চাঁচল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো Chanchal Raj Family Durga Puja সপ্তাদশ শতাব্দীর শেষভাগ৷ সেই সময় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি৷ শুধু বাংলা নয়, বিহারের কিছু অংশও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিল৷ দোর্দণ্ডপ্রতাপ হলেও প্রজাদরদী এবং ধর্মপ্রাণ হিসাবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব ভারত জুড়ে৷ ঘরে বসে নয়, হাতির পিঠে চেপে তিনি নিয়মিত বেরিয়ে পড়তেন নিজের রাজত্ব দেখাশোনা করতে৷ গঙ্গা-মহানন্দার দু’পাড়ে উর্বরা জমির চাষ পরিদর্শন, প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবরাখবর নেওয়া ছিল তাঁর রোজনামচা৷
Chanchal Raj Family Durga Puja চাঁচল রাজবাড়ি থেকে বেরোনোর পর কখনও কয়েকদিন, কখনও বা মাসাধিককাল পেরিয়ে ঘরে ফিরতেন৷ কথিত আছে, একবার তিনি যখন এভাবেই রাজত্ব দেখতে বেরিয়ে বাইরে রাত কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী চণ্ডী৷ রাজাকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, মহানন্দার সতীঘাটায় তাঁর চতুর্ভুজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে৷ রাজাকে সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷
শুরু করতে হবে দুর্গাপুজো৷ দেবীর আদেশ পেয়ে পরদিন সকালেই সতীঘাটায় চলে যান রাজা৷ স্বপ্নাদেশে বর্ণিত জায়গায় নদীতে নেমে তুলে আনেন দেবী চণ্ডীর মূর্তি৷ সেবার থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো৷ সেই পুজোর বয়স প্রায় ৩৫০ বছর হতে চলল৷ দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামচন্দ্র৷ সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো৷ পরবর্তীতে ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান রাজা৷ আদেশ অনুযায়ী সতীঘাটায় দেবীর আরেকটি মন্দির নির্মাণ করেন তিনি৷
তবে প্রথমে সেখানে মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়েই মন্দির তৈরি করা হয়৷ পরবর্তীতে রাজবংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয়৷ ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়েছে৷ এখনও সেখানে রয়েছে সেই দুর্গাদালান৷ প্রতি বছর এখানেই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়৷ পাকা মন্দির নির্মাণের পর রাজা শরৎচন্দ্র দুর্গাপুজোর জন্য সেই সময় সাত হাজার টাকা বরাদ্দ করেন৷ সেই সময় টাকার অংকটি নেহাত কম নয়৷
প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও সপ্তমী তিথিতে চাঁচল রাজবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মা চণ্ডীকে৷ দশমী তিথিতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান৷ সময় বয়ে গিয়েছে অনেকটাই৷ এখন সেই রাজা নেই, রাজ্যপাটও নেই৷ চাঁচল রাজবাড়িতেই এখন স্থাপিত হয়েছে কলেজ, মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালত সহ একাধিক সরকারি দপ্তর৷ তবে রাজবাড়ির একাংশে থাকা ঠাকুরবাড়ি এখনও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে৷ বর্তমানে চাঁচলরাজ ট্রাস্টি বোর্ড রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ি এবং রাজাদের প্রবর্তিত বিভিন্ন পুজো, মন্দির সংস্কার ইত্যাদি দেখাশোনা করে৷
ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারভাইজার পিনাকীজয় ভট্টাচার্য জানালেন, “এই পুজো অন্তত ৩০০ বছর পেরিয়ে গেল৷ কথিত আছে, ওই জায়গায় মহানন্দার তীরে এই রাজ পরিবারের একজন সতী হয়েছিলেন৷ তখন থেকেই জায়গাটি সতীঘাটা নামে পরিচিত৷ মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে মহারাজ রামচন্দ্র রায়চৌধুরি নদী থেকে অষ্টধাতুর চণ্ডী বিগ্রহ পান৷ তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজো শুরু হয়৷ পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরি, শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরি এখানে রাজত্ব করেন৷ পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্ব ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায়৷ কলকাতা হাইকোর্টের আদেশে শরৎচন্দ্রের রাজত্বের অংশ আসে রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল ট্রাস্টির মালিকানায়৷
Chanchal Raj Family Durga Puja ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারভাইজার পিনাকীজয় ভট্টাচার্য জানালেন, “এই পুজো অন্তত ৩০০ বছর পেরিয়ে গেল৷ কথিত আছে, ওই জায়গায় মহানন্দার তীরে এই রাজ পরিবারের একজন সতী হয়েছিলেন৷ তখন থেকেই জায়গাটি সতীঘাটা নামে পরিচিত৷ মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে মহারাজ রামচন্দ্র রায়চৌধুরি নদী থেকে অষ্টধাতুর চণ্ডী বিগ্রহ পান৷ তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজো শুরু হয়৷ পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরি, শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরি এখানে রাজত্ব করেন৷ পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্ব ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায়৷ কলকাতা হাইকোর্টের আদেশে শরৎচন্দ্রের রাজত্বের অংশ আসে রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল ট্রাস্টির মালিকানায়৷
তবে এই বাজারে এত কম টাকায় পুজো সম্ভব নয়৷ গ্রামবাসীরা আমাদের অনুমতি নিয়ে ওই পুজোয় অর্থ সাহায্য করে৷ এই পুজোর বৈশিষ্ট্য, কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে দুর্গাদালানে কল্পারম্ভ হয়৷ এবার মলমাসের জন্য একমাস আগেই সেই পুজো শুরু হয়েছে৷ সপ্তমীর দিন মিছিল সহকারে ঠাকুরবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে পুজো নিতে যান৷ অষ্টমীতে কুমারীপুজো প্রথম থেকেই হয়ে আসছে৷ দশমীর পুজো শেষে পাহাড়পুর থেকে ঠাকুরবাড়ি চলে আসেন সিংহবাহিনী৷ সেখানেই তাঁর ভোগ রান্না হয়৷ কথিত আছে, একসময় সতীঘাটার মহানন্দার পশ্চিমপাড়ে মহামারী দেখা দিয়েছিল৷
তখন দেবী সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, গোধুলি লগ্নে বিসর্জনের সময় তারা যেন মাকে আলো হাতে পথ দেখায়৷ তখন থেকেই প্রতি বছর বিসর্জনের সেখানকার মুসলমানরা হাতে লণ্ঠন, মোমবাতি, এখন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে মাকে পথ দেখায়৷ আমিও গত ৫০ বছর ধরে সেই প্রথা দেখে আসছি৷” পাহাড়পুর দুর্গাদালানের পুরোহিত অচিন্ত্যকুমার মিশ্র বলেন, “৩৫০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়েছে৷ কথিত আছে, তৎকালীন রাজমাতা স্বপ্নাদেশে সতীঘাটায় একটি চণ্ডীমূর্তি পেয়েছিলেন৷ ওই মূর্তি Chanchal Raj Family Durga Puja রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন হয়৷ আগে এখানে একটি কুঁড়েঘর ছিল৷ পরবর্তীতে এখানে দুর্গাদালান তৈরি হয়৷
সপ্তমীতে বহু ভক্তের উপস্থিতিতে মা সিংহবাহিনী এখানে আসেন৷ দশমী পর্যন্ত মা এখানেই থাকেন৷ সেদিন মা ফের Chanchal Raj Family Durga Puja রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে ফিরে যান৷ পুজোর কয়েকদিন প্রচুর মানুষ এখানে উপস্থিত হয়৷ তবে এবার কোরোনার জন্য কিছু বিধিনিষেধ থাকবে৷” এদিকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ির নিত্যপূজারি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্বকালে রাজমাতা সতীঘাটায় মহানন্দা নদী থেকে অষ্টধাতুর এই মূর্তি পান৷
যতদূর জানা আছে, প্রথমে সেখানেই একটি কুঁড়ে নির্মাণ করে মুর্তিটি রাখা হয়েছিল৷ পরে মাকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসা হয়৷ প্রতি বছর সপ্তমীতে মাকে পাহাড়পুর দুর্গাদালানে চারদিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়৷ আগে হাতিতে চাপিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হত৷ এখন আমিই মাকে মাথায় চাপিয়ে সেখানে নিয়ে যাই৷ একইভাবে দশমীতে ফের ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসি৷
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস