ব্রাহ্ম মুহূর্ত Brahma Muhurta সূর্য ওঠার আগের ন্যূনতম ৪৮ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১ প্রহর বা ৩ ঘণ্টাব্যাপী সময়কে হিন্দু ধর্মে Brahma Muhurta ব্রহ্মমুহূর্ত বলা হয় ৷ সর্বশক্তিময় প্রভু প্রতিটি ধর্মশাস্ত্রেই এ মুহূর্তটিকে তাঁকে স্মরণ এবং তাঁর ক্ষমা , করুণা ও দয়া প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত বলেছেন । উপাসনানিষ্ঠ হিন্দুরা অষ্টপ্রহরব্যাপী দিনের প্রারম্ভিক এ মুহূর্তে ভগবানের কাছে সর্বসৃষ্টির শান্তি ও কল্যাণ চেয়ে মঙ্গল আরতি ক’রে আগত দিনটিকে শুরু করে থাকে ৷
হিন্দু সাধকেরা এই সময়টিতে সর্বশক্তিময় ঈশ্বরের উপাসনা-আরাধনা ক’রে থাকে । এ সময়ে কুলকুণ্ডলিনী শক্তি জাগ্রত হয় বলে তাদের কাছে এ Brahma Muhurta ব্রহ্মমুহূর্ত খুবই পবিত্র ৷ কুলকুণ্ডলিনী শক্তি জাগ্রত না হলে সাধকের আধ্যাত্ম জীবনের উন্নতি হয়না ৷ আগেকার দিনের মুনি ঋষিরা ব্রাহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে পড়তেন। শুধু মুনি ঋষিদের জন্য নয়, সাধারণ গৃহস্থ মানুষের জন্যও ব্রাহ্ম মুহূর্তে বিছানা ছাড়া খুব জরুরি। যদিও আজকালকার দিনে আমরা অনেকেই রাত করে ঘুমোতে যাই এবং বেলা করে ঘুম থেকে উঠি। এই অভ্যেস কিন্তু শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। ব্রাহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠার নানা উপকারিতা রয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল ব্রাহ্ম মুহূর্ত কাকে বলে? আয়ুর্বেদ অনুসারে সূর্যোদয়ের দেড় ঘণ্টা আগে যে সময়, তাকেই বলে Brahma Muhurta ব্রাহ্ম মুহূর্ত। সূর্যোদয়ের সময়ের সঙ্গে এটি স্থান ও সময় বিশেষে বদলে যায়। আমাদের দেশের পূর্ব প্রান্তে ও পশ্চিম প্রান্তে সূর্যোদয়ের সময়ের মধ্যে অনেকটা পার্থক্য থাকে। সেই হিসেবে এই দুই এলাকায় Brahma Muhurta ব্রাহ্ম মুহূর্তও আলাদা। যখন সূর্যোদয় ভোর ৫টায় হবে, তখন ব্রাহ্ম মুহূর্ত হবে ৩.৩০ মিনিটে। আবার কোনও স্থানে সূর্যোদয়ের সময় যদি হয় সকাল ৭টা, সেখানে ব্রাহ্ম মুহূর্ত শুরু হবে ভোর ৫.৩০ মিনিটে। ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে ব্রহ্মা হলেন সৃষ্টির দেবতা। তাই ব্রাহ্ম মুহূর্ত হল স্বয়ং ব্রহ্মার সময়। আধুনিক চিকিত্সাশাস্ত্র অনুসারে ব্রাহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের শরীরে মেলাটনিন হরমোন ক্ষরিত হয়, যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। জেনে নিন ব্রাহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতা।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে এই বিশেষ সময়ে ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে আধঘণ্টা প্রাণায়ম করলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে গৃহস্থের অন্দরে পজিটিভ শক্তি এতটা বেড়ে যায় যে জীবনের পথে নানা বাধা সরিয়ে তিনি অগ্রসর হতে পারেন।
জ্ঞানের বিকাশ ভোর হওয়ার দেড় ঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির মাঝে কিছু সময় কাটান। দেখবেন দিনের পর দিন এমনটা করলে আপনার ভাবনা-চিন্তায় ফারাক আসতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে মন এতটাই শান্ত হয়ে যাবে যে রাগ দূরে পালাবে।
পজিটিভ এনার্জি বৃদ্ধি শাস্ত্র মতে ব্রাহ্ম মুহূর্তে উঠে লক্ষ্মী- সরস্বতী মন্ত্র পাঠ করা শুরু করলে পরিবেশে উপস্থিত প্রাণ শক্তি, যাকে ভাইটাল লাইফ এনার্জিও বলা হয়, তা এত মাত্রায় অ্যাকটিভ হয়ে যায় যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা বা খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি একাধিক গবেষণায় দেখা গেছেন ব্রাহ্ম মুহূর্তে পরিবেশে টাটকা অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় ৪১ শতাংশে এসে পৌঁছোয়। তাই এই সময় ঘুম থেকে উঠে কিছু সময় গাছ-গাছালির মধ্যে কাটালে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষমতাও বাড়তে থাকে।
ওজন কমে সম্প্রতি প্রায় ৯০ হাজার মানুষের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে মেদ ঝরার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে। রক্তে শর্করার মাত্রাও ঠিক থাকে।
প্রশ্ন উত্তর পর্ব
