হুগলি” নামটি কোনও বিদেশির দেওয়া নাম নয়। অন্য মতে, পর্তুগিজেরা হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে বর্তমান হুগলি সংশোধনাগার ও বাবুগঞ্জের মধ্যবর্তী অঞ্চলে গোলঘাট এলাকায় দুর্গ নির্মাণ করে এবং গোলঘাট দুর্গের নাম থেকেই “হুগলি” নামটির উৎপত্তি।১৭৯৫ সালে ইংরেজরা প্রশাসনিক কারণে Hooghly District হুগলি জেলা তৈরি করে ছিল। হাওড়া তখনও হুগলি জেলার অংশ ছিল। এই জেলার দক্ষিণাংশ নিয়ে হাওড়া স্বতন্ত্র জেলা হিসাবে গঠিত হয়েছিল ১৮৪৩ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি। ১৮৭২ সালের ১৭ জুন ঘাটাল ও চন্দ্রকোনা থানা মেদিনীপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। প্রাচীনকালে সুহ্ম বা দক্ষিণ রাঢ়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল হুগলি জেলা। নদী, খাল, বিল অধ্যুষিত এই অঞ্চল ছিল কৈবর্ত ও বাগদিদের আবাসস্থল।
এদের উল্লেখ রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত, মনুসংহিতা এবং পঞ্চম অশোকস্তম্ভ লিপিতে। মৎস্য শিকারই ছিল এদের প্রধান জীবিকা।১৪৯৫ সালে বিপ্রদাস পিল্লাই রচিত মনসামঙ্গল কাব্যে হুগলি নামের উল্লেখ দেখা যায়। এর থেকে বোঝা যায় জেলার নামকরণ বিদেশীকৃত নয়। কারণ এই রচনা কালের ২২ বছর পর পর্তুগিজরা বাংলায় প্রবেশ করেছিল। ১৫৯৮ সালে রচিত আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি গ্রন্থেও হুগলি নামের স্পষ্ট উল্লেখ আছে। ত্রিবেনীতে অবস্থিত জাফর খাঁর মসজিদ ও তার মাদ্রাসায় উল্লিখিত প্রতিষ্ঠা তারিখ থেকে অনুমান করা যায় ১২৯৮ সালে জেলার উত্তারংশ মুসলমান শাসনভুক্ত হয়েছিল।
১৫১৭ সালে পর্তুগিজরা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বঙ্গদেশে প্রবেশ করে। ১৫৩৬ সালে সুলতান মাহমুদ শাহের দেওয়া সনদের বলে পর্তুগিজরা ব্যবসা শুরু করে সপ্তগ্রামে। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে পলি জমে সরস্বতী নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়ে ভাগীরথীর খাতে এই প্রবাহ পরিবর্তিত হলে পর্তুগিজরা ভাগীরথীর তীরে হুগলি বন্দর গড়ে তোলে। ১৮২৫ সালে ওলন্দাজ ও ১৬৩৮ ইংরেজ এই বন্দরে ব্যবসা শুরু করেছিল। ওলন্দাজরা পরে চুঁচুড়ার দখল পায় নবাবদের আনুকূল্যে। ১৮২৫ সালের ৭ মে চুঁচুড়া ইংরেজদের দখলে আসে। চুঁচুড়ার নিকটবর্তী চন্দননগর ছিল ফরাসিদের দখলে।
পশ্চিমবঙ্গকে পাঁচটি উপভাষা অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। সমগ্র হুগলি জেলা রাঢ়ী উপভাষা অঞ্চলের মধ্যে অবস্থান করে। বর্ধমান, বীরভূম, হাওড়া, নদিয়া, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে রাঢ়ী অঞ্চলের বিস্তার। স্থানভেদে রাঢ়ী উপভাষার রূপভেদ আছে। রাঢ়ীকে মূল দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে – পশ্চিম রাঢ়ী ও পূর্ব রাঢ়ী। হুগলি জেলা পূর্ব রাঢ়ীর অন্তর্গত। পূর্ব রাঢ়ীর উপরেই বাংলা মান্যভাষা প্রতিষ্ঠিত। উপভাষা যেমন জেলা ভেদে ভিন্নতা চোখে পড়ে, তেমনি জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
