Tripura Durga Puja ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকাল বা পঞ্চদশ শতাব্দী থেকেই সম্ভবত দুর্গাপুজো শুরু হয়। এই রাজবংশে দেবী দুর্গার আরাধনার প্রথম প্রামাণ্য নিদর্শন মেলে মহারাজা রত্ন মাণিক্য (রাজত্বকাল ১৪৬৪-৬৭ খ্রিস্টাব্দ)-র মুদ্রায়। তবে সেই পুজো শারদীয়া ছিল না, ছিল বাসন্তি। অর্থাৎ, সেই পুজো হত বসন্তকালে। পুজো হতো রাজবংশের দুর্গা মন্দিরে।
কথায় বলে বারো মাসে তেরো পার্বণে মেতে থাকা বাঙালির সেরা পরব হল দুর্গাপুজো। তাই মা দুর্গার মর্তে আগমনকে কেন্দ্র করে কটা দিন বাংলার বাতাসে বয়ে চলে আনন্দের ধারা। অবশ্য শুধু বাংলা বললে ভুল হবে। বাংলার বাইরে বাস করা বাঙালিরাও মেতে ওঠেন এই পুজোয়। শুধু তাই নয়, বাংলার বাইরে যে আরেকটি বাংলাভাষী রাজ্য আছে সেখানেও পুজো হয় ধুমধাম করে। কথা হচ্ছে আমাদের দেশের বাঙালিদের দ্বিতীয় আস্তানা Tripura Durga Puja ত্রিপুরার দুর্গাপুজো নিয়ে। আর সেখানকার দুর্গাপুজোর কথা উঠলে প্রথমেই আসে দুর্গা বাড়ির পুজোর কথা।
লোকমুখে দুর্গা বাড়ি হলেও এটি আসলে ত্রিপুরার রাজবাড়ির দুর্গা মন্দির। ত্রিপুরার উজ্জয়ন্ত রাজপ্রাসাদের সামনে দণ্ডায়মান এই মন্দিরটি পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় দুর্গা মন্দির। ত্রিপুরায় রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পরেই সেখানে দুর্গা পূজার সূচনা হয়। রাজাদের আমলে শুরু হওয়া এই পুজোর বয়স ৫০০ বছর পার করেছে অনেক দিন হলো। রাজাদের রাজধানী বদলের সঙ্গে সঙ্গে এই রাজ মন্দিরের স্থানও বদল হয়েছে। প্রথমে ত্রিপুরার রাজাদের রাজধানী ছিল উদয়পুরে। ফলে দুর্গা মন্দিরটিও ছিল সেখানে। পরবর্তী সময়ে অমরপুর এবং আগরতলার পুরাতন হাভেলিতে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মন্দিরটি রয়েছে ত্রিপুরার উজ্জয়ন্ত রাজপ্রাসাদের সামনে। আগরতলায় দুর্গাবাড়ি মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৩৮ সালে। এর প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজা কৃষ্ণ কিশোর মাণিক্য বাহাদুর।
মাণিক্য রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকাল বা পঞ্চদশ শতাব্দী থেকেই সম্ভবত দুর্গাপুজো শুরু হয়। ত্রিপুরা রাজবংশে দেবী দুর্গার আরাধনার প্রথম প্রামাণ্য নিদর্শন মেলে মহারাজা রত্ন মাণিক্য (রাজত্বকাল ১৪৬৪-৬৭ খ্রিস্টাব্দ)-র মুদ্রায়। তবে সেই পুজো শারদীয়া ছিল না না, ছিল বাসন্তি। অর্থাৎ সেই পুজো হত বসন্তকালে। উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদের বয়স ১২০ বছরেরও বেশি। বর্তমান মন্দিরের বয়স প্রাসাদের প্রায় সমান। দুর্গা বাড়ির মা মহামায়া কিন্তু দাঁঢ়িয়ে আছে দুই হাত নিয়ে। মানে দেবী এখানে দ্বিভুজা। তা বলে ভাববেন না তাঁর বাকি আটটি হাত গায়েব হয়ে গেছে। দেবীর বাকি আটখানি হাত শাড়ির আঁচলে ঢাকা থাকে। আর এই রূপেই গত অর্ধ সহস্রাব্দ ধরে মা এখানে পূজিতা।