ব্রহ্ম মুহূর্তে উঠলে কি হয়? ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, ব্রাহ্ম মুহুর্তের সময় ভোর ৪টে থেকে ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ধরা হয়। ব্রহ্ম মুহুর্তে ওঠার উপর দেবী লক্ষ্মীর কৃপা সবসময় বজায় থাকে। এছাড়া ভাগ্যের সব দরজা এক এক করে খুলে যেতে শুরু করে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, যে ব্যক্তি ব্রহ্ম মুহুর্তে বিছানা ছেড়ে জেগে ওঠেন তিনি সর্বদা সবক্ষেত্রেই সফল হন।
ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান করলে কি হয়? ব্রাহ্ম মুহূর্তে স্নান সেরে ঈশ্বরের পুজো করা উচিত। এর ফলে ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব হয়। ছাত্র ছাত্রীদের জন্যও ব্রাহ্ম মুহূর্ত অত্যন্ত উপযোগী। পড়ুয়ারা এই সময় পড়াশোনা করলে সেই পড়া অনেক বেশি সময় পর্যন্ত মনে রাখতে পারবে।
ব্রহ্ম মুহূর্তে ঘুম ভাঙলে কি হয়? এই ব্রাহ্ম মুহূর্তে ঘুম যদি হঠাৎ ভেঙে যায় তা হলে তা খুবই শুভ সঙ্কেত বলে মানা হয়। অনেকের জীবনেই এ রকম হয় যে গভীর ভাবে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ৩টে থেকে ৫টার মধ্যে ঘুম ভেঙে গেল। এক দু’দিন নয়, বেশ কয়েক দিন যদি এই ঘটনা ঘটে তা হলে জানতে হবে আপনার শুভ সময় আসন্ন।
ব্রাহ্ম মুহুর্তে কোন মন্ত্র জপ করা উচিত? গায়ত্রী মন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, ভোরবেলা, বিশেষত ‘ব্রহ্ম মুহুর্ত’ এর সময়, এটি জপ করা ভাল। এই সময়ে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে এর শক্তি এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় কারণ মন স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণযোগ্য এবং অগোছালো।
ব্রহ্ম দোষ কি? ‘ ব্রহ্ম হাত্য দোষ’ শব্দটি একজন ব্রাহ্মণকে হত্যা বা ক্ষতি করার পাপকে বোঝায়, যাকে হিন্দু ধর্মে একটি ঐশ্বরিক এবং পবিত্র ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ‘ব্রাহ্মণ’ শব্দটি ভগবান ব্রহ্মা শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে, যাকে প্রায়শই মহাবিশ্বের স্রষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ব্রহ্ম মুহূর্তে কি করা উচিত জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী ব্রহ্ম মুহূর্তে উঠে ধ্যান করা উচিত। এ সময়ে পরিবেশ শান্ত থাকে। … ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান সেরে পূজার্চনা করা উচিত। … ছাত্রছাত্রীরা ব্রহ্ম মুহূর্তে উঠে পড়াশোনা করলে সুফল পেতে পারেন। … ব্রহ্ম মুহূর্তে উঠে এটি জপ করুন– করাগ্রে বসতি লক্ষ্মী, করমধ্যে সরস্বতী।
ব্রহ্ম মুহুর্ত পূজা কিভাবে করতে হয়? ব্রহ্ম মুহুর্তের সময় ধ্যান, জপ বা প্রার্থনায় নিযুক্ত হয়ে, লোকেরা আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ রূপান্তরের জন্য এই শক্তিশালী শক্তিতে ট্যাপ করতে পারে। সদগুরু বলেছেন, “সূর্য এবং চাঁদের সাথে গ্রহের সম্পর্কের প্রকৃতি এমন যে এই সময়ে মানুষের সিস্টেমে কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে।”
ব্রহ্ম মুহূর্ত কোন সময় কে বলা হয়? ব্রহ্মমুহূর্ত (সংস্কৃত: ब्रह्ममुहूर्त, ‘ব্রহ্মের সময়’) হল একটি সময়কাল (মুহূর্ত) যা সূর্যোদয়ের এক ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে শুরু হয় এবং সূর্যোদয়ের ৪৮ মিনিট আগে শেষ হয়।
ব্রাহ্ম মুহুর্তে কোন মন্ত্র জপ করা উচিত? গায়ত্রী মন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, ভোরবেলা, বিশেষত ‘ব্রহ্ম মুহুর্ত’ এর সময়, এটি জপ করা ভাল। এই সময়ে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে এর শক্তি এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় কারণ মন স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণযোগ্য এবং অগোছালো।
ব্রাহ্ম মুহুর্তের পর কি করতে হয়? Brahma Muhurta ব্রহ্ম মুহুর্তের সময় ধ্যান আমাদের প্রচুর মহাজাগতিক শক্তি দিয়ে পূর্ণ করে যা আমাদের আরও উত্পাদনশীল হতে সাহায্য করতে পারে। এর পরে ঘুমালে সঞ্চিত মহাজাগতিক শক্তির বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যায়। আপনার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পেতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো ভাল যাতে আপনি ব্রহ্ম মুহুর্তের পরে উত্পাদনশীল কিছুতে কাজ করতে পারেন ।