রাঢ়ীর বিভাষা (Sub-dialect) অঞ্চল হল হুগলি। মৌখিক উপভাষা স্থানভেদে যেমন ভিন্ন হয় তেমনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানের কারণে আলাদা হতে পারে। হুগলির সীমানায় বর্ধমান, বাঁকুড়া, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, মেদিনীপুর ও হাওড়া জেলা অবস্থান করছে, তাই ওই সমস্ত জেলার ভাষার প্রভাব সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে পড়েছে। আদীবাসী অধুষ্যিত অঞ্চলে সাঁওতাল, কোঁড়া, মুণ্ডারি ভাষা প্রচলিত। শহরাঞ্চলে হিন্দিভাষীর বসবাস দেখা যায়। গ্রীয়ারসন সাহেব প্রথম বাংলা উপভাষা অঞ্চলকে জরিপ করেন। তিনি সমগ্র বাংলাকে দুটি ভাগে ভাগ করেন। Western ও Estern।
প্রথমটির কেন্দ্র কলকাতা, দ্বিতীয়টির ঢাকা। হুগলি নদীর তীরবর্তী হুগলি জেলার ভাষাকেই পশ্চিমা উপভাষার আদর্শ রূপ বলে অভিমত জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম ভাগে বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত একটি বিস্তৃত সমভূমি অঞ্চলের নাম রাঢ়। এর সীমানা পশ্চিমে ছোটনাগপুর মালভূমির প্রান্তভাগ থেকে পূর্বে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চল ঈষৎ ঢেউ খেলানো ও এর ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে। ‘রাঢ়’ শব্দটি এসেছে সাঁওতালি ভাষার ‘রাঢ়ো’ শব্দটি থেকে, যার অর্থ ‘পাথুরে জমি’। অন্যমতে, গঙ্গারিডি রাজ্যের নাম থেকে এই শব্দটি উৎপন্ন।
সুপ্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চল বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের অন্যতম প্রধান অবদানকারী। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যেও রাঢ়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতে সুহ্ম ও তাম্রলিপ্তকে পৃথক করে দেখা হলেও গুপ্ত শাসনে রচিত দণ্ডীর ‘দশকুমারচরিত’-এ বলা হয়েছে ‘সুহ্মেষু দামলিপ্তাহ্বয়স্য নগরস্য’। অর্থাৎ দামলিপ্ত (তাম্রলিপ্ত) সুহ্মেরই একটি নগর ছিল। ধোয়ীর পবনদূত কাব্যে রাঢ় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে – গঙ্গাবীচিপ্লুত পরিসরঃ সৌধমালাবতংসো বাস্যতুচ্চৈ স্তুয়ি রসময়ো বিস্ময়ং সুহ্ম দেশঃ। অর্থাৎ, ‘যে-দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গঙ্গাপ্রবাহের দ্বারা প্লাবিত হয়, যে দেশ সৌধশ্রেণীর দ্বারা অলংকৃত, সেই রহস্যময় সুহ্মদেশ তোমার মনে বিশেষ বিস্ময় এনে দেবে।
’ পরবর্তীকালে রচিত ‘দিগ্বিজয়-প্রকাশ’-এ বলা হয়েছে – গৌড়স্য পশ্চিমে ভাবে বীরদেশস্য পূর্বতঃ। দামোদরোত্তরে ভাগে সুহ্মদেশঃ প্রকীর্তিতঃ। অর্থাৎ, গৌড়ের পশ্চিমে, বীরদেশের (বীরভূম) পূর্বে, দামোদরের উত্তরে অবস্থিত প্রদেশই সুহ্ম নামে খ্যাত। এই সব বর্ণনার প্রেক্ষিতে বর্তমান হুগলি জেলাকেই প্রাচীন রাঢ়ের কেন্দ্রস্থল বলে অনুমান করা হয় এবং এর সীমানা বীরভূম থেকে মেদিনীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে ধারণা। হুগলি জেলার ভাষায় ক্রিয়ার সাথে ‘উনি’বা ‘লুম’প্রত্যয় যুক্ত হতে দেখা যায়। যেমন – খাবুনি,যাবুনি,করবুনি,শোবুনি,খেলুম, গেলুম ইত্যাদি। কখনো ক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপের প্রয়োগ ঘটে। যেমন – চললাম> চললুম> চননু,বননু,করনু ইত্যা। কিছু শব্দ প্রয়োগ এখানের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছে। যেমন – বাকুল(বাড়ির অন্দরমহল),মোদ্দার (দরজার চৌকা), লাদ (গরু বা মহিষের বিষ্ঠা),পাট-সারা (কাজ শেষ করা) ইত্যাদি।
হুগলি জেলা চারটি মহকুমায় বিভক্ত: চুঁচুড়া সদর, চন্দননগর, শ্রীরামপুর ও আরামবাগ। চুঁচুড়া মহকুমায় সদর দপ্তর হুগলি-চুঁচুড়া। এই মহকুমা ৫ টি পঞ্চায়েত সমিতি, ৯ টি থানা, ৫ টি কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট ব্লক, ৬৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৭৫৬ মৌজা, ৭৪১ জনবসতিপূর্ণ গ্রাম, ২ টি পৌরসভা, ১ টি প্রবৃদ্ধি এবং ২৩ শুমারি শহর রয়েছে। পৌরসভা হুগলি চুঁচুড়া পৌরসভা এবং বাঁশবেরিয়া পৌরসভা। আদমশুমারির শহরগুলি হল: কোলা, হংসঘর, রঘুনাথপুর, মধুসূদনপুর, আমোদঘাটা, আলিখোজা, শঙ্খনগর, চক ধর্মপুর, সিমলা, বাধাগাছি, মিরধঙ্গ,কেওটা, বানসবেড়িয়া, মানুশপুর, কুলিহাঁদা, কোদালিয়া, নলডাঙ্গা, শ্রীপুর, পান্ধজুরা ।
চন্দননগর মহকুমার সদর দপ্তর হল চন্দননগর ।এই মহকুমায় ৫ টি থানা, ৩ টি কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট ব্লক, ৩ টি পঞ্চায়েত সমিতি, ৪১ টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৩৫২ মৌজা, ৩৩৯ জন জনবহুল গ্রাম, ১ টি পৌরসভা, ৩ টি পৌরসভা এবং ৭টি আদমশুমারি শহর রয়েছে । একক পৌর কর্পোরেশন হলেন চন্দনারনগর পৌর কর্পোরেশন । পৌরসভাগুলি হলেন তারাকেশ্বর পৌরসভা, ভদ্রেশ্বর পৌরসভা এবং চ্যাম্পদানি পৌরসভা । সেন্সাস টাউন হল সিঙ্গুর, নাসিবপুর, জগতনগর, বরগাছিয়া , বলরামবাটি , বারুইপাড়া এবং বোড়াই ।
শ্রীরামপুর মহকুমাটির সদর দপ্তর অবস্থিত শ্রীরামপুর শহরে। এই মহকুমায় চণ্ডীতলা-১, চণ্ডীতলা-২ , জাঙ্গিপাড়া এবং শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া এই চারটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক রয়েছে। এছাড়া শ্রীরামপুর পৌরসংস্থা, উত্তরপাড়া কোতরং পৌরসভা, কোন্নগর পৌরসভা, রিষড়া পৌরসভা, বৈদ্যবাটি পৌরসভা এবং ডানকুনি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। বারিঝাটি, গরালগাছা, কৃষ্ণপুর, মৃগালা, রঘুনাথপুর,দক্ষিণ রাজ্যধরপুর, বামুনারি, রিষড়া, নবগ্রাম কলোনি, নবাবপুর , পূর্ব তাজপুর, কানাইপুর, খারসরাই, বেগমপুর, চিকরান্ড, পায়রাগাছা, মনোহরপুর, মশাট, গঙ্গাধরপুর, জঙ্গলপাড়া, মনিরামপুর, কুমীরমোড়া, ভগবতীপুর, রমানাথপুর, দুধকলমী হল এই মহকুমার সেন্সাস টাউন।আরামবাগ মহকুমা চারটি থানা, ছয়টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ছয়টি পঞ্চায়েত সমিতি, ৬৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৫৬৭টি মৌজা, ৫৫৪টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মহকুমার সদর তথা একমাত্র পৌরশহরটি হল আরামবাগ।২০১১ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, হুগলি জেলার মোট জনসংখ্যা ৫,৫১৯,১৪৫, জনসংখ্যার নিরিখে ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যে হুগলি জেলা ষোড়শ স্থানাধিকারী। এই জেলার জনঘনত্ব ১,৭৫৩ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার ২০০১-২০১১ দশকে হুগলি জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৯.৪৯ শতাংশ। এই জেলার লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৫৮ জন মহিলা এবং সাক্ষরতার হার ৮২.৫৫ শতাংশ।
২০১১ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, হুগলি জেলার সাক্ষরতার হার ৮১.৮০ শতাংশ। চুঁচুড়া মহকুমার সাক্ষরতার হার ৭৯.১৭ শতাংশ, চন্দননগর মহকুমার ৮৩.০১ শতাংশ, শ্রীরামপুর মহকুমার ৮৬.১৩ শতাংশ এবং আরামবাগ মহকুমার সাক্ষরতার হার ৭৯.০৫ শতাংশ। হুগলি জেলা জুড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩,০১৩ টি , মধ্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫২ টি, উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৯২ টি , উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালযয়ের সংখ্যা ৩৫৯ টি , সাধারণ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৮ টি , প্রযুক্তিগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৮ টি।
হুগলী জেলার জাঙ্গিপাড়া থানার অনর্গত সীতাপুর গ্রামে অবস্থিত সীতাপুর এন্ডাওমেন্ট সিনিয়র মাদ্রাসা , ১৭৫১ সালে স্থাপিত হয় হয় এই প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। শ্রীরামপুর কলেজ ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান।১৮১৮ সালে উইলিয়াম কেরি , জোশুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড নামে তিনজন খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক দেশীয় পুরোহিত সম্প্রদায় সৃষ্টির মানসে ভারতীয় খ্রিষ্টানদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।১৮১৭ সালে হাজি মুহাম্মদ মহসিন হগলী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন । Hooghly District হুগলি জেলার দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল কামারপুকুর, এই গ্রামে ঊনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু ধর্ম গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের পৈত্রিক বাড়ি ও জন্মস্থান অবস্থিত। তারকেশ্বর Hooghly District হুগলি জেলার তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান তীর্থক্ষেত্র। বাবা তারকনাথের মন্দির এর জন্য তারকেশ্বর সারা ভারতজুড়ে সমাদৃত। হুগলি জেলার একটি অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ মন্দির হল হংসেশ্বরী মন্দির।এইপাঁচতলা ‘তেরোরত্না’ মন্দিরটি বাঁশবেরিয়া এবং ত্রিবেণী রেল স্টেশনের কাছে অবস্থিত।ব্যান্ডেল হুগলির বন্দর বলে মনে হয়।হুগলি জেলার দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল বৈদ্যবাটি
এটি পর্তুগিজ এবং মোগলদের সময়ের। পর্তুগিজদের একমাত্র ভরসা ছিল চার্চ এবং মঠ।এছাড়াও হুগলির আঁটপুরের মন্দির , Hooghly District হুগলির গোঘাট থানার শ্যামবাজার গ্রামের ভুবনেশ্বর শিব মন্দির , হুগলি ইমামবাড়া , শ্রীরামপুর কলেজের উইলিয়াম কেরি যাদুঘর এই জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান। এই জেলায় জন্ম গ্রহন করেছেন বেশ কিছু বিশিষ্ঠ বেক্তি , এই জেলার প্রথিতযশা মানুষদের মধ্যে রয়েছে প্রখ্যাত একজন বাঙালী লেখক, ঔপন্যাসিক, ও গল্পকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম দেবানন্দপুর গ্রামে৷ ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক অক্ষয়চন্দ্র সরকারের জন্মস্থান এই জেলার চুঁচুড়ায়৷ রাজা দিগম্বর মিত্রর জন্মস্থান কোন্নগর, তিনি কলকাতার প্রথম বাঙালী শেরিফ৷কানাইলাল দত্তর জন্মস্থান এই জেলার চন্দননগর , তিনি ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব ।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক ,তাঁর আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় জন্মস্থান খন্যান, তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, পৈতৃক নিবাস গুপ্তিপাড়ার নিকট রামেশ্বরপুরে৷ তিনি ছিলেন একজন কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং প্রবন্ধকার। মতিলাল রায় জন্মস্থান চন্দননগর, তিনি একজন বাঙালি বিপ্লবী এবং “প্রবর্তক সংঘ”-এর প্রতিষ্ঠাতা৷ কিশোরীচাঁদ মিত্র , তাঁর পূর্বপুরুষের আদিবাস ছিল হুগলি জেলায়৷
তিনি লেখক, সরকারি কর্মকর্তা, সমাজসেবক। তাঁর ভাই প্যারীচাঁদ মিত্র৷প্যারীচাঁদ মিত্র তাঁর পূর্বপুরুষের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলায়৷ তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক, তাঁর ছদ্মনাম “টেকচাঁদ ঠাকুর”৷ রাজা রামমোহন রায়, পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলার রাধানগর৷ তিনি ছিলেন ব্রাহ্মসভার প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালী দার্শনিক। এছাড়াও এই জেলার আরও কিছু বিশিষ্ঠ বেক্তিদের মধ্যে আছেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় , ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর , অক্ষয়কুমার বড়াল, নগেন্দ্রনাথ বসু, বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় , বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়, প্যারীমোহন সেনগুপ্ত , প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় , অশোক মিত্র , অতুল্য ঘোষ, মোহিতলাল মজুমদার , পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত , মোহিতলাল মজুমদার, অজয় মুখোপাধ্যায়, মুরারী মোহন মুখোপাধ্যায় সহ প্রমুখ বেক্তি।
প্রশ্ন উত্তর পর্ব
হুগলি জেলায় Hooghly District কয়টি গ্রাম আছে? হুগলি জেলা পঞ্চায়েতে কতটি গ্রাম রয়েছে? উত্তর: হুগলি জেলা ২০৭ গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ১৯৫৬ টি গ্রাম রয়েছে।
হুগলি জেলার বিধানসভা কয়টি ও কি কি? ১৮ টি বিধানসভা এগুলি হল- ১৮৫ উত্তরপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র ১৮৬ শ্রীরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র ১৮৭ চাঁপদানি বিধানসভা কেন্দ্র ১৮৮ সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্র ১৮৯ চন্দননগর বিধানসভা কেন্দ্র ১৯০ চুঁচুড়া বিধানসভা কেন্দ্র ১৯১ বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্র ১৯২ পান্ডুয়া বিধানসভা কেন্দ্র ১৯৩ সপ্তগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র ১৯৪ চণ্ডীতলা বিধানসভা কেন্দ্র ১৯৫ জাঙ্গিপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র ১৯৬ হরিপাল বিধানসভা কেন্দ্র ১৯৭ ধনেখালি বিধানসভা কেন্দ্র ১৯৮ তারকেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্র ১৯৯ পুরশুড়া বিধানসভা কেন্দ্র ২০০ আরামবাগ বিধানসভা কেন্দ্র ২০১ গোঘাট বিধানসভা কেন্দ্র ২০২ খানাকুল বিধানসভা কেন্দ্র ।
হুগলি জেলায় লোকসভা আসন কয়টি? আরামবাগ লােকসভা কেন্দ্র, হুগলি লােকসভা কেন্দ্র ও শ্রীরামপুর লােকসভা কেন্দ্র।
হুগলি জেলার রাজধানীর নাম কি? হুগলি জেলা বা হুগলী জেলা হলো ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক জেলা। চুঁচুড়া শহরে এই জেলার সদর দফতর অবস্থিত।
হুগলি জেলার প্রধান ফসল কি কি? হুগলি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম অর্থনৈতিকভাবে উন্নত জেলা। এটি রাজ্যের প্রধান পাট চাষ , পাট শিল্প এবং পাট বাণিজ্য কেন্দ্র।
হুগলি জেলার বিখ্যাত কি? পর্যটক স্থান ইমামবাড়া , ঐতিহাসিক … রামকৃষ্ণ মিশন ও মন্দির , প্রাকৃতিক/মনোরম সৌন্দর্য … লাহিড়ী বাবার আশ্রম’ , ধৰ্মীয়, প্রাকৃতিক/মনোরম সৌন্দর্য … চন্দননগর স্ট্যান্ড , অভিযানমূলক, ঐতিহাসিক … হংসেশ্বরী মন্দির , ঐতিহাসিক … ব্যান্ডেল চার্চ।
হুগলি কেন বিখ্যাত? Hooghly district – হুগলি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম অর্থনৈতিকভাবে উন্নত জেলা। এটি রাজ্যের প্রধান পাট চাষ, পাট শিল্প এবং পাট বাণিজ্য কেন্দ্র । ত্রিবেণী, ভদ্রেশ্বর, চাম্পদানি এবং শ্রীরামপুরে হুগলি নদীর তীরে পাটকল রয়েছে।
হুগলি নদীর অপর নাম কি? হুগলি নদী (এছাড়াও হুগলি বা হুগলি বানান) হল গঙ্গার পশ্চিমতম শাখা , ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। এটি এর উপরের অংশে ভাগীরথী নামে পরিচিত।
হুগলি জেলা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? ১৭৯৫ সালে প্রশাসনিক প্রয়োজনে বর্ধমান জেলা দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল, উত্তর বিভাগকে বর্ধমান এবং দক্ষিণ বিভাগ হুগলি বলা হয়। ততকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ১৪ টি জেলায় বিভক্ত ছিল যার মধ্যে হুগলি ছিল একটি। ১৮২২ সালে হুগলি পৃথক কালেক্টরেটে পরিণত হয়মিঃ ডাব্লু এইচ বেলী প্রথম কালেক্টর হন।
হুগলি জেলার জনসংখ্যা কত ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, হুগলি জেলার মােট জনসংখ্যা ৫,৫১৯,১৪৫ জন। পুরুষ জনসংখ্যা – ২,৮১৪,৬৫৩ জন মহিলা জনসংখ্যা – ২,৭০৪,৪৯২ জন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার – ৯.৪৬% জনঘনত্ব – ১,৭৫৩ জন/বর্গ কিলোমিটার লিঙ্গ অনুপাত – ৯৬১ জন মহিলা/১০০০ জন পুরুষ স্বাক্ষরতা – ৮১.৮০%
হুগলি জেলায় কয়টি থানা আছে ও কি কি? হুগলি-চুচুড়া জেলা সদর। এই জেলায়২৩ টি থানা, ১৮ টি উন্নয়ন ব্লক, 12টি পৌরসভা এবং ২০৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। পৌরসভা এলাকা ছাড়া, প্রতিটি মহকুমায় কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ব্লক রয়েছে যা গ্রামীণ এলাকা এবং সেন্সাস টাউনে বিভক্ত। এখানে ৪১ টি নগর ইউনিট রয়েছে: ১২ টি পৌরসভা এবং ৬৪ টি সেন্সাস টাউন ।
হুগলি জেলার মহকুমা : হুগলি জেলার মহকুমা ৪টি, এগুলি হল – চুঁচুড়া মহকুমা, চন্দননগর মহকুমা, শ্রীরামপুর মহকুমা ও আরামবাগ মহকুমা।
হুগলি জেলার ধৰ্ম ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, হুগলি জেলার মোট জনসংখ্যার ৮২.৮৯% মানুষ হিন্দু ধৰ্ম, ১৫.৭৭% মানুষ ইসলাম ধৰ্ম, ০.১৩% মানুষ খ্রিস্টান ধৰ্ম এবং বাকি মানুষেরা অন্যান্য ধর্ম পালন করেন।
হুগলি জেলার ব্লক সংখ্যা আছে ও কি কি : হুগলি জেলার ব্লক সংখ্যা হল ১৮টি, এগুলি হল – বলাগড় উন্নয়ন ব্লক, ধনিয়াখালী উন্নয়ন ব্লক, চুঁচুড়া মগরা উন্নয়ন ব্লক, পোলবা দাদপুর উন্নয়ন ব্লক, পান্ডুয়া উন্নয়ন ব্লক, সিঙ্গুর উন্নয়ন ব্লক, তারকেশ্বর উন্নয়ন ব্লক, হরিপাল উন্নয়ন ব্লক, জাঙ্গীপাড়া উন্নয়ন ব্লক, চণ্ডীতলা-১নং উন্নয়ন ব্লক, চণ্ডীতলা-২নং উন্নয়ন ব্লক, শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া উন্নয়ন ব্লক, আরামবাগ উন্নয়ন ব্লক, গোঘাট-১নং উন্নয়ন ব্লক, গোঘাট-২নং উন্নয়ন ব্লক, পুরশুড়া উন্নয়ন ব্লক, খানাকুল-১নং উন্নয়ন ব্লক ও খানাকুল-২নং উন্নয়ন ব্লক।