
Bhoot Chaturdoshi
ভুত চতুর্দশী Bhoot Chaturdoshi মহালয়ায় যেমন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে খাদ্য ও জল দান করা হয়, তেমনই কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে বা এক কথায় বলতে গেলে কালীপুজোর ঠিক আগের দিন পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানোর বিধান রয়েছে আমাদের শাস্ত্রে। বাঙালি হিন্দুদের কাছে এই তিথি Bhoot Chaturdoshi ‘ভূত চতুর্দশী’, অন্য দিকে পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের একাংশে এই তিথিকেই ‘নরক চতুর্দশী’ বলে। Bhoot Chaturdoshi ভূত চতুর্দশী হল একটি বার্ষিক হিন্দু উৎসব, যা দীপাবলির পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিন।
এটি হিন্দু পঞ্জিকার কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে এই তিথিটি নরক চতুর্দশী নামে পরিচিত। এ ছাড়াও কোথাও কোথাও ছোট দিওয়ালি, রূপ চৌদাস, নরকা চৌদাস, রূপ চতুর্দশী বা নরক পূজা নামেও পরিচিত। এই দিনে চোদ্দশাক খাওয়া এবং চোদ্দ প্রদীপ প্রজ্বলনের রীতি প্রচলিত আছে৷ হিন্দু গ্রন্থ মতে, এই দিনে কৃষ্ণ ও সত্যভামা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। উৎসবটিকে কালি চৌদাসও বলা হয়। কালি মানে অন্ধকার ও চৌদস মানে চৌদ্দ তারিখ। এটি কার্তিক কৃষ্ণপক্ষের চান্দ্র মাসের ১৪ তম দিনে পালিত হয়। ভারতের কিছু অঞ্চলে, কালি চৌদাস হল মহাকালী বা শক্তি উপাসনার নির্ধারিত দিন। কালি চৌদাস হল অলসতা ও মন্দতা দূর করার দিন যা মানুষের জীবনে আলো প্রদান করে। মৃত্যুর দেবতা যমকেও এই দিনে প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করা হয় যা নরকের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
প্রাচীন শাস্ত্র, পুরাণ, কল্পকথা অনুসারে এই রীতির নেপথ্যে নানাবিধ ব্যাখ্যা রয়েছে। যেমন, একটি মত হল, ১৪ জন প্রেত অনুচরকে সঙ্গী করে, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ করেন দেবী চামুণ্ডা। অন্য মত অনুসারে, এ দিন স্বর্গ ও নরকের দ্বার কিছুক্ষণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেই দরজা দিয়ে পরলোকগত আত্মারা মর্ত্যে ফিরে আসেন। পিতৃকুল ও মাতৃকুলের চোদ্দ পুরুষের অশরীরী আত্মা নেমে আসেন গৃহস্থের বাড়িতে। এই তিথিতেই নাকি রাজা বলি অসংখ্য অনুচরসহ ভূত, প্রেত নিয়ে মর্ত্যে নেমে আসেন পুজো নিতে। বলি রাজা, পূর্বপুরুষের প্রেতাত্মা ছাড়াও নানান বিদেহী আত্মারা এদিন মর্ত্যলোকে নেমে আসে। ভূত, পিশাচ, প্রেত থেকে বাঁচতে, অতৃপ্ত আত্মাদের অভিশাপ থেকে বাঁচতে ও ‘নেগেটিভ’ এনার্জি বা অশুভ শক্তিকে বাড়ি থেকে তাড়াতেই ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। আশ্বিন ও কার্তিক মাস দুটিকে যমদংস্টা কাল বলা হত। এই সময় ওল, কেও, বেতো, কালকাসুন্দা, নিম, সরষে, শালিঞ্চা, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ঘেঁটু, হিঞ্চে, শুষুনী, শেলু এই চোদ্দটি শাক একত্রে খাওয়া হয়।[
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, শ্রীবিষ্ণুর ভক্ত প্রহ্লাদের পৌত্র দৈত্যরাজ বলি, সাধনবলে শক্তি অর্জন করে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল জয় করে ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন, এমনকি দেবতারাও তাঁর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছিলেন না। স্বর্গরাজ্য দখল করে দেবতাদের বিতাড়িত করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলি। এমত অবস্থায় শ্রীবিষ্ণুর দ্বারস্থ হলেন দেবতারা। বলির তাণ্ডব থামাতে, বামন রূপ ধারণ করে আবির্ভূত হলেন শ্রীবিষ্ণু। দানব রাজ বলির কাছে তিনটি চরণ রাখার জায়গা ভিক্ষা চাইলেন। ভিক্ষা দিতে রাজি হলেন বলি। দু’পা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে নিলেন বামন রূপী শ্রীবিষ্ণু। তৃতীয় পা কোথায় রাখবেন, তা জিজ্ঞাসা করা মাত্র প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলি, নিজের মাথা পেতে দিলেন বামন অবতারের চরণে।
লির মাথায় পা রেখে, তাঁকে পাতালে প্রবেশ করান বামন অবতার। সেই থেকে পাতালই হল দৈত্যরাজ বলির আবাস। তবে, তাঁর এই আত্মাহুতি দেখে শ্রীবিষ্ণু বলিকে অমরত্ব প্রদান করেছিলেন। সেই সঙ্গে বছরে একটি দিন তাঁকে ভূত- প্রেতাত্মা- পিশাচ- অশরীরীর সঙ্গে এই পৃথিবীতে আসার অনুমতি দেন। সেই দিনটিই হল ভূত চতুর্দশী। এই দিনই যম দীপ দান করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়াও এ দিন ধর্মরাজ, মৃত্যু, অন্তক, বৈবস্বত, কাল, সর্বভূতক্ষয়, যম, উড়ুম্বর, দধ্ন, নীন, পরমেষ্ঠী, বৃকোদর, চিত্র ও চিত্রগুপ্ত, যমলোকের এই ১৪ জনের উদ্দেশ্যে তর্পন করার রীতিও প্রচলিত রয়েছে।
আরো পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস জেলা শহর লোকসভা বিধানসভা পৌরসভা ব্লক থানা গ্রাম পঞ্চায়েত কালীপূজা যোগ ব্যায়াম পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড জ্যোতিষশাস্ত্র ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজকের রাশিফল চানক্যের নীতি বাংলাদেশ লক্ষ্মী পূজা টোটকা রেসিপি সম্পর্ক একাদশী ব্রত পড়াশোনা খবর ফ্যাশন টিপস