totka for success অতীত কখনো ফিরে আসে না। এটা সবাই জানে। তবুও মানুষ অতীত নিয়ে পড়ে থাকে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে না পারলে জীবনে সাফল্য আসে না। শুধুমাত্র অতীত নিয়ে আফসোস করা বন্ধ করতে না পারার কারণে অনেকের জীবন ব্যর্থ হয়ে গেছে।অতীতের ব্যর্থতা আর ভুল নিয়ে চিন্তা করে আপনি বর্তমান আর ভবিষ্যত্কে নষ্ট করছেন। আফসোস কখনো সমাধান হতে পারে না। আফসোস করার বদলে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিন। তারপর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যান। এই টিপস আপনাকে অতীত ভুলে সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়তে সাহায্য করবে।
অতীতকে দু:স্বপ্ন ভাবুন: ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নের বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই। স্বপ্নের ঘটনা স্বপ্নেই শেষ হয়ে যায়। হয়তো তা কিছুক্ষণ আমাদের মনকে প্রভাবিত করে, কিন্তু তা বাস্তবে ঘটে না। আপনি স্বপ্ন দেখলেন আপনার হাত ভেঙে গেছে, কিন্তু জেগে দেখলেন হাত ঠিকই আছে। স্বপ্নের মত অতীতেরও বাস্তবে কোনও অস্তীত্ব নেই। এক সময়ে হয়তো ছিল, কিন্তু এখন অতীত মানে শুধুই কিছু স্মৃতি। তাহলে যার কোনও অস্তিত্ব নেই, তার কোনও ক্ষমতাও নেই। অতীত আপনার উপকার বা ক্ষতি – কোনওটাই করতে পারবে না। শুধু স্বপ্নের মত আপনার মনকে প্রভাবিত করতে পারবে।তাহলে আপনি কেন এটা নিয়ে পড়ে থাকবেন? সত্যি বলতে অতীত স্বপ্নের চেয়েও ভালো। দু:স্বপ্ন দেখলে অনেক সময়েই ভয় হয়, এটা হয়তো ভবিষ্যতে ঘটবে। অন্যদিকে অতীত তো ঘটেই গেছে। তাই অতীতকে পাত্তা না দেয়া আরও সহজ!কাজেই, যখনই অতীতের কোনও খারাপ ঘটনা মনে আসবে, তাকে স্বপ্নের সাথে তুলনা করবেন। স্বপ্নের যেমন বাস্তবে কোনও ক্ষমতা নেই, এই মূহুর্তে অতীতেরও কোনও ক্ষমতা নেই।
যেসব বিষয় ঠিক করা সম্ভব, সেগুলোর একটা লিস্ট করুন:প্রথমে দেখুন ঘড়িতে কয়টা বাজে। সময়টি লিখে রাখুন। তারপর ঠান্ডা মাথায় নিরিবিলি বসে একটা লিস্ট করুন। অতীতের যতগুলো ভুল আপনি মনে করতে পারেন, তার সবগুলো এই লিস্টে লিখুন।লিস্ট করা শেষ হলে হাতে একটি কলম নিয়ে লিস্টটি খুব মন দিয়ে কয়েকবার পড়ুন। বোঝার চেষ্টা করুন কোন কাজগুলো আবার করে ভুল শোধরানো সম্ভব, আর কোন কাজগুলো করা একেবারেই অসম্ভব।যেগুলো সম্ভব, সেগুলোর পাশে টিক (✓) চিহ্ন দিন। আর যেগুলো অসম্ভব, সেগুলোর পাশে ক্রস (✗) চিহ্ন দিন। যেহেতু, টিক দেয়া কাজগুলো আবার করতে পারবেন, সেহেতু ওগুলো নিয়ে পরে ভাবলেও চলবে।ঘড়িতে কয়টা বাজে দেখুন, সময়টি লিখে রাখুন।এবার ক্রস দেয়া ভুলগুলো খুব মন দিয়ে কয়েকবার দেখুন। দরকার হলে নতুন একটি কাগজে শুধু ক্রস দেয়া ভুলগুলো আলাদা করে লিখুন।এবার ভাবুন, কেন এই কাজগুলো করা সম্ভব নয়। কারণগুলো পাশে লিখুন। এবার ভাবতে থাকুন। অনেক্ষণ ধরে ভাবুন। জোর করে ভাবনা থামাবেন না। যতক্ষণ মন চায়, ভাবুন। ভাবতে ভাবতে বোর হয়ে গেলে ঘড়ির দিকে তাকান। সময়টা লিখে রাখুন।এবার অসম্ভব কাজগুলো নিয়ে ভাবা শুরু করার ও শেষ করার সময় হিসাব করে দেখুন মোট কতক্ষণ ভেবেছেন। যতটা সময় ভেবেছেন – তার পুরোটাই নষ্ট করেছেন। এই সময়টা আপনি আর কোনওদিনই ফিরে পাবেন না। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদের অনেকটা আপনি শুধু শুধু নষ্ট করলেন। এই সময়টা যদি সত্যিকার কোনও কাজে লাগাতেন, তাহলে আপনার লাভ হতো।হিসাব রাখার কারণে বুঝতে পারলেন কতটা সময় নষ্ট হলো। কিন্তু ভেবে দেখুন, অতীত নিয়ে আফসোস করে এর আগে কত ঘন্টা আপনি নষ্ট করেছেন? এই সময়টা আপনি আর কোনওদিন ফিরে পাবেন না। কাজেই, যে অতীত বদলানো যাবে না, তার জন্য জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, মানে সময় নষ্ট করবেন কেন?যেগুলো আপনি ঠিক করতে পারবেন, সেগুলো ঠিক করার চেষ্টা করুন। আর যা পারবেন না, তার পেছনে এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করাও বোকামী।পরীক্ষাটি সত্যি সত্যি করার অনুরোধ থাকলো। যাতে আপনি ব্যাপারটির গুরুত্ব বুঝতে পারেন। যখনই অতীতের ভুল ও ব্যর্থতা নিয়ে চিন্তা আসবে, এই পরীক্ষাটির কথা মনে করলেই দেখবেন – আর চিন্তা করতে ইচ্ছা করছে না।
totka for success নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন:অতীতের ভুল আর ব্যর্থতার কারণে মানুষ নতুন করে কাজ শুরু করতে পারে না। কারণ, অতিতের ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে ফেলে। বিশেষ করে কোনও বড় কাজে ব্যর্থ হলে কারো কারো মনে হয়, তাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না।কিন্তু এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। একটি কাজে ব্যর্থ হওয়া মানে সব কাজে ব্যর্থতা নয়। স্টিভ জবস পড়াশুনায় চরম ভাবে ব্যর্থ। কিন্তু কেউ তাঁকে ব্যর্থ মানুষ বলবে না।আলিবাবা ডট কম এর প্রতিষ্ঠাতা, ও চীনের সবচেয়ে ধনী মানুষ জ্যাক মা জীবনে বিভিন্ন কাজে ৩০ বার ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু এতবার ব্যর্থ হয়েও তিনি আত্মবিশ্বাস হারাননি।বিভিন্ন চাকরিতে বহুবার ব্যর্থ হবার পর তাঁর মনে হয়েছিল, চাকরির চেয়ে ব্যবসায় তিনি ভালো করবেন।কিন্তু তাঁর প্রথম ব্যবসাটিও ব্যর্থ হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস না হারিয়ে নতুন আইডিয়া নিয়ে আবার কাজ শুরু করেন। অবশেষে আলিবাবা শুরু করার পর তিনি সফল হন। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমান ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।জ্যাক মা যদি তাঁর অতীতের ব্যর্থতার কথা ভেবে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতেন, তবে তিনি সফল হতে পারতেন না।কাজেই, অতীতের ব্যর্থতার কথা ভেবে আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। একভাবে সফল না হলে, অন্যভাবে চেষ্টা করুন। কিন্তু চেষ্টা করা বন্ধ করবেন না। এক সময়ে গিয়ে নিজের আসল শক্তি ও প্রতিভা কোথায়, তা ঠিকই বুঝতে পারবেন। – এসব কথা মাথায় রেখে কাজ করে যান, দেখবেন অতীতের চিন্তা আপনাকে থামাতে পারবে না।
ধ্যান করুন:ধ্যান করা মানে গভীর মনযোগের সাথে শুধুমাত্র একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করা।আমাদের সচেতন মনের চেয়ে অবচেতন মন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের কথাবার্তা, চলাফেরা, অভ্যাস – এসব আসলে আমাদের বা অবচেতন মন নিয়ন্ত্রণ করে।অবচেতন মনে কোনও আইডিয়া ঢুকে গেলে তা আমাদের সচেতন চিন্তাকে প্রভাবিত করে।আমরা অনেক সময় চাইলেও মন থেকে নেগেটিভ চিন্তা দূর করতে পারি না, কারণ চিন্তাগুলো অবচেতনে ঢুকে গেছে। নেগেটিভ বা নেতিবাচক চিন্তার একটি প্রধান উত্স হলো অতীতের ভুল ও ব্যর্থতা। এই নেগেটিভ চিন্তাকে মন থেকে দূর করার সবচেয়ে ভালো একটি উপায় হলো ধ্যান করা। চলুন জেনে নিই, ধ্যান করার একটি সহজ উপায়:ধরুন এর আগে আপনি একটি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। ফেলের কারণে আপনার অবচেতন মনে ভয় ঢুকে গেছে। পড়তে বসলেই মনে হয় আপনি পাশ করতে পারবেন না। এই কারণে আপনি ঠিকমত পড়তে পারছেন না।ধ্যানের মাধ্যমে এই ভয় দূর করতে হলে, নিজের রুমে বা অন্য কোনও নির্জন জায়গায় চোখ বন্ধ করে বসুন।
৮ থেকে ১০ বার বুক ভরে জোরে দম দিন। প্রতিবার দম নিয়ে মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে দম ছাড়ুন। এই কাজ করলে আপনার শরীর ও মন হয়ে যাবে।এরপর কল্পনা করুন আপনি দারুন পরীক্ষা দিচ্ছেন। সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিতে পারছেন। তারপর কল্পনা করুন আপনার রেজাল্ট খুব ভালো হয়েছে। আপনার দারুন আনন্দ হচ্ছে। – এগুলো কল্পনা করার সময়ে মনে মনে বার বার এই কথাটি বলুন : “আমি অবশ্যই ভালো রেজাল্ট করবো”।প্রথম দিকে কিছুই হবে না। কিন্তু কিছুদিন এটা করলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকবে। কারণ, অবচেতনে থাকা ভয় দূর হয়ে সেখানে সাফল্যের আশা সৃষ্টি হবে।যে কোনো ব্যর্থতার ভয় কাটানোর জন্য এই উপায় দারুন কার্যকর।ব্যর্থতার ভয় কাটানোর জন্য এক মনে ভবিষ্যতে সফল হওয়ার দৃশ্য কল্পনা করুন, আর মনে মনে পজিটিভ কথা বলুন। এটাই ধ্যান।অতীত নিয়ে লেখক চাক্ পালানিউক এর এই উক্তি মনে রাখবেন: “যদি ভবিষ্যত্কে বিশ্বাস না করতে পারো, তবে অতীত তোমার পিছু ছাড়বে না”দোয়া বা প্রার্থনাও কিন্তু এক ধরনের ধ্যান। নিরিবিলি বসে আন্তরিক ভাবে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য চান। কিছুদিন নিয়মিত প্রার্থনা করতে পারলে, তার ফলাফল দেখে আপনি নিজেও অবাক হয়ে যাবেন। নিজের মধ্যে একটি অন্যরকম শক্তি টের পাবেন।
বর্তমানকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিন:বর্তমানকে ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারলে ভবিষ্যত্ অন্ধকার হয়ে যাবে। সফল মানুষেরা বর্তমানের প্রতিটি সেকেন্ড সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ার কাজে লাগান।অতীত নিয়ে দু:খ করে সময় নষ্ট করলে বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যত্ও নষ্ট হবে।এই কথা সত্যি যে, বর্তমানে কোনও কাজ ভালো করে করতে গেলে অতীতের শিক্ষা কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু তার মানে এই নয়, যে আপনি অতীত নিয়ে আফসোস করবেন।অতীতের প্রতিটি ব্যর্থতার কারণগুলো আলাদা করে লিখে রাখুন। বর্তমানে একই রকম পরিস্থিতিতে পড়লে, অতীতের ভুলগুলো দেখে নিন, যাতে সেগুলো এবার না হয়। কিন্তু অকারণে সেই ঘটনার কথা ভেবে সময় নষ্ট করবেন না। নিজের বুদ্ধি আর শক্তির সবটুকু খাটিয়ে বর্তমানকে সফল করুন। বর্তমান সফল মানে ভবিষ্যত্ সফল।অতীত নিয়ে বিখ্যাত লেখক বিল কেন এর একটি উক্তি সব সময়ে মনে রাখবেন : “অতীত একটি ইতিহাস, ভবিষ্যত্ একটি রহস্য, বর্তমান হলো ইশ্বরের দেয়া উপহার”