
Hindu
মুসলিম দেশে হিন্দু হয়ে জন্ম নেওয়া কি অপরাধ! ঠিক যেমন বাংলাদেশে ইসলামিক সন্ত্রাসের শিকার হিন্দু সংখ্যালঘুরা । শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পদোন্নতি সংক্রান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সামনেই হেনস্থার শিকার হন হিন্দু অধ্যাপক কুশলবরণ চক্রবর্তী। অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবিরের সমর্থকদের পাশাপাশি হিজবুত তাহরীর এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যরা তাঁকে ক্যাম্পাসের মধ্যেই একাধিক দফায় হেনস্থা করেন।
যাতে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়, সেই দাবিও ওঠে। প্রায় তিন ঘণ্টা তাঁকে ঘেরাও করে রাখার পরে সন্ধে ৭টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাড়িতে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘক্ষণ ক্যাম্পাসের মধ্যে ঘেরাও-বিক্ষোভ-হেনস্থা চললেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে কেন পৌঁছল না, সে প্রশ্নও উঠেছে।রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখনও বাংলাদেশের জেলে বন্দি হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেপ্তারি নিয়ে সরব হয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাংলাদেশের সনাতনী ঐক্যমঞ্চের সদস্য কুশলবরণ।
সামাজিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বছর তিনেক আগে ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছ থেকে পুরস্কার পান এই অধ্যাপক। শুক্রবার বিকেল ৩টে নাগাদ সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির পরীক্ষার সাক্ষাৎকার ছিল কুশলবরণের। সেই খবর পেয়ে এ দিন দুপুর থেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন ইসলামি ছাত্রশিবির, ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এই কর্মসূচি থেকেই বিকেল ৪টে নাগাদ প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে হাঙ্গামা। কুশলবরণের পদোন্নতি বোর্ড বাতিল করে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা।
কোনওমতে হাঙ্গামা পেরিয়ে কুশলবরণ উপাচার্যের দপ্তরে ঢোকেন। সেখানেও বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এ দিন সন্ধেয় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ইসলামি ছাত্র শিবিরের নেতা হাবিবুল্লাহ খালেদ চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যরাও হইচই করছেন। তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কুশলবরণ। উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহইয়া আখতার-সহ অন্য আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। কুশলবরণের অভিযোগ, ‘আমাকে নিয়ে যে সব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তার উত্তর দিতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমাকে হেনস্থা করা হয়। সহ-উপাচার্য (কামাল উদ্দিন) উল্টে আমাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন।’
কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদন্নোতি বোর্ডের বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, কুশল বরণের বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংবাদপত্রে ওর বিষয়ে কিছু সংবেদনশীল নিউজ হয়েছে। এজন্য বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। জুলাই আন্দোলনে যারা আন্দোলন বিরোধী ভূমিকা পালন করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।’ ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইসহাক ভূঁইয়া বলেন, হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির জন্য আজ বোর্ড বসানোর কথা ছিল। এজন্য আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। তার বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা কুশল বরণ, রন্টু দাসসহ যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল তাদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা ও ৫ আগস্টের মধ্যে বিচারের আওতায় আনার কথা জানিয়েছি। প্রশাসন এসকল দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়।