সনাতনী নিয়ম অনুযায়ী, দেবতার অন্নভোগের সময় কাউকে সামনে থাকতে নেই। কথিত আছে, একবার শারদীয়া দুর্গাপুজোর সময় নিয়ম মেনে মা দুর্গাকে দ্বিপ্রাহরিক অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। তখন রাজপুরোহিতের অনুমতি না নিয়েই দেবীর ভোগ দর্শনের জন্য দরজা খুলে ফেলেন ত্রিপুরার মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মাণিক্যর স্ত্রী তথা ত্রিপুরার মহারানি সুলক্ষণা। দরজা খুলেই নাকি তিনি দেখেন যে মা দুর্গা তাঁর দশ হাত দিয়ে অন্ন গ্রহণ করছেন। এই দৃশ্য দেখে তিনি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। ওই রাতেই মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মাণিক্যকে (অন্যমতে, রানি সুলক্ষণাকে) মা দুর্গা স্বপ্ন দেন যে পরের বছর থেকে যেন দুই হাতেই দুর্গা মূর্তি পুজো করা হয়। সেই থেকে মা এখানে দ্বিভুজা।
দুর্গা বাড়ির পুরোহিতও বংশ পরম্পায় মায়ের পুজো করে আসছেন। অর্থাৎ দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার সময় যিনি পুরোহিত ছিলেন, তাঁর বংশধরেরাই এখনও মন্দিরের পুরোহিত। মায়ের বোধন মহাষষ্ঠীতে হলেও সাবেকি নিয়মে এখন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। অতীতে মহানবমীতে ত্রিপুরার প্রাচীন রাজধানী উদয়পুরে অবস্থিত দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর মন্দিরে ত্রিপুরা রাজপরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষ পুজো দেওয়া হতো। উপস্থিত থাকতেন মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য স্বয়ং। কখনও কখনও তিনি নিজেই ঘোড়া চালিয়ে চলে যেতেন উদয়পুর।
মহাসমারোহে বিজয়া দশমীবিজয়া দশমীতে আয়োজন করা হতো অসম ভোজনের। এই অনুষ্ঠানে প্রজাদের সঙ্গে মাটিতে বসে খাবার খেতেন রাজা বীরচন্দ্র। ভোর পর্যন্ত চলত খাওয়াদাওয়া। দেবী দুর্গার বিসর্জনের দায়িত্ব ছিল ত্রিপুরার যুবরাজ রাধাকিশোরের। উপস্থিত থাকত ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের রাজ্যের প্রজারা। উজ্জয়ন্ত রাজপ্রাসাদের পাশে এখন যেখানে টাউন হল, সেখানে ছিল তৎকালীন উজির বাড়ি। তার সামনের ফাঁকা জায়গায় রাজ্যের সমস্ত বাড়ির দুর্গা প্রতিমাগুলিকে জড়ো করা হতো।
সমবেত ঢাক, কাঁসর সহকারে পরিবেশিত হত ধূপতি নৃত্য। প্রথমে রাজা, তারপর রানি প্রতিটি প্রতিমা দেখে প্রণাম জানাতেন। তারপর সুসজ্জিত হাতি, ঘোড়া, পদাতিক সৈন্যবাহিনীকে সামনে রেখে শুরু শোভাযাত্রা। সবার আগে থাকত প্রভুবাড়ি বা গোঁসাইবাড়ির প্রতিমা। তার পিছনে রাজবাড়ির প্রতিমা, উজিরবাড়ির প্রতিমা, অন্য সভাসদদের প্রতিমা এবং রাজবংশের বিভিন্ন সদস্যদের বাড়ির প্রতিমাগুলি সারিবদ্ধ ভাবে বাঁশের মাচায় চাপিয়ে কাঁধে নিয়ে দশমীঘাটের দিকে শোভাযাত্রা এগিয়ে যেত। বর্তমানে অবশ্য দুর্গা বাড়ির পুজো হয় সরকারি অর্থ সাহায্যে।
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস