
গোত্র
গোত্র শব্দটির অর্থ বংশ বা গোষ্ঠীকে বোঝায়। Gotra in Hinduism সনাতন ধর্মে গোত্র মানে একই পিতার ঔরসজাত সন্তান-সন্ততি (সমূহ) দ্বারা সৃষ্ট বংশ পরম্পরা। কিন্তু গোত্র দ্বারা কখনো কখনো অঞ্চল এবং বিশেষ চিহ্ন নির্দেশ করে (টোটেম)। বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে, বংশের রক্ত প্রবাহিত হয় পুরুষ পরম্পরায়। সুতরাং বংশের রক্তের ধারক এবং বাহক হলো পুরুষ। সনাতন ধর্মের বংশ রক্ষার ধারায় ছিলেন, প্রথম সত্য যুগের শুরুতে ব্রহ্মার মানস সন্তানদের মধ্যে অন্যতম ঋষিগণ।
পরবর্তীকালে অন্যান্য ঋষির বংশ পরম্পরাও পরিলক্ষিত হয়। এই একেকজন ঋষির বংশ পরম্পরা তাদের নামে এক একটি গোত্র হিসেবে পরিচিত লাভ করে। সে হিসেবে একই গোত্রের বংশীয়গণ পরস্পর ভাইবোন। এমনকি একই বংশের স্বজনেরা পরবর্তীকালে জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে, সাধন-ভজন, পরমেশ্বর ভগবানের বাণী প্রচারের প্রয়োজনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লে পিতার নামের সাথে গোত্র নামের গুরুত্ব প্রকাশ পায়। যেমন- কাশ্যপ মুনির বংশধরেরা নিজেদের “কাশ্যপ গোত্রস্য” বা কাশ্যপ মুনির বংশ পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এভাবে পর্যায়ক্রমে আরও অনেক গোত্রের নাম পাওয়া যায়। সনাতন ধর্মে প্রকট আছে/অহরহ যেসব Gotra in Hinduism গোত্র দেখা যায় তা হলো কাশ্যপ গোত্র, ভর্দ্বাজ গোত্র, বশিষ্ট গোত্র, বৃহস্পতি , বিশ্বামিত্র , জাম্দগ্ন্য , শিব, মৌদ্গল্য , ভার্গব , শান্ডিল্য গোত্র, আলম্ব্যয়ন গোত্র, ধন্ন্বন্তরী , গৌতম , পরাশর , সাবর্ণ ,রাম , রজক ইত্যাদি। একই গোত্রের লোকজনকে সম্গোত্রীয় বলা হয়। সোজা কথা এরা পরস্পর নিকট-আত্মীয়। আর অন্যান্য গোত্রের লোকজনের সাথে তারা পরস্পর আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ এই কারণে যে, আমরা সবাই প্রপিতামহ ব্রহ্মা থেকে এসেছি যদিও আমাদের আদি পিতা-মাতা যথাক্রমে মনু ও শতরূপা।
Gotra in Hinduism সমগোত্র মানে একই পিতৃবংশ। যেমন কাশ্যপ । মুনি কশ্যপ ঋষির বংশধর। ব্রহ্মার মানস পুত্রগণের থেকে আগত প্রতিটি বংশ এক একটি গোত্র বা রক্তের ধারায় প্রবাহিত। একই গোত্র চারটি বর্ণে থাকতে দেখা যায়। কারণ, একই ঋষির সন্তানরা একেক সময়ে একেক কাজে মনোযোগী হয়ে থাকে। যে শাস্ত্র অধ্যয়ণ বা বুদ্ধিভিত্তিক (আধুনিক সমাজে যাকে বুদ্ধিজীবী বলা হয়) জীবিকা অবলম্বন করে সে ব্রাহ্মণ হিসেবে, রাজধর্ম পালনকারী ক্ষত্রিয়,
ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগী হলে সে বৈশ্য আর এসব পেশাগত লোকদের সেবা করেই সন্তুষ্ট অর্জনে আগ্রহীরা শূদ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে থাকে। এ গুণাবলীসমূহ কেউ জন্মে প্রাপ্ত হয় না, অর্জন করতে হয়। তাই বর্নাশ্রম সঠিক কিন্তু বর্ণপ্রথা ভুল ও মিথ্যা যা ক্ষত্রিয় ধর্ম পালনে পুরোপুরি অপারগ রাজা বল্লাল সেন তার রাজ-অপকর্ম ঢাকতে শুরু করেন ধার্মিক ও পন্ডিতদের অত্যাচার করে রাজ্য থেকে বিতারিত করে। আর এটা পুরোপুরি কার্যকর করেছেন তারই পুত্র রাজা লক্ষ্মণ সেন। সনাতন ধর্মে নিকটাত্মীয় বা সমগোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ।
কারণ হিসেবে বৈদিক শাস্ত্রসমূহ বিশেষ করে মনুসংহিতায় বলা হচ্ছে, একই রক্তের সম্পর্কের কারো সাথে বিবাহ হলে সন্তান বিকলাঙ্গ, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, মেধা ও বুদ্ধিহীন হয়। শিশু নানা রোগে জরাজীর্ণ হয়ে থাকে। তবে একান্তই প্রয়োজন হলে/ পাত্র-পাত্রী না পাওয়া গেলে ১৪ পুরুষ পেরিয়ে গেলে তখন বিবাহ করা যেতে পারে। তবে তা যথাসম্ভব এড়িয়ে চললেই ভালো। চিকিৎসা বিজ্ঞানও এটি স্বীকার করেছে। তারা বলছেন, নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের পরিণামে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। ”দ্য ল্যানসেট” সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
হিন্দু ধর্মের গোত্র কয়টি? গোত্রের সংখ্যা: হিন্দু সমাজে ৪৯ টিরও বেশি বিভিন্ন গোত্র রয়েছে, যার প্রত্যেকটির নামকরণ করা হয়েছে একজন ঋষির নামানুসারে যাকে প্রতিষ্ঠাতা পূর্বপুরুষ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্যাট্রিলিনিয়াল সিস্টেম: গোত্রগুলি সাধারণত পুরুষ লাইনের মধ্য দিয়ে চলে যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি সন্তান পিতার গোত্রের উত্তরাধিকারী হয়।
সব থেকে বড় গোত্র কি? এই গোত্রটি ব্রাহ্মণদের আটটি সর্বোচ্চ গোত্রের একটি। শাণ্ডিল্য গোত্র হল মৈথিল ব্রাহ্মণদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোত্র। মৈথিল ব্রাহ্মণদের মধ্যে শাণ্ডিল্য গোত্রের ৪৪টি মূল রয়েছে।
পৃথিবীর আদি ধর্ম কোনটি? এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা ১২০ কোটিরও বেশি, বা বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার ১৫-১৬%, যারা হিন্দু নামে পরিচিত। হিন্দু শব্দটি একটি উচ্ছসিত, এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত ধর্ম হিসেবে দেখা হয়।
দে পদবীর গোত্র কি? দে বা দে ( বাংলা : দে ), একটি স্থানীয় বাংলা উপাধি যা সাধারণত ভারত ও বাংলাদেশের বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। উপনামটি মূলত বাঙালি কায়স্থদের সাথে যুক্ত হয়েছে, তবে সুবর্ণ বণিক , তেলি , বারুজিবি , কাঁসারি, তাম্বুলী, বৈশ্য কাপালি , তাঁতী এবং বাংলার অন্যান্য জাতিদের মধ্যেও এটি পাওয়া যায়।
দাস পদবীর গোত্র কি? বাংলা, বিহার ও ঝাড়খণ্ড বাঙালি কায়স্থদের মধ্যে দাস একটি সাধারণ উপাধি। বাংলায়, উপাধিটি তফসিলি জাতি এবং সাধারণ জাতি উভয়ের দ্বারাও ব্যবহৃত হয়। বিহারে, এটি অম্বাশথা এবং করণ কায়স্থ বর্ণের লোকেরা ব্যবহার করে।
গোত্র চেনার উপায়? What is Gotra? সবচেয়ে সহজ উপায় হল আপনার বাড়ির বড়দের আপনার গোত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা । আপনার দাদা বা প্রপিতামহ বা আপনার বাবার কাছ থেকে এটি সম্পর্কে জানুন। আপনার পতিদারের গোত্র অর্থাৎ আপনার কাকা বা গ্রামের পতিদার আপনার মতো একই গোত্রের হবে, তাই আপনি এইভাবেও খুঁজে পেতে পারেন।
কাশ্যপ গোত্র মানে কি? কাশ্যপ উপাধির অর্থ ভারতীয় (উত্তর রাজ্য): সংস্কৃত কাশ্যাপ থেকে ‘কচ্ছপ’ এবং ‘হরিণ’ সহ অনেক অর্থ সহ একটি শব্দ। এটি একটি গোত্রের টোটেমিক নাম হিসাবে ব্যবহৃত হত (ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বহিরাগত গোষ্ঠী)। এটি একটি বিখ্যাত হিন্দু ঋষির নামও ছিল।
গোত্র শব্দের অর্থ কি? হিন্দু সংস্কৃতিতে , গোত্র ( সংস্কৃত : गोत्र) শব্দটিকে বংশের সমতুল্য বলে মনে করা হয়। এটি বিস্তৃতভাবে এমন লোকদের বোঝায় যারা একটি সাধারণ পুরুষ পূর্বপুরুষ বা প্যাট্রিলাইন থেকে অবিচ্ছিন্ন পুরুষ লাইনে বংশধর।
সনাতন ধর্মে প্রচলিত কয়েকটি গোত্রের নাম অচ্যুত | অত্রি | কংসারি অগস্ত্য | আলম্বায়ন | আত্রেয় | কাশ্যপ | মৌদগল্য | ভরদ্বাজ | বশিষ্ট | বৃহস্পতি | বিশ্বামিত্র | জামদগ্ন্য | শিব | ভার্গব | শান্ডিল্য | ব্যাসঋষি | ধনন্বন্তরি | পরাশর | চন্দ্রমহর্ষি | সাবর্ণ | কাত্যায়নী | গৌতম | ঘৃতকৌশিক | নাগঋষি | নাগেশ্বর | চান্দ্রায়ণ | বাঘ্রঋষি | হোবি ঋষি | বাতস্য | বৃদ্ধি | কৌন্ডল্য | শুনক | কৃষ্ণাত্রেয় | জাতুকর্ণ | কাণ্ব | কুশিক | আঙ্গিরস | গর্গ | বিষ্ণু | শক্তি | অলাদীশ | অত্রাশী | উদয়ঋষি | রজক |
বৈদিক শ্রৌতসূত্র অনুসারে ৩৮ টি ব্রাহ্মণ গোত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে
অগস্তা | অব্য | অনা | বৃক্ষ | অত্রি | আত্ৰেয় | আলম্বায়ন | আঙ্গিরস | কাঞ্চন | কাণ্ব | কাত্যায়ন | কাণ্বায়ণ | কাশ্যপ | কৌন্ডিন্য | কৌশিক | কৃঞ্চাত্রেয় | গর্গ | গোতম | গৌতম | ঘৃতকৌশিক | জমদগ্নি | জৈমিনি | পরাশর | বশিষ্ট | বাঘ্ৰপদ্য | বিশ্বামিত্র | বিষ্ণু | বৃদ্ধি | বৃহস্পতি | বাসুকি | বাৎস্য | ভরদ্বাজ | মৌদ্গল্য | সাবর্ণ | সাঙ্কতি | সোঁপায়ন | সৌকালীন | শক্ত্রি| শাণ্ডিল্য |