চন্দননগর Chandannagar হুগলি Hooghly নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত Hooghly হুগলি জেলার একটি মহকুমা শহর। কলকাতা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে খলিসানি, বোরো ও গোন্দলপাড়া নামক তিনটি প্রাচীন মৌজা এবং গৌরহাটির ছিটমহল সমেত নয় বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে শহরটি গঠিত। হাওড়া-ব্যান্ডেল রেলপথের উপর মানকুন্ডু ও চন্দননগর Chandannagar রেল স্টেশন দুটি জনগণের যাতায়াতের কাজে লাগে। গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড শহরের মধ্য দিয়েই গেছে। বিদেশিদের আগমনের পূর্বেও বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির জন্য চন্দননগরের সুখ্যাতি ছিল, যা অন্যান্য ইউরোপীয় উপনিবেশগুলিতে ছিল না।
মনসামঙ্গল ও কবি কঙ্কণ চন্ডীর লেখায় এ শহরের উল্লেখ আছে। লাক্ষা, মোম, সোরা, বেত, কাঠ, চন্দন কাঠ, বস্ত্র শিল্প, রেশম ও মশলার রপ্তানি ও ব্যবসা Chandannagar চন্দননগরে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। শহরটির নামকরণ হয়েছিল এখানকার চন্দন গাছ থেকে, কিংবা এর অধিষ্ঠাত্রী দেবী বোরাই চন্ডী বা মঙ্গল চন্ডী থেকে। এ ‘ফরাসি-ভূমি’ বা ‘ফরাসডাঙ্গা’ তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। বিভিন্ন বর্ণের হিন্দু, মুসলমান, ইউরোপীয় ও আর্মেনীয়গণ এখানে বসবাস করত। ব্যবসা-বাণিজ্যে উদ্যোগী ফরাসি নাগরিক ডুপ্লে ১৬৭৩ সালে
এখানে প্রথম পদার্পণ করেন।একটি গুদামঘর তৈরি করে তিনি এখানে ১৬৭৬ সাল পর্যন্ত থাকলেও কোনো উন্নতি করতে পারেন নি। বাঁশবেড়িয়া-শেওড়াফুলি জমিদার অধিকৃত হুগলি চাকলার মুহম্মদ-আমিনপুরের অন্তর্গত ছিল এ চন্দননগর। ১৬৮৮ সালের এক ফরমানের বলে ফরাসিরা গৌরহাটিতে একটি কুঠি নির্মাণ করে। ১৬৯৭ সালে ডেসল্যান্ড বর্তমান লালদিঘির কাছে ‘ডি-অঁরলিয়ে’ দুর্গ নির্মাণ করেন, যা ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৭৩৬ সালে পন্ডিচেরির গভর্নর দিসা স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা প্রকাশের জন্য নওয়াবের কাছ থেকে ফরমান সংগ্রহ করেন।
১৭৩১ সালে নতুন গভর্নর, জোসেফ ফ্রান্সিস ডুপ্লে জমিদারদের কাছ থেকে জমি নিয়ে উত্তরে তালডাঙ্গা থেকে দক্ষিণে গৌরহাটি পর্যন্ত শহরটিকে প্রসারিত করেন। এ শহরের শাসন ব্যবস্থা একজন গভর্নর ডাইরেক্টর, ৫ জন সদস্যের দ্বারা গঠিত কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। এ ছাড়াও এ কাউন্সিলে ১৫ জন ব্যবসায়ী, ২ জন ডাক্তার, একজন দক্ষ কারিগর, ২ জন পাদ্রি এবং ২০ জন ভারতীয়সহ ১০৩ জন সৈনিক ছিলেন। ১৯০৯ সালে এখানে ইট নির্মিত গৃহ ছিল ২০০০টি, ও জনসংখ্যা ছিল ২৬,৮৩১। ইউরোপীয় অঞ্চলে একটি সুন্দর মঠ, দুর্গ, নদীবন্দর, গভর্নরের বাসভবন, থিসল হোটেল, ১৭২৬ সালে নির্মিত সেন্ট লুই চার্চ, গৌরহাটিতে এক মনোরম প্রাসাদ এবং নদী তীরবর্তী বাঁধানো প্রশস্ত ভ্রমণ পথ ছিল।
পলাশীর যুদ্ধের পূর্বে ১৭৫৭ সালে মীরজাফর যুদ্ধক্ষেত্রে সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে কিনা তা নিশ্চিত করতে রবার্ট ক্লাইভ এখানে থেমেছিলেন। বস্ত্রশিল্প, রেশম, শোলা, ঝিনুক প্রভৃতির সুপ্রতিষ্ঠিত কুটির শিল্প গড়ে উঠেছিল চন্দননগরে। ফরাসিরা নদী তীরে একটি পাটকলও শুরু করেন। সেন্ট লুইস চার্চ ও তিববতি মিশন চার্চ ছাড়াও প্রাচীনতম বোরাই চন্ডী মন্দির ও প্রায় একশটি শিব মন্দির ছিল। চন্দননগরে সব সময়ের জনপ্রিয় উৎসব ছিল জগদ্ধাত্রীপূজা। ইউরোপে ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব এ উপমহাদেশে, বিশেষ করে চন্দননগরেও অনুভূত হয়।
ডুপ্লে অনেকগুলি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু বেশির ভাগ যুদ্ধেই পরাজিত হন। যাহোক, ইউরোপে শান্তি ফিরে আসার পর ফরাসিরা শহরটি ফেরৎ পায়। পরিখা, নদী সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং স্থায়ী শাসন-ব্যবস্থা থাকায় এটি মারাঠা আক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত ছিল। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ও নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে বহু ইউরোপীয় ও ভারতীয় এ শহরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
ফরাসি বিপ্লবের চেতনা এ Chandannagar শহরটিকে প্রভাবান্বিত করে এবং ১৭৯২ সালের একটি স্থানীয় বিপ্লবে গভর্নর কিছুদিনের জন্য গৌরহাটিতে বিতাড়িত হন।ব্রিটিশাধীন না হওয়ায় শহরটি ছিল বহু বিপ্লবী, স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং সে সঙ্গে বহু ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ও আসামীর আশ্রয়স্থল। কানাই লাল দত্ত ও মতিলাল রায়ের মতো বিপ্লবীদেরও রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল ছিল এ শহর। শেষোক্ত ব্যক্তি এখানে ধর্মীয় ভক্তি, শিল্পের উন্নতি সাধন ও ভারতীয় স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে ‘প্রবর্তক সংঘ’ নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালের এক গণভোটের মাধ্যমে চন্দননগর ভারতীয় ইউনিয়নের একটি অংশে পরিণত হয়। আজও এ শহরে অনেক অতীত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান; যেমন রোমান ক্যাথলিক চার্চ, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং বেশ কিছু ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়।
চন্দননগর কি জন্য বিখ্যাত? চন্দননগর – উইকিভ্রমণ চন্দননগর তার জগদ্ধাত্রী পূজার জন্য বিখ্যাত। এটি দুর্গাপূজার এক মাস পরে পালিত হয়, সাধারণত নভেম্বর মাসে। প্যান্ডেল, রাস্তার আলো, প্রতিমা–সবকিছুই আপনাকে অবাক করবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ লোক এই সময়ে আসেন।
চন্দননগর কবে কিভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়? চন্দননগর, এর আগে একটি ফরাসি উপনিবেশ, 19 জুন, 1949-এ ভারতের সাথে একীভূত হওয়ার পক্ষে ভোট দেয় – ইতিহাসের এই দিনটি
চন্দননগর কেন বিখ্যাত? চন্দননগর জগদ্ধাত্রী পূজার জন্য বিখ্যাত। এটি দুর্গা পূজার ঠিক এক মাস পরে সাধারণত নভেম্বর মাসে হয়। প্যান্ডেল, রাস্তার আলো, প্রতিমা – সবকিছুই আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। সে সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ মানুষ এখানে আসেন।
চন্দননগর কার দখলে ছিল? চন্দননগর ছিল ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনিক কেন্দ্র। ফ্রান্স এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ এবং রয়্যাল নেভির নেতৃত্বে ছিলেন চার্লস ওয়াটসন। তারা বোমাবর্ষণ করে এবং 1757 সালের মার্চ মাসে চন্দননগর (চন্দননগর) দখল করে।
চন্দননগরের কিশোর শহীদের নাম কি? জন্ম কানাইলাল দত্ত পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলি জেলার খরসরাই বেগমপুর গ্রামে।
চন্দননগর কাদের কুঠি ছিল? চন্দননগরে ঘাঁটি তৈরি করে ফরাসিরা কুঠি স্থাপন করে। পুঁজি বিনিয়োগ করে। বাণিজ্যকেন্দ্র ও দুর্গ স্থাপন করে। ১৬৮৬ সালে হুগলিতে মুঘলবাহিনীকে যুদ্ধে পর্যুদস্ত করেছিল ব্রিটিশ শক্তি।
জমিদার ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী চন্দননগরে কোন পূজা কে বিখ্যাত করেছিলেন? ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী চন্দননগরে নিজের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পূজা করেছিলেন, সেই সময় কৃষ্ণচন্দ্র ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর কাছ থেকে টাকা ধার করতে আসতেন। বৃটিশ কারাগারে অবরুদ্ধ হয়ে একবার দুর্গার পূজায় অনুপস্থিত থাকায় কৃষ্ণচন্দ্রের পিতা কৃষ্ণ নগরে জগদ্ধাত্রীর পূজা শুরু করেছিলেন।
চন্দননগর কোন সালে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়? Chandannagar 2 অক্টোবর 1954 -এ চন্দননগর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে একীভূত হয়।
ফরাসিরা কবে ভারতে আসে? 1673 সালে বাংলার মুঘল শাসকের কাছ থেকে চন্দননগরে জমি কেনার মাধ্যমে ভারতে ফরাসি বসতি শুরু হয়েছিল। পরের বছর তারা বিজাপুরের সুলতানের কাছ থেকে পন্ডিচেরি অধিগ্রহণ করেছিল। উভয় অঞ্চল ভারতে ফরাসিদের সামুদ্রিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
হুগলি জেলার সদর শহরের নাম কি? পরিচ্ছেদসমূহ হুগলি-চুঁচুড়া বা হুগলী-চুঁচুড়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার সদর দপ্তর।
চন্দননগর কবে স্বাধীন হয়? অবশেষে ১৯৪৯ সালে গণভোটে চন্দননগরের মানুষ রায় দেন ভারত সরকারের অঙ্গ হিসেবে স্বাধীন চন্দননগরের পক্ষে। ১৯৫০ সালে কার্যত বা De Facto Transfer-এর মাধ্যমে ভারত সরকারের হাতে চন্দননগর অর্পণ করা হলেও ‘চন্দননগর মার্জার অ্যাক্ট ১৯৫৪’ অবধি অপেক্ষা করতে হয় পশ্চিমবাংলার অংশ হতে।
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস