হুগলী জেলার ইতিহাস সৃষ্টি কারি শহর Baidyabati । বখতিয়ার খলজি নদিয়া জয় করার পর গৌড় এর দিকে অগ্রসর হন এবং সেখানেই রাজধানী স্থাপন করেন। গৌড় জয়ের পর আরও পূর্বদিকে বরেন্দ্র বা উত্তর বাংলায় নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেই সময় ই উওর বঙ্গ থেকে বৈদ্যরা তাদের মহামূল্যবান পুঁথিসহ এক প্রকার প্রানভয়ে পালিয়ে এসে গঙ্গার তীরে এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন ,বৈদ্যদের বসবাস থেকেই বৈদ্যবাটী Baidyabati কথাটা এসেছে।
বৈদ্য ( একটি জাতি মূলত কবিরাজ চিকিৎস)আর বাটি (আবাসস্থল) সেই থেকেই Baidyabati বৈদ্যবাটী নামকরন। ঠিক তেমনি বৈদ্যপাড়া ,এখানে বৈদ্যদের স্বপ্নে লাভ করা শিতলা মায়ের মন্দির টি এখনো বর্তমান। Baidyabati বৈদ্যবাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলী জেলার শ্রীরামপুর শহরের কাছে একটি ছোট শহর ও পৌরসভা এলাকা। ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বৈদ্যবাটি শহরের জনসংখ্যা হল ১০৮,২৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫২% এবং নারী ৪৮%। এখানে সাক্ষরতার হার ৭৯%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮২% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৭৬%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে বৈদ্যবাটি এর সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ৮% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
১৮৬৯ সালের ১লা এপিল বৈদ্যবাটী পুরসভার পথচলা শুরু, চাতরা,শেওড়াফুলি, Baidyabati বৈদ্যবাটী ও চাঁপদানী এই চারটি ওয়ার্ডকে নিয়ে।এই পৌরসভার প্রথম পৌর প্রধান ছিলেন শ্রী এ.এস.ক্র্যাব এবং প্রথম নির্বাচিত পুর প্রধান ছিলেন ঁচন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয়। বৈদ্যবাটীর ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে প্রথমেই যে নামটি চলে আসে তিনি হলেন বৈদ্যবাটীর গর্ব পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত। ১৮০০ সালে আয়ুবেদিক চিকিৎসক পরিবারে তিনি জন্মগ্ৰহন করেন।তাঁর পিতামহ হুগলীর নবাব পরিবারের গৃহ চিকিৎসক ছিলেন।তাঁর প্রপিতামহ বক্সী উপাধি লাভ করেন।
এখনো বৈদ্যপাড়ায় বক্সীবাড়ী রয়েছে নিজ মহিমায়। তৎকালীন বর্ণহিন্দুদের গোঁড়া কুসংস্কারের জন্য শবব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ থাকলেও ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রথা ভেঙে প্রথম বাঙালি ও এশিয়া বাসী হিসেবে পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত কলকাতা মেডিকেল কলেজে শবব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে শারীরতত্ত্ব সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। আজ আমরা যখানে বৈদ্যবাটী স্টেশনটি দেখি সেটি আগে ওখানে ছিলো না ।চতুষ্ঠীর নিকটে দ্বিতীয় সেতুর কাছেই প্রাচীন বৈদ্যবাটী স্টেশনটি ছিলো। বৈদ্যবাটীর নিমাইতীর্থ ঘাট খুবই পরিচিত,ষোড়শ শতাব্দীতে বিপ্রদাস তাঁর মনসা মঙ্গল কাব্যে এই ঘাটের কথা উল্লেখ করেন। স্বয়ং নিমাই সন্ন্যাস এসেছিলেন এই ঘাটে।
জনশ্রুতি আছে তাঁর আগমনের সময় নিম গাছে চাঁপা ফুল ফুটেছিলো এবং ভদ্রকালী মন্দির সংলগ্ন মিষ্টির দোকানে মিষ্টি খেয়ে পয়সার পরিবর্তে তিনি হাতের স্বর্ণবালা দিয়েছিলেন। পুরানো ঘাট নষ্ট হয়ে গেলে চন্দননগরের স্বগীয় কাশীনাথ কুন্ডু মহাশয় উক্ত ঘাটটি সংস্কার করেন।এই ঘাটে ১৩৪৮ সালের দশম শতাব্দীর পাল রাজত্বকালের একটা অনাদৃত সূর্য মূর্তি আবিষ্কার হয়।কষ্টি পাথরে তৈরী মূর্তিটি উচ্চতায় প্রায় দু-হাত। এর থেকে অনুমান করা যেতে পারে এই অঞ্চলে পাল রাজাদের প্রভাব ছিলো। নিমাইঘাটে বছরে তিনটি মেলা বসতো,পৌষ সংক্রান্তি ,বারুনী এবং মাঘী পূর্ণিমায়।
১২২৭-১২৩০ মধ্যে বারুণী করতে এসে প্রচুর উড়িষ্যার মানুষ কলেরায় বৈদ্যবাটীতে প্রাণ হারান। কথিত আছে শ্রীমা সারদা দেবী জয়রামবাটী অথবা কামারপুকুর থেকে যখন দক্ষিণেশ্বর যেতেন তখন নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে নৌকায় উঠতেন । নিমাইতীর্থ ঘাটটি মায়ের পদধূলিতে ধন্য । মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্যে কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চন্ডীমঙ্গল কাব্যে বৈদ্যবাটি নিমাই তীর্থ ঘাট এর উল্লেখ আছে। বৈদ্যবাটীর ১০নং রেলগেটের পূর্বদিকে অবস্থিত ভদ্রকালী দেবী বিশেষ জাগ্রত বলে এলাকিবাসীর বিশ্বাস। এই দেবীর নামানুসারে পল্লীর এক অংশের নাম ” ভদ্রকালী ” । বাংলার প্রথম উপন্যাস টেক্ চাঁদ ঠাকুর প্রণীত “ আলালের ঘরের দুলাল ”—এ বৈদ্যবাটী নামের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই মন্দির নির্মাণ করেন শেওড়াফুলি রাজা মনোহর রায়।সঠিক ভাবে কবে নির্মান হয়েছে সে বিষয়ে বিশেষ কিছু জানতে পারা জানা যায় না । কোন এক পুকুর খনন কালে দেবী মায়ের মূর্তিটি পাওয়া যায়।এই মন্দিরের সামনের অংশে মা ভদ্রকালী এবং পিছনের মন্দিরে কৃষ্ণ রাধার মন্দির রয়েছে, এরই সাথে মন্দিরের দুপাশে রয়েছে শিবমন্দির । অনেকের মতে ভদ্রকালী মন্দিরের বেদী পঞ্চমুন্ডির আসনের উপর প্রতিষ্ঠিত। রাজা মনোহর রায় মন্দির নির্মান করে ভদ্রকালী মাকে প্রতিষ্ঠিত করে তারকেশ্বর শিব মন্দিরের মোহন্তের হাতে পরিচালনার ভার তুলে দেন ,সেই থেকে এই মন্দিরটি তারকেশ্বর মন্দিরের অধীন,এই মন্দিরের পূজারী মনোনীত হন তারকেশ্বর মন্দির থেকেই।
তারকেশ্বর মন্দিরে র খাতায় এই কালী মন্দির বৈদ্যবাটী মঠ নামে উল্লেখ করা আছে। রাজা মনোহর লাল ১১৪১ সালের ১৫ই জৈষ্ঠ শেওড়াফুলির রাজবাড়িতে শ্রী শ্রী সবর্বমঙ্গলা দেবীর প্রতিষ্ঠা করেন ,এবং সেই সাথেই পিতামহ রাজা রাঘবেন্দ্র রায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে বৈদ্যবাটী ১০ নং রেল গেটের পশ্চিম দিকে রাঘবেশ্বর শিব মন্দির স্থাপন করেন। আমাদের এই Baidyabati বৈদ্যবাটীতে নেতাজী এসেছিলেন ,পোদ্দারঘাটে ভাষন ও দিয়েছিলেন তবে তিনি মাটিপাড়ায় নৃপেনবাবুর বাড়িতেই ছিলেন। বৈদ্যবাটীতে বসেই “আলালের ঘরের দুলাল “উপন্যাসটি লেখা শুরু করেন টেকচাঁদ ঠাকুর। দক্ষিণ পাড়ায় গাঙ্গুলী বাড়িতে সে সময় অনেক গুণী ব্যক্তিদের সমাবেশ ঘটতো সাহিত্য চর্চার কারনে।
১৮৭০ সালে বৈদ্যবাটীর বুকে প্রথম এন.সি.এম রোডে ১০নং রেলগেটের নিকটে চালাঘরে প্রথম নিম্ম মাধ্যমিক জূনিয়ার বিদ্যালয় স্থাপন হয়। ১৮৭৮ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের উদ্যেগে গড়ে উঠে Baidyabati বৈদ্যবাটী উচ্চ বিদ্যালয়।১৯০৯ সালে কবি ও সাহিত্যিক ঁনরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্ৰহন করেন। চাঁপদানীর জমিদারদের আর্থিক সহযোগিতায় তিনকড়ি দেবী প্রদত্ত আড়াই বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় ১৯১২ সালে Baidyabati বৈদ্যবাটী বনমালী মুখার্জী ইনস্টিটিউশনে পরিনত হয়।এই বিদ্যালয় নির্মান করতে প্রায় দুই লক্ষ ইঁট দান করেছিলেন স্বগীয় রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় মহাশয়।
এই বিদ্যালয় থেকে প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ঁ সন্তোষ কুমার গুপ্ত ,ঁশান্তিগোপল মুখোপাধ্যায় ও ঁ ইন্দুভূষণ হালদার ১৯৪৩ সালে বনমালী বিদ্যালয়ে গড়েউঠে বনমালী মুখার্জী বিদ্যালয় বালিকা বিভাগ,৪৭ এই বিভাগ ক.বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়, বনমালীর প্রাক্তন ছাত্র ও বিদ্যালয় কমিটির তদানীন্তন সম্পাদক ঁষষ্ঠিগুপ্ত ও সভাপতি ডা:শচীন সর্বাধিকারীর উদ্যোগে ১৯৫৮ সালে বৈদ্যপাড়ায় স্থাপিত হয় বনমালী মুখার্জী বালিকা বিভাগটি চারুশীলা বোস বালিকা বিদ্যালয় নামে নতুন রূপে। ১৯৫৭ সালে ১২ই ডিসেম্বর প্রথম হাওড়া -শেওড়াফুলি E.M.U লোকাল চালু হয়,এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু ও তার আদরের নাতি শিশু রাজীব গান্ধী ও পশ্চিমবঙ্গের রূপকার ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডা: বিধান চন্দ্র রায় মহাশয়।
হাওড়া স্টেশনে অসুবিধার কারনে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান টি শেওড়াফুলি স্টেশনেই হয়। যেটা আমাদের গর্ব। আজ যে অঞ্চল শেওড়াফুলি নামে প্রসিদ্ধ সেটি একসময় সাড়াপুলি নামেই পরিচিত ছিল। পরবর্তী কালে শেওড়া গাছের আধিক্য হেতু এই অঞ্চলের নামকরন হয় শেওড়াফুলি আজ যেখানে শেওড়াফুলি হাট আগে এই বাজারটি এইখানে ছিল না। তখন Baidyabati বৈদ্যবাটির নিমাইতীর্থ ঘাটের কাছে বাজার টি বসতো। বড় বড় নৌকা করে জলপথে পণ্য আসত , তা অন্তত দেড়শো বছর আগের কথা। পরবর্তী কালে শেওড়াফুলিতে বাজারটি স্থানান্তরিত হয় যাতায়াতের সুবিধার জন্য। পূর্বে শুধুমাত্র শনি ও মঙ্গলবার দিন হাট বসতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী পদ্মপলাশলোচন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের অনেকেই এই হাটে ব্যবসা করতেন।
এই বাজারের কুমড়োর বেশ কদর ছিল। এই কুমড়োর সিংহভাগ জলপথে হালিশহর থেকে আসত। এক একটির ওজন আধমণের বেশি। প্রবাদ আছে, সাহেবদের ভোজের মেনুর অন্যতম প্রধান আইটেম ছিল এই হাটের কুমড়ো। ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে, বাংলা ১২৩৪ সনের জ্যৈষ্ঠ মাসের কোনও এক শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে মা নিস্তারিনীর মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেওড়াফুলি রাজবংশের রাজা হরিশ্চন্দ্র রায়। জনশ্রুতি আছে রানী রাসমনি দক্ষিনেশ্বর মন্দির তৈরীর আগে গঙ্গাবক্ষে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে খুঁজে পান শেওড়াফুলির অধিষ্ঠাত্রী নিস্তারিণী দেবী মার মন্দির । মা একটি বালিকা রূপে রানীমার সামনে এসে উপস্থিত হন এবং তাঁকে মাতৃদর্শন করান।পরবর্তীকালে এই মন্দিরের অনুকরনেই গড়ে উঠেছিলো দক্ষিনেশ্বর মন্দির।
আজ শেওড়াফুলির জি.টি.রোডের উপর অবস্থিত শেওড়াফুলি পোষ্ট অফিস,পূর্বে এটি গঙ্গার ধারে এস.সি.এম রোডে বর্তমানে যেখানে দাসেদের ঔষধের দোকান সেখানে লাল দ্বি-তলে অবস্থিত ছিলো,যা গঙ্গা গর্ভে বিলীন হয়েছে। বৈদ্যবাটী তে অবস্থিতি বর্তমানে হাতিশালা ঘাট নামে পরিচিত এলাকাটি পূর্বে হাতিদের আস্তাবল ছিলো।সেই থেকেই এই নামকরন।তারকেশ্বর মন্দিরের পূজার গঙ্গাজল এই ঘাট থেকেই নেওয়া হতো এবং হাতিরা তা বহন করে নিয়ে যেতো। স্বগীয় হরিদাস গাঙ্গুলী ছিলেন একজন স্বনামধন্য সাহিত্যপ্রেমী এবং নবজাগরন আন্দোলনের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। নগর গ্ৰন্থাগার – বৈদ্যবাটী যুবক সমিতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান রয়েছে।
স্বগীয় শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের সুযোগ্য সন্তান ইঞ্জিনিয়ার রাখালদাস চট্টোপাধ্যায় পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে শ্যামচ্যাটুজ্যে ঘাট ও ঘাট সংলগ্ন শিব মন্দির টি নির্মান করেন। শেওড়াফুলির আর এক স্মরনীয় ব্যক্তি হলেন স্বগীয় সুরেন্দ্র নাথ ঘোষ মহাশয়। তিনি পাটের ব্যবসায়ী ছিলেন এবং পরবর্তীকালে অর্জিত অর্থে বৈদ্যবাটীর বুকে প্রথম শিল্প কারখানা Eastern Belting নির্মান করেন,পরবর্তীকালে তাঁর সুযোগ্য পুত্র স্বগীয় কমল কুমার ঘোষ Engineering কারখানা নির্মাণ করেন। এছাড়াও এনারা নির্মাণ করেন শেওড়াফুলির বুকে বালক বালিকাদের জন্য বিদ্যালয় ,যা সুরেন্দ্র নাথ ঘোষ বিদ্যালয় নামে বর্তমানে পরিচিত। বৈদ্যবাটীর গঙ্গার ঘাট গুলিতে সে যুগে যেমন শবদাহ করা হতো তেমনি গঙ্গাপ্রাপ্তির জন্য নর -নারীদের ভীড় লক্ষ্য করা যেতো। কুমারপাড়ার ঘাট শ্মশানবাসী ঘাট নামে পরিচিত ছিলো।
পন্ডিত মধুসূদন গুপ্তকে এই ঘাটেই সৎকার করা হয়। বৈদ্যবাটীর খালধারের মিত্রবাড়ির গৃহকর্তী প্রভাশিনী দেবী (২৮) কুমার পাড়ার ঘাটে গঙ্গাপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে তিনদিন ছিলেন (১৮৮৫) ,তাঁর সৎকার কুমারপাড়া ঘাটেই হয়। বনমালী স্কুলের প্রাক্তন সম্পাদক ষষ্ঠীগুপ্ত অসুস্থ অবস্থায় তিনদিন শ্যামাচরণ ঘাটে আশ্রয় নেন ও তিনদিনের মাথায় মারা গেলে তাকে হাতিশালা ঘাটে দাহ করা হয়। ঁবিহারিলাল ব্যানার্জী ছিলেন কলিকাতা হাইকোটের বিচারক, বনমালী বিদ্যালয়ের সামনে তাঁর সেই বাড়ি আজও জর্জবাড়ী নামে পরিচিত। ঁরামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী বৈদ্যবাটী কুমারপাড়া ঘাটে জগন্নাথ দেবের মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
পঞ্চাননতলায় বসবাসকারী স্বনামধন্য ঁমনিন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সে যুগে ইংরাজী বিষয়ে পারদর্শিতার জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন। বৈদ্যবাটীর আর এক গর্ব ডা:ঁসমীর গুপ্ত যিনি কানু গুপ্ত নামে এলাকা বাসীর কাছে সুপরিচিত ছিলেন ,বিশিষ্ট orthopedic surgeon,এশিয়া মহাদেশের পাঁচজন বিশিষ্ট ডা: মধ্যে তিনি ছিলেন এক জন। ডা:শ্যামা প্রসন্ন গুপ্ত ছিলেন এই অঞ্চলের গর্ব,তিনি ছিলেন সেই সময়ে লন্ডন ফেরত DPH। তাঁদের চায়ের ব্যবসা ছিলো যা অনিমা টি হাউস এ্যান্ড কোম্পানি নামে পরিচিত ছিলো।
এস.সি.রোডে ঘোষের ডাঙা এলাকায় তাঁদের বাড়ি এখনো সেই স্মৃতি বহন করছে বৈদ্যবাটীর আর এক পরিচিত মুখ ছিলেন ম্যাজিক সম্রাট ডি.সি.দত্ত,যিনি ম্যাজিক কাকা নামে বেশী পরিচিত ছিলেন।দেশ বিদেশে তিনি তাঁর ইন্দ্রজাল প্রদর্শন করে খুব খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বৈদ্যবাটীর বুকে প্রথম স্টুডিও বলতে ছিলো বর্তমানে ভগবতী মার্কেটের কাছে লাকী স্টুডিও ,যদিও তার আয়ু ছিলো স্বল্প। বৈদ্যবাটীর অপর আর একজন ব্যক্তি যিনি গঙ্গাদা নামে পরিচিতছিলেন ,তাঁর স্টুডিও ছিলো তবে তা কলকাতার বুকে।বৈদ্যবাটী শেওড়াফুলির বুকে প্রথম স্থায়ী স্টুডিও বলতে আমরা ডি.মদন অর্থাৎ মদন মোহন দত্তের স্টুডিও কে জানি ,যেটি প্রথমে বৈদ্যবাটী গেটে এবং পরে তা হাতিশালার কাছে এবং শেওড়াফুলির স্টেশনের কাছে গড়ে উঠে ।
বস্তুত গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে ইতিহাসের খামতি নেই। গঙ্গার পাড় ধরে উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া উকিঁ দিলেই দেখা মেলে অতীতের বহু নিদর্শন। কোথাও তা অবহেলায় অনাদরে, কোথাও আবার ক্ষীণ হলেও তাকে বাঁচিয়ে রাখার অদম্য চেষ্টা। গোটা হুগলি হুগলি জেলার ইতিহাসের পাতা ওল্টালে এমন জায়গা মিলবে না যেখানে প্রত্ন-নিদর্শন নেই। কোথাও কোথাও কালের নিয়মে তার অস্তিত্ব মুছে গেলেও থেকে নিশ্চিত ঠাঁই পেয়েছে অক্ষরের আঁচড়ে।১৮০০ শতকে খাঞ্জা খান মুঘল আমলের শেষ ফৌজদার। ফৌজদার অর্থাত্ খাজনা তুলতেন। তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি রাজাদের চেয়ে কিছু কম ছিল না। এক সময় দিনেমারদের দখলদারি ছিল Baidyabati বৈদ্যবাটি আর ভদ্রেশ্বরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। কথিত আছে টেকচাঁদ ঠাকুর ‘আলালের ঘরের দুলাল’ লিখেছিলেন এই শহরেই। হুগলির ইতিহাস নিয়ে গবেষণারত সপ্তর্ষী বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, “চৈতন্য মহাপ্রভু এক সময় নিমাইতীর্থ ঘাট এলাকায় কিছুদিন থেকেছিলেন।” পরবর্তী সময়ে বিশিষ্ট শল্য চিকিত্সক মধুসূদন গুপ্তর বাস এ শহরের খ্যাতি আরও বাড়িয়ে দেয়।
নিমাইতীর্থ ঘাটকে যেমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, তেমনই শ্রীচৈতন্যকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে আছে গল্পকথা। আর সে সব স্মরণ করেই বর্তমানের প্রবীণদের আপেক্ষ, “বৈদ্যবাটি, শেওড়াফুলির অতীত যে উজ্বল, বর্তমানের প্রেক্ষিতে তা বোঝা ভার। অতীতের সেই উজ্বলতার আলো থেকে বঞ্চিতই থেকে গিয়েছে বর্তমান প্রজন্ম বা বলা ভাল সেই আলো আর পৌঁছয়নি এ কালে।” এক অধ্যাপিকা তো সরাসরি খেদোক্তি, “পৌঁছয়নি কেন? আজকের বাচ্চারা তো যথেষ্ট পড়াশোনায় করে। তাঁদের কাছে এলাকার ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার দায় তো আমাদেরই ছিল।
কিন্তু যেখানে কেউ তার দায় নেন না, সেখানে এই জল-হাওয়ায় মানুষ হয়ে এলাকবাসী হিসেবে নিজের দায় একেবারে ঝেড়ে ফেলতে পারি না।”দায় ঝেড়ে ফেলার প্রশ্নে কিন্তু মধুসূদন গুপ্তর নাম বৈদ্যবাটিতে সর্বাগ্রে আসে। ইংরেজ আমলে তিনিই ছিলেন প্রথম বাঙালি যিনি ভারতে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ (ময়নাতদন্ত) করেছিলেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। ১৮৩৬ সালে তিনি প্রথম একটি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেন। তাঁর সম্মানে সেই আমলে ২১ বার তোপধ্বনি হয়েছিল ব্রিটিশ শাসকের নির্দেশে। মধুসূদনবাবুর নামে রাস্তা রয়েছে Baidyabati বৈদ্যবাটিতে। বর্তমান প্রজন্মের সুজিত রায় সম্পর্কে গুপ্ত পরিবারের ভগনে। তাঁর কথায়, “স্থানীয় বিজ্ঞান মঞ্চের কিছু সেমিনার ছাড়া সে ভাবে Baidyabati বৈদ্যবাটির মানুষের জন্য এখানে কোনও তথ্য মেলে না।
ওঁর সম্পর্কে যে টুকু তথ্য রয়েছে আছে তা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আমরা জানি আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানে ওঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি শব ব্যবচ্ছেদ বিজ্ঞান রপ্ত করে ব্রিটিশদের পর্যন্ত তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।” জানা গিয়েছে, মধুসূদনবাবু ইংরাজি থেকে অনেক বই চিকিত্সা বিজ্ঞানের বাঙালি ছাত্রদের সুবিধার জন্য বাংলায় অনুবাদ পর্যন্ত করেছিলেন। তবে সে সব নিয়ে তাঁর আত্মীয় স্বজন বা স্থানীয় প্রশাসন কোনও তথ্য দিতে পারেনি। শেওড়াফুলি এক প্রবীণ বাসিন্দার আপেক্ষ, “৬০০ বছরের পুরনো শহর এই বৈদ্যবাটি, শেওড়াফুলি এলাকা। এখানে ইতিউতি ছড়িয়ে আছে নানা ইতিহাস। সবই কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারকে করতে হবে কেন?
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস